এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার চাওছিং
২। চীনজুড়ে শীতের সৌন্দর্য
৩। বসন্ত উৎসবে ঘুরে আসুন বেইজিংয়ের বিভিন্ন মন্দির মেলা থেকে
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার চাওছিং
দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে প্রিয় পর্যটন এলাকা হয়ে উঠেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি দক্ষিণ পশ্চিম চীনের চাওছিং শহর। প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এ শহরে আছে প্রাচীন নানা স্থাপত্য নিদর্শন। এছাড়া সমৃদ্ধ ও উর্বর কৃষি ব্যবস্থা এ শহরকে করেছে কৃষি-বাণিজ্যিকের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে গ্রামীণ পর্যটনেরও বিকাশ ঘটছে এখানে।
খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শহর। ৫৮৯ সাল থেকে এটি পরিচিটি পায় তুয়ান নামে। এরপর পাঁচশ’ বছরের ব্যবধানে এই শহর হয়ে ওঠে উন্নত প্রিফেকচার হিসেবে। বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডের শহরগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এলাকা জুড়ে রয়েছে চাওছিং।
২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, এখানকার বাসিন্দা ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৪। চারদিকের পাহাড় বেষ্টিত সমতল ভূমির শহর এই চাওছিং। সমতল ভূমি হওয়ায় সমৃদ্ধ ও উর্বর কৃষির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে এটি।
কৃষিপণ্যের পাশাপাশি স্থানীয় পণ্য বাজারজাতকরণে আছে নদী বন্দর। কুয়াংচি প্রদেশের সাথে বানিজ্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই নদী বন্দর। এছাড়া শহরের নিউ পোর্ট চীনের ২৮টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বন্দরের একটি।
চাওছিংয়ের উন্নত পরিবহন নেটওয়ার্কে আছে রেলওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ে সেবা। ফলে চাওছিংয়ের সাথে কুয়াংচৌ’র সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে এ শহরের স্বচ্ছ পানির চাংক্সি হ্রদ আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম
২। চীনজুড়ে শীতের সৌন্দর্য
যতদূর চোখ যায় শুধুই বরফ আর বরফ। গাছ-পালা থেকে শুরু করে পাহাড়ের চূড়া ছেয়ে গেছে বরফের চাদরে। তবে এই স্নিগ্ধ বরফ শুধুই প্রশান্তি আর শুভ্রতার।
তুষারে ঢেকে যাওয়ায় প্রকৃতি পেয়েছে এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য। তাইতো স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে ভ্রমণপিপাসুরা।
উত্তর-পূর্ব চীনের বিভিন্ন প্রদেশে বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। এই শুভ্র বরফকণার সাথে নানা ধরনের খেলায় মেতেছেন তারা।
এসব প্রদেশে পর্যটকদের বিনোদন দিতে রাখা হয়েছে অনেক সুযোগ-সুবিধা। এর ফলে এসব বিনোদনকেন্দ্রে বেড়েছে পর্যটকদের ভিড়; আর চাঙ্গা হয়েছে শীতকালীন পর্যটনশিল্প; অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা।
এদিকে তুষারে ঢেকে গেছে চাংপাই পর্বতের জুয়েলিং সিকিন এরিয়া। এখানে মাঝেমধ্যেই উঁকি দেয় সোনালী রোদের কিরণ, যা সৃষ্টি করে এক রূপকথার রাজ্য। এসব দেখে বিমোহিত এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
মনোরম এই পর্যটন এলাকাটি ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে মোটরবাইক ও ঘোড়ার গাড়ি। এছাড়া পর্যটকরা বিভিন্ন সুন্দর প্রাণীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে ছবি তুলতে পারেন; উপভোগ করতে পারেন স্থানীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি।
এই শীতে জলাশয় যেন পরিণত হয়েছে বরফের রাজ্যে। চিলিন সিটিতে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার নদীগুলো পেয়েছে এক অনন্য রূপ। কুয়াশাচ্ছন্ন নদীগুলো যেন মেঘের ছড়ামালা।
এদিকে উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিংয়ের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় একটি বরফ-তুষার ক্রীড়া অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় লোকজন তুষার, স্কেটিং, বরফের কার্টিংয়ের উপর দড়িটানা খেলা ইত্যাদির অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
ডাগুলিউ গ্রামের প্রথম সচিব চিয়াং কুই জানান, "আমরা প্রতি বছর আমাদের গ্রামের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। আমরা আনন্দিত এবং আনন্দিত। নতুন বছরে শীতের মুগ্ধতা উপভোগ করার জন্য আমাদের শহরে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই।"
শীত এলে লিয়াওনিং প্রদেশ পরিণত হয় উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে। তুষারের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আয়োজন করা হয় ভিন্নধর্মী খেলাধুলার, যেগুলো পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।
প্রতিবেদন- নাজমুল হক রাইয়ান
সম্পাদনা- শিহাবুর রহমান
৩। বসন্ত উৎসবে ঘুরে আসুন বেইজিংয়ের বিভিন্ন মন্দির মেলা থেকে
চীনের বসন্ত উৎসবের রয়েছে নানা রকম রীতি রেওয়াজ ও আয়োজন। এর একটি হলো মন্দিরমেলা। বিভিন্ন পার্ক ও চত্বরে বসে এই মন্দির মেলা। রাজধানী বেইজিংয়ে চলে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত মন্দির মেলা।
ছাংডিয়ান মন্দিরমেলা বসে থিয়ান আনমেন স্কোয়ারের দক্ষিণ দিকে। এই মন্দিরমেলায় বিভিন্ন ধরনের শিল্পসামগ্রী বিক্রি হয়। যেমন পেইন্টিং ও ক্যালিগ্রাফি। রয়েছে চা ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী। এছাড়া বিভিন্ন কারুপণ্যেরও পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। পাশাপাশি চলে নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
দিথান বা পৃথিবী-মন্দিরের মন্দিরমেলাও বেশ বিখ্যাত। বেইর্য়ে চারটি বিখ্যাত মন্দির হলো থিয়ানথান বা স্বর্গ মন্দির, দিথান বা পৃথিবী মন্দির, রিথান বা সূর্যমন্দির এবং চন্দ্রমন্দির। তোংছ্যং জেলার আনডিং গেইটের কাছে দিথান পার্কে বসে এই মেলা। ইস্ট এভিনিউতে এই পার্ক অবস্থিত। এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন কারুপণ্য, মুখরোচক বিভিন্ন খাবার। বলা হয় বেইজিংয়ের সব মেলার মধ্যে টেম্পল অব আর্থের মেলায় সবচেয়ে পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি মজার খাবার।
বেইজিংয়ের আরেকটি বিখ্যাত মেলা হলো তোংইয়ুয়ে টেম্পল ফেয়ার। ছাওইয়াং জেলার ১৪১ নম্বর ছাওইয়াংমেনওয়েই এভিনিউতে অবস্থিত তোংইয়ুয়ে পার্ক। ছাওইয়াংমেন সাবওয়ে স্টেশন থেকে হাঁটা দূরত্বে এর অবস্থান। বর্তমানে এখানে অবস্থিত লোকজ জাদুঘর। এই মেলায় লোকজ কারুপণ্য খুব ভালো পাওয়া যায়। এই মেলায় গেলে দেখা যায় ক্যালিগ্রাফিতে ‘ফু’ শব্দটি লিখছেন অনেকে। ফু শব্দটি সৌভাগ্যের সূচক। এই মেলাকে বলা হয় ‘ফু’শেলাও।
প্রতিটি মেলাতেই রয়েছে খাবারের স্টল, কারুপণ্যের স্টল, ফুলের স্টল এবং নানা রকম খেলার ব্যবস্থা। লক্ষ্যভেদের বিভিন্ন রকম খেলা দেখা যায় এসব মেলায়। আরও থাকে নানা রকম সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, অপেরা ও অ্যাক্রবেটের খেলা। অনেক মেলাতেই দেখা যায় ড্রাগন নাচ ও সিংহনাচ।
স্কালপচার পার্ক মন্দিরমেলা।শিচিংশান জেলার স্কাল্পচার পার্কে বসে এই মন্দিরমেলা। এখানে অনুষ্ঠিত হয় নানা রকম ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী