‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৫৬
2024-02-07 15:40:24

                       

          

                         

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।

১. সাংস্কৃতিক বিনিময় বেগবান করার আহ্বান চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর তরুণদের

এশিয়ার যুব উন্নয়নের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক, গভীর সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং নানা পরামর্শ ভাগ করে নিতে চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর তরুণদের অংশগ্রহণে সম্প্রতি একটি ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফুচৌ শহরে।

শিক্ষক ও গবেষক থেকে শুরু করে শিল্পী ও ভ্লগার পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রের তরুণ-তরুণীরা ফোরামে অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীদের একজন - বেইজিং ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কম্বোডিয়ার নাগরিক টপোকোসি হার বলেন, ভাষা অধ্যয়ন করা অন্যান্য দেশ ও সংস্কৃতি বোঝার মূল উপায়।

"আপনি যখন একটি বিদেশি ভাষা অধ্যয়ন করেন, তখন আপনি একটি বিদেশি দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে পারেন। যেসব শিক্ষার্থী বিদেশি ভাষা অধ্যয়ন করেন, তারা দেশের মধ্যে আদান-প্রদানের জন্য সাংস্কৃতিক দূত হতে পারেন।"

 

ফিলিপাইনের একজন শিল্পী - জেনসেন মোরেনো মনে করেন, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় শৈল্পিক ঐতিহ্য রয়েছে। সুন্দর বন্ধন আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিনিময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেও মনে করেন তিনি। তরুণ প্রজন্মকে সাংস্কৃতিক পার্থক্য গ্রহণ করার আহ্বান জানান এই শিল্পী।  

"শিল্পের ক্ষেত্রে, বিশেষত কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে, আমাদের অনেক সহযোগিতামূলক কাজ রয়েছে। আমি গত বছর এখানে এসেছি। আমরা ফ্যানের উপর একটি লকার পেইন্টিং করেছি। ফুচৌ ও ফুচিয়ান জনগণের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দেখার অভিজ্ঞতা ফিলিপাইন থেকে আসা আমার জন্য চোখ খুলে দেওয়ার মতো ছিলো’’

 

ইন্টারনেট ও পর্যটন ফোরামে বাজওয়ার্ডের আয়োজন করা হয়। এসময় অংশগ্রহণকারীরা তাদের বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

 

তাদের মতে, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও গভীর করার জন্য জেনারেশন জেড-এর উচিত ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ সুবিধা কাজে লাগানো। তারা আরও মনে করেন, একটি দেশ সম্পর্কে জানার জন্য পর্যটন অন্যতম সেরা উপায় হতে পারে।  

 

ফোরামে ২০২৪কে আসিয়ান ও চীনের জনগণের মধ্যে বিনিময়ের বছর হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

 

চীন ও আসিয়ান দেশগুলো বছরজুড়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, মিডিয়া, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিময় ও সহযোগিতা কর্মসূচি চালাবে ঘোষণা দেওয়া হয়।  

 

প্রতিবেদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: শিহাবুর রহমান

 

২. ত্রিশতম তাইওয়ান স্বদেশী শীতকালীন যুব ক্যাম্প চাংছুনে শুরু

 

উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের চাংছুনে সম্প্রতি শুরু হয়েছে তাইওয়ান স্বদেশী শীতকালীন যুব ক্যাম্প-২০২৪। এ ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছেন চীনের তাইওয়ান এবং মূল ভূ-খণ্ডের ১৪টি প্রদেশের শিক্ষার্থীরা।

চাংছুনে শুরু হওয়া এবারের শীতকালীন যুব ক্যাম্প তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের যুবকদের নিয়ে আয়োজিত এ ধরনের ৩০তম আসর এবং চলতি বছরের প্রথম যুব বিনিময় কার্যক্রম।

চীনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই যুব ক্যাম্প। চীনের তাইওয়ান প্রদেশের এবং মূল ভূখণ্ডের  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত প্রায় ৫০০জন তাইওয়ান স্বদেশী এতে অংশ নেন।

 

অল-চায়না ফেডারেশন অব তাইওয়ান কম্প্যাট্রিয়াট-আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে চিলিন, হেইলংচিয়াং,  ইনার মঙ্গোলিয়া, শানতং, হ্যনান, কানসু, সিনচিয়াংসহ চীনের মূল ভূখণ্ডের ১৪টি প্রদেশে সফর ও বর্ণাঢ্য বিনিময় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

 

ছ্যং ইয়া-ইয়ুয়েন, তাইওয়ানের ছুং ইউয়ান ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। “শীতকালীন এই ক্যাম্প থেকে আমি দারুণ অভিজ্ঞতা লাভ করছি। আমি বিশেষভাবে আগ্রহী মূল ভূখণ্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর ব্যাপারে। আমি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছি। আমি মনে করি, এখানকার প্রকৃতি, মানুষ, শিল্প ও স্থাপত্য সম্পর্কে জানার জন্য আপনার মূল ভূখণ্ডে আসা উচিত।”

 

ক্যাম্পের উদ্বোধনীর দিনে মূল ভূখণ্ডের তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা চীনা সংস্কৃতির উপর বক্তৃতা উপভোগ করেন এবং অনেকে নিজেদের ছোট ছোট ভিডিও করে একে-অপরের সঙ্গে শেয়ার করেন।

তাইওয়ানের আই শোউ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লিন তিয়ে শুয়েন বলেন, "আমি স্কিইং ও চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানফু পরার অপেক্ষায় আছি।

"রেন হুই,পরিচালক , অল-চায়না ফেডারেশন অফ লিয়াসোন বলেন, “এ বছর আমরা ব্যাপক পরিসরে শীতকালীন এই ক্যাম্প আয়োজন করেছি। এখানে তাইওয়ানের কিছু ছাত্র রয়েছেন, যারা চীনের মূল ভূখণ্ডে পড়াশোনা করছেন। এছাড়াও আমরা শীতকালীন এই ক্যাম্প সিনচিয়াংসহ বিভিন্ন প্রদেশে প্রসারিত করেছি, যাতে তাইওয়ানের তরুণরা চীনের মূল খণ্ডের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে পারে।”

 

প্রতিবেদক : রফিক বিপুল

সম্পাদক : শিহাবুর রহমান

 

৩. শত বছরের পুরানো রেস্তোরাঁগুলোতে তরুণদের ভিড়

 

তারুণ্যের কাছে উৎসব মানেই বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে আনন্দ হইহুল্লোড় আর মজার সব খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য নানা রেস্তোরাঁয় ছোটাছুটি। চীনের বসন্ত উৎসবকে ঘিরে তাই রেস্তোরাঁগুলোর এক চিলতে ফুরসত নেই। দারুণ সব পিঠা আর কেক বানাচ্ছে তারা।

 

বসন্তে মন মাতাল করা ফুলের গন্ধ তো বটেই, সেই সঙ্গে পাওয়া যাবে নানা ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্নের ঘ্রাণ। আর সেই আস্বাদ নিতে বেইজিংয়ের শতবছরের পুরনো দোকানগুলোতেই ছুটছেন তরুণরা।

কিন্তু পুরনো দোকানগুলোতেই কেন? কারণটা জানালেন লি  সিয়াওমি নামের এই ক্রেতা।

‘এ খাবারগুলো বেইজিংয়ের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি খাবারের আছে আলাদা একটি সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। সহকর্মী ও বন্ধুদের জন্য যা হতে পারে এক চমৎকার উপহার।‘

  

বেইজিংয়ের সিছেং শহরের ঐতিহ্যবাহী তুংসিপেই সড়কে গত একশ বছর ধরে বিভিন্ন খাবার তৈরি করছে তাওসিয়াংছু নামের একটি বেকারি।

বেকারির ম্যানেজার ছাও সিয়ুয়ান বলেছেন বসন্ত উৎসবের কেনাকাটার মৌসুমে তরুণ ক্রেতারা কেবল স্বাদ খুঁজছেন না, তারা প্রতিটি কামড়ে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের আস্বাদও পেতে চান।

ছাও সিয়ুয়ান, তাওসিয়াংছু বেকারির ম্যানেজার বলেন, ‘আধুনিক ভোক্তা যারা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি পেস্ট্রি মানে শুধু এর স্বাদ কেমন তা নয়, এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও তারা খোঁজে। তাই, যখন আমরা নতুন কিছু বানাই তখন আমরা এর ঐতিহ্যগত উপাদানগুলোও খুঁজি। এবং সেগুলোকে আমাদের পণ্যে একীভূত করি।‘


তাওসিয়াংছুনের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে এ বেকারিতে কেনাকাটা করতে গেছে ৬০ লাখ ক্রেতা। প্রতি দিন বিক্রি হয়েছে ৩০০ টনেরও বেশি প্যাস্ট্রি।

 

বেইজিংয়ের এমন আরেকটি পুরনো দোকান থিয়ানফুহাও। মাংস প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে এটি স্থানীয় তরুণদের নজর কেড়েছে বেশ।

 

 

থিয়ানফুহাওয়ের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান শ্যুই ইংলং বলেন, ‘আমরা মোরগ ও গ্রিলড সসেজের মতো কিছু খাবার নিয়ে এসেছি। খাবারগুলোর স্বাদ যাতে অটুট থাকে তাই আমরা একটি দ্রুত ফ্রিজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করি। আমরা মাংসে কিছু ভেষজ যোগ করি, যাতে এগুলো আরও সুস্বাদু হয়।’

 

এত সব আয়োজন দেখে বলা যায় যে, চীনের বড় কোনো উৎসব-আয়োজন মানে সেখানে স্বাদ এবং ঐতিহ্যের একটি চমৎকার রেসিপি থাকবেই।

 

প্রতিবেদক: ফয়সল আব্দুল্লাহ

সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।  

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী