নাইজেরিয়ানদের ছুটির দিনে ভ্রমণের সুবিধা দিচ্ছে নতুন রেলপথ
2024-02-01 16:29:59


নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর লাগোসে সম্প্রতি সালোদিন পরিবারের ছয় সদস্য দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইবাদন শহরগামী একটি ট্রেনে চড়েন। পরিবারের বড় ও ছোট সবার হাসি নতুন বছরের ভ্রমণের প্রত্যাশায় পূর্ণ। সালোদিন আনন্দচিত্তে স্ত্রীর সঙ্গে এবারের ভ্রমণ নিয়ে আলাপ করেন। চার বাচ্চা উত্তেজনার সঙ্গে জানালার বাইরে তাকায়। এবারের ট্রেন ভ্রমণের মাধ্যমে ট্রেন লাইনের দুপাশের দৃশ্য উপভোগ করার প্রত্যাশা তাদের। তিনি বলেন, “ছুটিতে আমি পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ট্রেন ভ্রমণ করি। আমি এ রকম অভিজ্ঞতা খুব উপভোগ করি।”

‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’র আওতায় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি)-নির্মিত লাগোস-ইবাদন রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ২০২১ সালের জুনে। এ রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৫৭ কিলোমিটার এবং এর শাখা লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার। ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে সক্ষম এ রেলপথে আধুনিক রেলপথের মানদণ্ড মানা হয়েছে।

চলতি বছরের নববর্ষের ছুটিতে ভ্রমণের জন্য অনেক নাইজেরিয়ান সেখানে চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত রেলপথকে প্রথম পছন্দ-তালিকায় রাখেন। লাগোস-ইবাদন রেলপথ ছাড়া রাজধানী আবুজা থেকে উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাদুনা পর্যন্ত রেলপথও সিসিইসিসি নির্মাণ করেছে, যেটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

যাত্রী ওমোথোলা ফায়েদ সাংবাদিকদের বলেন, “রেল একটি সুলভ ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা এবং অনেকের জন্য একটি বিকল্প যোগায়।” তার মতে, বিমানের তুলনায় রেল ভ্রমণে ব্যয় কম, আবার সড়ক পরিবহনের চেয়ে রেলপথ অনেক বেশি নিরাপদ।

আরামদায়ক ভ্রমণে যাত্রীরা ট্রেনে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি এসি বগিতে তিনটি করে টিভি স্ক্রিন আছে। প্রত্যেক বগির টয়লেট পরিষ্কার এবং সাজ-সরঞ্জাম সম্পূর্ণ। জানালার পাশের সিটে বৈদ্যুতিক চার্জিং পোর্ট আছে। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ট্রেনে চিকিত্সা ও নিরাপত্তাকর্মী আছেন।

নব্বই বছর বয়সী যাত্রী মাকানিওলা আজিজ আবেকুটায় তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ফের মিলিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, আমি আবেকুটাতে স্কুলে যেতাম এবং আমার বাবা-মা লাগোসে থাকতেন। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ ছিল। এখন আমি ট্রেনে করে আবেকুটায় যাই। চমত্কার অভিজ্ঞতা। আমি আমার বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি।”

অ্যাবিওকুটার ব্যবসায়ী মাইকেল এগবো ট্রেনের সুবিধা ও নিরাপত্তার প্রশংসা করেন। তাঁর মতে রেলপথ পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্য বেগবান করবে।

অতীতে তিনি অনেকবার পরিবারের সদস্যের সঙ্গে গাড়িতে করে প্রতিবেশী পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোতে গেছেন। তাঁর গাড়ি একবার একটি নির্জন জায়গায় আটকে যায়। তিনি বলেন, “আপনি কল্পনা করতে পারেন, গভীর রাতে একটি পরিবার গভীর জঙ্গলে আটকা পড়েছে, যেখানে কোনও টেলিফোন নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংকেত নেই!”

তিনি বলেন, সে অভিজ্ঞতার পর পরিবারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এখন তিনি ট্রেনে করে ছুটি কাটাতে যান। “আমি কিছুদিন ধরে ট্রেনকে পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছি। ট্রেন যাত্রা অনেক সুবিধাজনক ও নিরাপদ।

চীনের কোম্পানি-নির্মিত নাইজেরিয়ার রেলপথ প্রকল্প অব্যাহতভাবে আফ্রিকার উন্নয়নে প্রাণশক্তি যোগাচ্ছে। ভবিষ্যতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন-নাইজেরিয়ার যৌথ নির্মাণ আরও বেগবান হবে।