আকাশ ছুঁতে চাই ৫৬
2024-02-08 17:19:35

                                             

১.  চাইনিজ বধূ সং ওয়েন

২. ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরীতে তরুণীরা

৩. বসন্ত উৎসবের ভিলেজ গালায় নারী

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

নববর্ষকে কেন্দ্র করে এখন চীনের সব জায়গায় চলছে সাজসাজ রব। নানা রকম কারুশিল্প ও খাবার তৈরি হচ্ছে। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চীনের মানুষ।

 

চাইনিজ বধূ সং ওয়েন

 

চীনের মানুষদের জন্য  বসন্ত উৎসব সমাজজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই সময় চীনের মানুষ পরিবারের কাছে ফিরে যান। বাবা মা ও পরিবারের সকল সদস্য একসঙ্গে মিলে নববর্ষের আগের রাতে ডিনার খাওয়াটা চীনের চিরন্তন ঐতিহ্য। প্রবাসী চীনারাও এই সময় ফিরে যান চীনে তাদের হোম টাউনে। তবে অনেক সময় অনেক চাইনিজ মানুষের পক্ষে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে চীনে যাওয়া সম্ভব হয় না। তারা প্রবাসেই বসন্ত উৎসব পালন করেন। বাংলাদেশেও অনেক চাইনিজ বাস করেন। তাদের বেশিরভাগই বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে চীনে ফিরে গেলেও অনেকে যেতে পারেননি। কিভাবে তারা বসন্ত উৎসব পালন করছেন সেকথা জানার জন্য আমাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি চাইনিজ নারী সং ওয়েন শুয়েকে।

তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। অবশ্য প্রতিবছরই তিনি কয়েকবার চীন ভ্রমণ করেন। তিনি চীনের শানতোং প্রদেশের নারী। তিনি কাজের সূত্রে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেই সূত্রেই আলাপ হয় একজন বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে। অতঃপর প্রেম এবং পরিণয়। বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে এখানেই ঘর বাঁধেন সং ওয়েন। তিনি এখন বাংলাদেশেই নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। দুই পরিবারই তাদের বিয়েটাকে খুব সুন্দর ভাবে মেনে নিয়েছে। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে এসে নিজের ঘর সংসারের কথা বললেন সং ওয়েন। প্রথমে যখন তিনি নিজের মাকে বলেন যে বাংলাদেশী পুরুষকে বিয়ে করবেন তখন মা খুব অবাক হয়েছিলেন। তিনি জানতেন না বাংলাদেশ কোথায় অবস্থিত। তবে মেয়ের কাছ থেকে সবকথা শুনে বিয়েতে মত দেন মা। ওয়েন বলেন, তার মা শুধু জানতে চেয়েছিলেন এই বিয়েতে সং সুখী হবেন কিনা।

 

 

 

স্বামীর পরিবারেও কোন সমস্যা হয়নি। কারণ এই পরিবারে আরও কয়েকজন ভিনদেশী বধূ আছেন।

চাইনিজ নাগরিক বাংলাদেশীকে বিয়ে করেছেন এমন দম্পতিদের একটি সংগঠন আছে। ওয়েন সেই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে ঢাকায় অবস্থানরত চীনারা একসঙ্গে উদযাপন করেন। নিজের বাড়িতেও বিশেষ কিছু খাবার রান্না করবেন সং।

সং বাংলাদেশের রান্নাও রাঁধতে জানেন। বললেন, ডিমকারি, মুরগিকারি, সবজি ভালো রান্না করতে পারেন তিনি।

তিনি বাংলাদেশের উৎসবও উৎসাহ নিয়ে পালন করেন। ঈদের সময় স্বামী ও ছেলের জন্য পায়জামা, পাঞ্জাবি ও নিজের জন্য সালোয়ার কামিজ কেনেন।

সং শাড়ি পরতেও পছন্দ করেন। শাড়ি খুব সুন্দর পোশাক বলে মনে করেন তিনি।  তবে সালোয়ার কামিজে অনেক বেশি আরাম বলে জানালেন সং।

শ্রমজীবী বাংলাদেশী নারীদের অনেক বেশি কর্মঠ বলে মনে করেন তিনি। যেমেন চীনের নারীরাও অনেক কর্মঠ। তবে বাংলাদেশে নারীর জন্য রাস্তাঘাট ও কর্ম পরিবেশ সবদিক থেকে নিরাপদ হলে নারীরা আরও বেশি শ্রম দিতে পারবেন বলে মনে করেন সং ওয়েন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: শান্তা মারিয়া

 

 

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরীতে তরুণীরা

 

বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। তারা স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন খণ্ডকালীন চাকরিতেও অংশ নিচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় দেশে  চলমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন কাজ করছেন অসংখ্য তরুণী। মেলা ঘুরে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শুভ আনোয়ার ।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে চলছে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। বরাবরের মতো এবারের বাণিজ্য মেলাতেও খণ্ডকালীন চাকরি করছেন দেশটির বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীরা। ফলে একদিকে যেমন অর্থ উপার্জন হচ্ছে, অন্যদিকে অর্জিত হচ্ছে অভিজ্ঞতা।

সোমবার সরেজমিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা গেল এমন চিত্র।

আয়োজক–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশি–বিদেশি মিলিয়ে ৩৫০টি স্টল অংশ নিয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এসব স্টলে খণ্ডকালীন চাকরি করছেন হাজারো তরুণী।

 

অধিকাংশ তরুণী স্টলগুলোতে বিক্রয়কর্মী হিসেবেই কাজ করছেন। তবে অনেকে হিসাবরক্ষক, খাবার সরবরাহকারী পদেও কাজ করছেন।

একটি রুটিমেকার স্টলে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, লেখাপড়ার খরচসহ বাড়তি কিছু অর্থ জোগাতেই এ কাজে প্রথম বারের মতো যোগদান করেছি। তাতে আয় এবং অভিজ্ঞতা দুই-ই অর্জন হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের মানুষের সঙ্গে  কিভাবে ডিল করতে হয় তা শিখছি। আমার যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, মেলায় কাজ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপনার কৌশল, স্মার্টনেস, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।

স্টল মালিক ও খণ্ডকালীন চাকরি নেওয়া তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিয়ে পণ্য উপস্থাপন ও বিক্রির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত কর্মীর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ করে থাকে। এর সিংহভাগই নেয়া হয় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে।

পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণীদেরও পছন্দ এসব খণ্ডকালীন চাকরি। এক মাসে তারা আয় করছেন ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অন্যদিকে অর্জন করছেন অভিজ্ঞতা। আর এভাবেই বাংলাদেশের একদল পরিশ্রমী তরুণী পড়াশোনার পাশাপাশি হয়ে উঠছে দক্ষকর্মী।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

বসন্ত উৎসবের ভিলেজ গালায় নারী

চীনের নারীরা এখন নববর্ষের ট্যাডিশনাল ডিনারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সেইসঙ্গে ঘর সাজানোতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পাশাপাশি চীনের বসন্ত উৎসবের জন্য বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে এখন চলছে ভিলেজ গালা।

এই সব ভিলেজ গালা বা গ্রামীণ সাংস্কৃতিক উৎসবে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পরিবেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় নারী শিল্পীরা।

 হুনান প্রদেশের ইইয়াং সিটির হেংলংছিয়াও টাউনে সম্প্রতি ভিলেজ গালা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে স্থানীয় নারী শিল্পীরা তাদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করেন।

এসব ভিলেজ গালায় যারা অংশ নেন তারা সকলেই যে পেশাদার শিল্পী তা কিন্তু নয়। হয়তো কৃষক, শ্রমিক নারী বা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা এরাও অংশ নিচ্ছেন এসব পরিবেশনায়।

ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ধারণ করতে এভাবেই যুগ যুগ ধরে ভূমিকা পালন করছেন নারীরা।

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে।

চীনা বসন্ত উৎসবের শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ছুন চিয়ে খোয়াইলা, শুভ বসন্ত উৎসব।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল