ফেব্রুয়ারি ২: চীনের আবহাওয়া পূর্বাভাস বিভাগ জানিয়েছে, দেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা নিম্ন থাকবে এবং বৃষ্টি ও তুষারপাত হবে। কোনও কোনও অঞ্চলে তুষারপাত আগের ইতিহাসও ভেঙ্গে দিতে পারে। বসন্ত উত্সব উপলক্ষ্যে ভ্রমণের ব্যস্ত দিনগুলোতে নাগরিকদের নির্বিঘ্ন চলাচল, স্বাভাবিক উত্পাদান এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জায়গার কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে।
৩১ জানুয়ারি বিকেল ছয়টা থেকে চেংচৌ শহরে তুষারপাত ঘটে। হ্যনান প্রদেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস বিভাগ জানায় যে, ২ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী তুষারপাত হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি আগে প্রদেশে বৃষ্টি ও তুষারপাত হবে। তাই প্রাদেশিক সরকার ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে নিম্ন-তাপমাত্রা এবং বৃষ্টি ও তুষার ও বরফের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তৃতীয় পর্যায়ের জরুরি অবস্থা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হুনান প্রদেশের আবহাওয়া বিভাগও জানায়, ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই প্রদেশ তাপমাত্রা কম থাকবে এবং বৃষ্টি ও তুষারপাত হবে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা থেকে নিম্ন-তাপমাত্র এবং বৃষ্টি, তুষার ও বরফের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তৃতীয় পর্যায়ের জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
এখন বসন্ত উত্সব উপলক্ষ্যে যাতায়াতের ব্যস্ত সময় শুরু হয়েছে। ভ্রমণকারীদের নির্বিঘ্ন চলাফেরা এবং ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হ্যনান প্রদেশের কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করেছে এবং পানীয় জল, বিদ্যুৎ, বিশ্রামসহ নানা পরিষেবা সম্পর্কিত কাজের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩১ জানুয়ারি থেকে হ্যনান প্রদেশের চেংচৌ বিমানবন্দর দিয়ে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রী চলাচল করছে এবং এ বিমানবন্দর দিয়ে ৫০ হাজার নিরাপদ যাতায়াত সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে উচ্চগতির সড়কে কার্যকরভাবে নতুন দফার ভারী তুষারপাত ও ঝড়বৃষ্টির মোকাবেলায় হ্যনান প্রদেশের গণনিরাপত্তা বিভাগ ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ ১৩ হাজার পুলিশ সদস্য এবং ২ হাজার ৬৪৯টি পুলিশ যান পাঠিয়েছে এবং ২০ হাজারেরও বেশি পূর্বাভাস তথ্য প্রকাশ করেছে।
তাছাড়া, চেংচৌ শহর প্রশাসন গ্রুপ ১১৬টি জরুরি দল গঠন করেছে এবং আড়াই হাজার বারের মতো নানা সরঞ্জাম ব্যবহার করে ৯শ টনেরও বেশি স্নো-মেল্টিং এজেন্ট বা তুষার গলানো উপাদান প্রয়োগ করেছে। এখন চেংচৌ শহরের প্রধান সড়কপথের পরিবহন নির্বিঘ্ন হচ্ছে।
এবারের ঝড়বৃষ্টি ও তুষারপাত মোকাবেলা করতে চীনের হুনান প্রদেশ জরুরি ভিত্তিতে ২০টি মেরামত দল গঠন করেছে এবং শহরের নানা জায়গায় কলের জলের পাইপলাইন সংস্কার করছে। এমন একটি মেরামত দলের নেতা চিয়াং ওসিয়াং বলেন, পর্যবেক্ষণ জোরদার করলেই ঝড়বৃষ্টি ও তুষারপাতের আবহাওয়াতে জনগণের স্বাভাবিক পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
চীনের হুনান প্রদেশের ছেনচৌ অঞ্চলে স্টেট গ্রিড কর্পোরেশন অব চায়নার ছেনচৌ বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি ২৪ ঘন্টাব্যাপী তুষারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ৩০ কর্মী পাঠিয়েছে।
এদিকে চীনের আনহুই প্রদেশের ফোংইয়াং জেলায় সাংবাদিকরা দেখেছেন যে, জাতীয় মহাসড়কে কয়েকশ কর্মী স্নো-মেল্টিং এজেন্ট প্রয়োগ করছেন।
ফোংইয়াং জেলার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা পরিষেবা কেন্দ্রের মহাপরিচালক চৌ ছিং লিউ বলেন, এ দফার ঝড়বৃষ্টি ও তুষারপাত মোকাবেলা করতে তারা আগেই জরুরি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং বর্তমানে সড়কসশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সেতুসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় শক্তি মোতায়েন করেছে এবং সময়মতো তুষার সরিয়ে ফেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের খারাপ আবহাওয়ায় বসন্ত উত্সবের যাতায়াতের সময় পড়েছে বলে পরিবহন, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানির সরবরাহ, কৃষি উত্পাদনসহ নানা ক্ষেত্রে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও জনগণের সতর্কতা থাকা উচিৎ বলে তারা মনে করেন। - লিলি/রহমান