দেহঘড়ি পর্ব-৫৬
2024-02-04 19:43:08

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

কোলাইটিস হলে নিন টিসিএম চিকিৎসা

কোলাইটিস বা মলাশয়-প্রদাহ অন্ত্রের প্রদাহজনক একটি রোগ। এ রোগ হলে বৃহদান্ত্রে ফোলাভাব দেখা দেয়, পেটে ব্যথা হয় এবং রক্ত-ডায়রিয়া হয়। বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে যার কারণে কোলাইটিস হতে পারে। যেমন পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা খাদ্যের বিষক্রিয়া। অপর্যাপ্ত তাপে রান্না করা গরুর মাংস থেকে শরীরে প্রবেশ করা ই কোলাই ব্যাকটেরিয়ার কারণেও কোলাইটিস হতে পারে। এ ধরনের কোলাইটিস ই কোলাইটিস বা হেমোরেজিক কোলাইটিস নামে পরিচিত।

কখনও কখনও এটি বোঝা কঠিন হতে পারে কী কারণে কোনও ব্যক্তির মলাশয়-প্রদাহ হচ্ছে। প্রদাহসৃষ্টিকারী অন্ত্রের রোগ-আইবিডির লক্ষণগুকে কোলাইটিসের মতোই মনে হতে পারে। যারা আইবিএসে ভুগছেন তাদের তলপেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে, মলের সঙ্গে আম যেতে পারে এবং মলত্যাগের তীব্র বেগ দেখা দিতে পারে। তবে আইবিএসকে একটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিভ্রাট হিসাবে বিবেচনা করা হয়, রোগ হিসাবে নয়। আইবিএসে অন্ত্রের আস্তরণে কোনও স্থায়ী ক্ষতি হয় না, তবে কোলাইটিসে সেটা হয়।

কোলাইটিসের লক্ষণগুলো প্রথমে হালকা হতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে আরও ঘনঘন ও গুরুতর হতে পারে৷ কোলাইটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো আলগা মল, ডায়রিয়া, বাথরুমে যাওয়ার তীব্র তাগিদ, মলে রক্ত বা আম যাওয়া, পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ক্র্যাম্পিং, রেকটাল ব্যাথা, ক্লান্তি, জ্বর এবং ওজন কমা। কোলাইটিসের উপসর্গগুলো আসতে এবং যেতে পারে আবার কখনও কখনও তীব্র হতে পারে৷ শিশুরাও কোলাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে, যার কারণে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

কোলাইটিস নিরাময়ের একটা চমৎকার বিকল্প পদ্ধতি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আকুপাংচার। কোলাইটিসের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো শরীর বৃহদান্ত্রে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যার কারণে ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং এ অঙ্গের কার্যকারিতা লোপ পায়। টিসিএমে মনে করা হয়, অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর ভারসাম্যহীনতার কারণে শরীরে তাপ, ক্লেদ বা রক্তের স্থবিরতা দেখা দেয়, যা শেষে কোলাইটিস সৃষ্টি করে।

টিসিএম ভেষজ গ্রহণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলোতে আকুপাংচার নিলে শরীরের তাপ ও ক্লেদ দূর হয়, যার ফলে ডায়রিয়া, ফোলাভাব ও কোলনে রক্তপাত সারে। কোলাইটিস নিরাময়ে ভালো কাজ করে এমন দুটি ভেষজ ফর্মুলা হলো বুপ্লেউরাম রুটস বা ছাই হু, ছা হু তুই চিয়াং থাং।

চীনে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোলাইটিসের রোগীদের মধ্যে যারা প্রচলিত পশ্চিমা ওষুধের পাশাপাশি আকুপাংচার নিয়েছেন এবং টিসিএম গ্রহণ করেছেন তারা টিসিএম নেননি এমন রোগীদের চেয়ে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। তারা কম উদ্বেগ ও বিষণ্নতা অনুভব করার কথাও জানান। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, আকুপাংচার অন্ত্রের বায়োমের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অন্ত্রের দেয়ালকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মস্কিবাস্টনও ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং পেটের ক্র্যাম্পিং উপশম করার মাধ্যমে কোলাইটিস সারতে সাহায্য করে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

চেচিয়াংয়ের বৃহত্তম চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান প্রাদেশিক গণহাসপাতাল

চেচিয়াং প্রাদেশিক গণহাসপাতাল (জেডজেপিপিএইচ) হলো চীনের চেচিয়াং প্রদেশের অন্যতম বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠার গত ৪ দশকের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এটি এখন ৩ হাজার শয্যার এবং ৬টি ক্যাম্পাসের এক বৃহৎ হাসপাতালে পরিণত হয়েছে এবং অত্যন্ত উন্নত ও বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জেডজেপিপিএইচ একটি জাতীয়-স্তরের আঞ্চলিক চিকিৎসা কেন্দ্র৷ এখানে রয়েছে ৩টি মূল প্রাদেশিক-স্তরের গবেষণাগার এবং একটি ক্লিনিকাল গবেষণা কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় টিউমার মোলেকিউলার ডায়াগনোসিস, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, কিডনি রোগ এবং হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন৷

বর্তমানে চেচিয়াং প্রাদেশিক গণহাসপাতালে কাজ করছেন ৪ হাজারের বেশি পূর্ণকালীন কর্মী, যাদের মধ্যে ৭ শতাধিক রয়েছেন জ্যেষ্ঠ পদবীধারী পেশাজীবী। এর ছটি ক্যাম্পাস হলো চাওহুই ক্যাম্পাস, ওয়াংচিয়াংশান ক্যাম্পাস, ফুইয়াং ক্যাম্পাস, ইয়ুছ্যং ক্যাম্পাস, বিনচিয়াং ক্যাম্পাস এবং সিয়াওশান ক্যাম্পাস। এর বাইরে জেডজেপিপিএইচ তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নয়টি হাসপাতালকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেগুলো হলো ছুন’আন প্রথম গণহাসপাতাল, থিয়ানথাই গণহাসপাতাল, সিয়ানচু গণহাসপাতাল, হাইনিং কেন্দ্রীয় হাসপাতাল, থুংচিয়াং প্রথম গণহাসপাতাল, নানসুন গণহাসপাতাল, দিংহাই কেন্দ্রীয় হাসপাতাল, শাওসিং ইউয়েছ্যং গণহাসপাতাল এবং লিন’আন প্রথম গণহাসপাতাল।

এ হাসপাতালের কঠোর পরিশ্রম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে ও চীনের বাইরে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এর গবেষণা অনুদান এবং গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনা উভয়ই বেড়েছে৷ গত এক দশকের ব্যবধানে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণ, গবেষণা অনুদান ৩৩ গুণ এবং জাতীয় জাতীয়-স্তরের গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা ১৭ গুণ।

জেডজেপিপিএইচে রয়েছে একটি জৈব নমুনা ব্যাংক, ক্লিনিকাল ট্রায়াল এরিয়া এবং একটি শীর্ষ-স্তরের প্রাণী গবেষণা কেন্দ্র। এখানে যে বিভাগগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, কোলোরেক্টাল সার্জারি, ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি, দন্তচিকিৎসা, চর্মরোগবিদ্যা, জরুরি ওষুধ, এন্ডোক্রাইনোলজি, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি, স্ত্রীরোগবিদ্যা, হেমাটোলজি, মাথা ও ঘাড় সার্জারি, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, নিউরোলজি, ইউরোলজি, নেফ্রোলজি, অনকোলজি, রেডিওলজি, অর্থোপেডিকস, প্রসূতিবিদ্যা, চক্ষুরোগ, প্যাথলজি ও রিউমাটোলজি।

চেচিয়াং প্রাদেশিক গণহাসপাতালের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সাধারণ রোগের চিকিৎসায় দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিরল ও জটিল রোগের ক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য পরামর্শ কেন্দ্র হয়ে ওঠা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি তার মূল মর্মবাণী ‘ভালোবাসা, শ্রেষ্ঠত্ব, উৎসর্গ ও উদ্ভাবন’ অনুযায়ী কাজ করছে। হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী হং ছাওইয়াং বলেন, ‘ক্লিনিকাল প্রাকটিস, শিক্ষা ও গবেষণা’ - চিকিৎসাক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের এই তিনটি স্তম্ভকে সমুন্নত রেখে তারা চীনের একটি নেতৃস্থানীয় ও উচ্চ নির্ভরযোগ্যতার হাসপাতালে পরিণত হতে চায়। বিগত দিনগুলোতে হাসপাতালটির কার্যক্রম বলছে সে লক্ষ্য অর্জনের দিকে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি।

 

হেলথ টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

ইতিবাচক মানসিক মনোভাব বজায় রাখুন

চীনা জীবনযাপন পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্য ও পুষ্টির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখাকেও কম গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

টিসিএমে মনে করা হয়, নির্দিষ্ট আবেগ নির্দিষ্ট অঙ্গ সিস্টেমের সঙ্গে সম্পর্কিত। নেতিবাচক আবেগ সরাসরি কোনও অঙ্গের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভয়, রাগ, উদ্বেগ ও অতিরিক্ত চিন্তার মতো আবেগগুলো যদি আপনার ওপর প্রায়ই ভর করে, তাহলে এগুলো আপনার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করতে পারে। এসব আবেগ মনের জাঙ্ক ফুডের মতো এবং এগুলো আপনার শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। থাই চি, যোগ ব্যায়াম, ছি কুং, ধ্যান ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো কার্যকলাপ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং একটি ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগ মূলত জীবনধারা ও অভ্যাস থেকে সৃষ্টি হয়। টিসিএমে মনে করা হয়, উপযুক্ত জীবনধারা পছন্দ করার অর্থ হলো প্রতিদিনই আপনি এমন ভালোকিছু পছন্দ করছেন, যা আপনাকে রোগ প্রতিরোধে এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। আসলে স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক কিছুই আমাদের করার থাকে, যেমন মানসম্পন্ন খাবার গ্রহণ, পরিমিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, ইতিবাচক মানসিকতা, দূষিত পদার্থ ও মানসিক চাপ কমানো।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।