গত বছরটি ছিল চীনের জন্য দুর্যোগপ্রবণ। ডিসেম্বরে কানসু প্রদেশের চিশিশান জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একই বছরের আগস্ট মাসে সুপার টাইফুন ডকসুরির প্রভাবে হেইলোংচিয়াং প্রদেশের হারবিনের শাংচি শহরে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়। গোটা এলাকার ১৬১টি গ্রামের ৪ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হ্যপেই প্রদেশের চুওচৌ শহরও গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত আগস্টেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় থিয়ানচিনের কিছু এলাকা।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপে দুর্যোগ কবলিত ওই সব অঞ্চলে পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয় এবং পুরোদমে পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এর ফলে অনেক জায়গায় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে এবং অন্য স্থানগুলোতে দ্রুত পুনর্গঠন কাজ শেষ হবে।
ত্রাণ-পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কার্যক্রমের বিষয়ে সময়োচিত এবং যথাযথ নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং সবসময় দুর্গত মানুষের খোঁজখবর রেখেছেন এবং নিজেই অনেক জায়গায় ছুটে গেছেন দুর্গত মানুষের অবস্থা দেখতে।
দুর্গত মানুষের কাছে ছুটে যাওয়া প্রেসিডেন্ট সি’র জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে পার্টির শীর্ষ পদ গ্রহণের পর থেকে, চীনের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি বসন্ত উৎসবের আগে সবসময় সাধারণ মানুষের সাথে, বিশেষ করে দুর্যোগ-আক্রান্ত অঞ্চলের লোকদের সাথে সময় কাটিয়েছেন।
গত বছরের জুলাইয়ের শেষের দিকে এবং আগস্টের শুরুতে, উত্তর চীনে প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টির কারণে হাইহ্য নদীর অববাহিকায় বন্যা দেখা দেয়, যা থিয়ানচিনের তংতিয়ান বন্যা সঞ্চয়স্থান এলাকাকে প্লাবিত করে।
১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ওই অঞ্চল পরিদর্শনের সময় প্রেসিডেন্ট সি সেখানকার একটি গ্রামের বাসিন্দা তু হংকাংয়ের বাড়িতে যান। তিনি চার প্রজন্মের একসাথে বসবাসকারী ওই বড় পরিবারের সঙ্গে গল্প করে আনন্দময় সময় কাটান। তাদের সঙ্গে আসন্ন বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। দুর্যোগের সময় পরিবারের ক্ষতি, তাদের দুর্যোগ পরবর্তী উৎপাদন এবং আয়রোজগার সম্পর্কে খোঁজ নেন প্রেসিডেন্ট।
তু সাধারণ সম্পাদককে জানান, বন্যায় পরিবারের ১০ মু (প্রায় ০.৬৭ হেক্টর) ভুট্টা ক্ষেত এবং সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পার্টি ও সরকারের সহায়তায় তারা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তাদের গ্রিনহাউস সবজির ভালো ফলন হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট সি সবজি ক্ষেত দেখতে গ্রিনহাউসের ভিতরে যান, কৃষকদের মাঠপর্যায় অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং খোঁজখবর করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে থিয়ানচিনের প্রাচীন সাংস্কৃতিক রাস্তা পরিদর্শনের সময় আশপাশের বাসিন্দারা সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানান। প্রেসিডেন্ট সি সবার সঙ্গে আসন্ন বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দোকানপাট আগ্রহ নিয়ে দেখেন।
বিদায়ের সময় প্রেসিডেন্ট সি গ্রামবাসীদের বলেন, তিনি দেখে আনন্দিত যে তাদের উৎপাদন এবং জীবন বেশিরভাগই পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং শীতের মধ্যে তাদের একটি উষ্ণ বাড়ি রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট সি সবসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন, এবং একাধিক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তরিক ও নিরলস হবার নির্দেশনা দেন তিনি।
এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট সি উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের সাংচি শহরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করেন। উত্তর চীনে শীতকাল ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সি বেইজিং এবং হ্যবেই এর মারাত্মক বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাথে দেখা করতে এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্গঠনের কাজ পরিদর্শন ও নির্দেশনা দিতে যান।
২০২৩ সালের নভেম্বরে বেইজিং এবং হ্যবেই পরিদর্শনের সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, তিনি সবসময় দুর্যোগ-আক্রান্ত এলাকার মানুষের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন। সিপিসি দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেয় এবং দেশের মানুষকে সবকিছুর উপরে রাখে। গণচীনের সকল মানুষের জন্য প্রেসিডেন্ট সি এমন যত্নশীল মনোভাব পোষণ করেন।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, সিএমজি বাংলা।