‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫৫
2024-01-30 17:47:39

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ছাংপাই পাহাড়  

২। উপকূলীয় সৈকত শহর ছিন হোয়াংতাও

৩। ঘুরে আসুন শিচিংশান অ্যামুজমেন্ট পার্ক থেকে

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।   

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৫তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।      

১। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ছাংপাই পাহাড়  

প্রকৃতির অপরূপ সাজে সাজানো ছাংপাই পাহাড়। চীনের উত্তর-পুর্বাংশের চিলিন প্রদেশে অবস্থিত এই পার্ক। পার্কটি একদিকে যেমন চীন-উত্তর কোরিয়া দু দেশের সীমান্ত নির্ণয়কারী পাহাড় তেমনি ঠুমেন নদী, হোয়াংহো নদী আর সুহুয়া নদীরও উৎস। 

দুর্লভ পাখি আর প্রাণীর আবাসস্থল এই পাহাড়। যার ফলে ১৯৮০ সালে এই অঞ্চল জাতি সংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণীর সংরক্ষণ অঞ্চলের তালিকাভুক্ত করা হয়। বতর্মানে ছাংপাই পাহাড় হলো চীনের রাষ্ট্রীয় পযার্য়ের দশর্নীয়স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ছাংপাই পাহাড়কে উত্তর-পুর্ব চীনের প্রথম পাহাড় বলে গণ্য করা হয়। ইতিহাসে ছাংপাই পাহাড় সবর্দাই উত্তর-পুর্বাংশের চীনাদের জীবনযাপনের জায়গা এবং ম্যান জাতির জন্মস্থান। সুতরাং চীনের ছিং রাজবংশ আমলে ছাংপাই পাহাড় পবিত্র স্থানের নামে ভূষিত হয়। পর্যটন স্থান, ম্যান জাতির সম্মস্থান , রাজবংশ আমলের পবিত্র স্থান বলে ছাংপাই পাহাড় এখন বিশ্ববিখ্যাত।

প্রতিটা ঋতুতেই নতুন রুপে সাজে এই পাহাড়। বিশেষ করে শীতের এই সময়ে তুষারাবৃত থাকে পাহাড়টি। এই পাহাড়ের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দৃশ্য দেখা যায়  থিয়েজি বা স্বর্গ হ্রদ, ইউহুয়া লিন বা ইউহুয়া বন, বড় উপত্যাকা, পাহাড় উদ্যান, প্রধান শৃংগ , ঝরনা, হিফেনখো, ঝামাপাথর বন । অপরূপ এই সব দৃশ্য দেখতে   তাইতো এই সময়টায় দেশ ও বিদেশ থেকে ঘুরতে আসেন  নানা বয়সী পর্যটক। 

এই পাহাড় হচ্ছে একটি ঘুমন্ত আগ্নেগিরি। ঐতিহাসিক লিপিবদ্ধ তথ্যগুলো অনুযায়ী, ১৬ শতাব্দীর পর থেকে এখানে মোট তিনবার আগ্নেয়গিরির ঘটনা ঘটে। আপস-

জিনসেন, মার্টিনের লোম এবং হরিণের শিং উত্তর চীনের তিনটি মূল্যবান জিনিস বলে মনে করা হয়। আর এ তিনটি জিনিসই পাওয়া যায় এই ছাংপাই পাহাড়ে।  এছাড়া এ পাহাড়ে আছে বিভিন্ন গাছপালা ও প্রাণী। এরমধ্যে অন্যতম সুন্দরী, পাইন,  পাহাড়ের আংকুর, বন্য মাসরুম , চিনডালাই এবং উত্তর চীনের বাঘ। 

খুব সহজেই যাওয়া যায় ছাংপাই পাহাড়ে। শাংহাই আর সেনইয়াং থেকে বিমান চড়ে ইয়েনচি শহরে পৌছানোর পর আবার বাস পরির্বতন করে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই পাহাড়ে।

এই পাহাড়ে পর্যটকদের খাবারের রয়েছে সুব্যবস্থা। পাহাড়ে নীচে রয়েছে নানা ধরনের খাবারের হোটেল। এসব হোটেলে খাওয়ার পাশাপাশি আছে থাকার সুবিধাও। অপেক্ষাকৃত উন্নত মানের হোটেলে এক রাত থাকলে খরচ পড়বে ২২০ ইউয়ান, অন্যদিকে সাধারণ হোটেলে খরচ হবে বিছানা প্রতি দাম ১০ থেকে ৪০ ইউয়ানের কাছেকাছি।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম  

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম

২। উপকূলীয় সৈকত শহর ছিন হোয়াংতাও

বেইজিং থেকে থেকে ২৮১ কিলোমিটার দূরের শহর ছিন হোয়াংতাও। উত্তর-পূর্ব চীনের হ্যপেই প্রদেশে অবস্থিত এই শহর। ছিন সম্রাট পূর্ব অঞ্চল ভ্রমনের সময় দেবতা সন্ধানে আসলেই থাকতেন এই শরে। আর এজন্যই এই শহরের নামকরণ করা হয় ছিন হোয়াংতাও নামে।

চীনা ভাষায় ছিন হোয়াং মানে ছিন সম্রাট, তাও মানে দ্বীপ। ৩৩ জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এই শহরে।   এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হান,, মান, হু্ই, কোরিয়া, চাং, মোঙ্গলিয়া, মিয়াও জাতি। লোকসংখ্যার ৮৫.৩% হান জাতি, ১৪.৭% সংখ্যালঘুজাতি।

ছিন হোয়াংতাও শহর চীনের একটি উপকূলীয় সৈকত শহর। চীনের বিখ্যাত্ পর্যটন স্থান ও চীন সরকারের গ্রীষ্মকালীন কার্যলয়, "চীনের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী" নামেও পরিচিত ছিন হোয়াংতাও শহরে রয়েছে পরিবহন সুবিধা, ভবন অট্টালিকা, হোটেল, রেস্টুরেন্ট।

ছিন হোয়াংতাও শহর বিভক্ত হাইকাং, সানহাইকুয়ান, পেইতাইহো তিনটি ডিস্ট্রিক্ট। হাইকাং ডিস্ট্রিট ছিন হোয়াংতায়ের শহরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানকার মনোরম পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান ভালো হওয়ায় আদর্শ পর্যটন এবং শপিং কে এই শহর। পাশাপাশি চীনের বিখ্যাত্ শক্তি সম্পদ বন্দর ছিন হোয়াংতাও বন্দরও এখানে অবস্থিত।    

সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এই শহর। এই শহরের আবহাওয়া ভালো হওয়ায় বছরের প্রতিটা সময়ই ঘুরতে আসেন পর্‍্যটকরা। সারা বছর এখানকার গড়পড়তা তাপমাত্রা থাকে  প্রায় ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, শীতকালেড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -১৫ সেলসিয়াস।

এই শহরের পেইতাইহো পর্যটন স্থানে ঘুরার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। এছাড়া অন্য সব  পর্যটন স্থানে ঘুরার সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যটন সময় জুন মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

৩। ঘুরে আসুন শিচিংশান অ্যামুজমেন্ট পার্ক থেকে

রূপকথার এক মজার রাজ্য। এখানে রয়েছে পরী, ড্রাগন, রাজকন্যা আর মজার সব চরিত্র। বেশ কয়েক রকমের রোলার কোস্টার রয়েছে। আরও রয়েছে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ। আর আপনি যদি সমুদ্রের জগৎ অথবা ডায়নোসরদের সঙ্গে মোলাকাত করতে চান তাহলে সে ব্যবস্থাও রয়েছে। এই পার্কের নাম শিচিংশান অ্যামুজমেন্ট পার্ক।

বেইজিংয়ের শিচিংশান জেলায় অবস্থিত এই পার্ক সবাই চেনে পাচিয়াও পার্ক নামে । এটি ১৯৮৬ সালে প্রথম উন্মুক্ত করা হয়। বেইজিংয়ের প্রথম দিকের অ্যামুজমেন্ট পার্কগুলোর অন্যতম এই পার্ক।

এখানে রয়েছে অনেকগুলো রোলার কোস্টার। এর মধ্যে ক্রেজি মাউস রোলার কোস্টার দর্শনার্থীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। ক্রেজি স্কেটবোর্ড, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, ফ্রুট ওয়ার্ম কোস্টার, স্পেস পুলি, স্ট্যাকড রোলার কোস্টারও বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়া এই পার্কে রয়েছে পরীদের প্রাসাদ নামে চমৎকার একটি রূপকথার জগৎ। এই পার্কের অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল সেতু।  এটা পার হয়েই যেতে হয় পার্কের একদিক থেকে অন্যদিকে।

এই পার্কটিকে রয়েছে বিশাল ওয়াটার ওয়ার্ল্ড। শীতকালে এই ওয়াটার ওয়ার্ল্ড জমে বরফে পরিণত হয়। এখানে তখন সৃষ্টি হয় স্কেটিং ও স্লেজে চড়ার এক মজার জগতের । পাশাপাশি রয়েছে এখানে কুকুরে টানা স্লেজ গাড়িতে চড়ার সুযোগ আছে। শিশুরা মেতে ওঠে স্কেটিং আনন্দে। 

এই পার্কের ভিতরেই রয়েছে মজাদার সব খাবার খাওয়ার সুব্যবস্থা। খাবার খেতে পারেন পার্কের ভেতরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। এছাড়া বিকল্প হিসেবে পার্কটির বাইরে সন্নিকটেই রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট।

এখানে যাওয়ার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। বেইজিং সাবওয়ের এক নম্বর লাইনের পাচিয়াও অ্যামুজমেন্ট পার্ক স্টেশনে নামলে সহজেই এখানে যাওয়া যায়। ৬৬৩ নম্বর বাসেও এখানে পৌছে যাওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী