হুপেই প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দাইয়ে হল 'জ্বালানিসম্পদ হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তন' পরিকল্পনার একটি পরীক্ষামূলক শহর। শহরে 'তৃতীয় শিল্প' নতুন কৃষি শিল্পে সংযুক্ত হয়েছে। দাইয়ে এখন একটি নতুন শহরে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদেরকে দাইয়ে শহরের 'পরিবেশ অর্থনীতি' উন্নয়নের গল্প শোনাবো।
তিন সহস্রাধিক বছর আগ দাইয়ে শহরে খনিজ শিল্প উন্নয়ন শুরু হয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত যে, প্রাচীনকালে চীনের ব্রোঞ্জ দাইয়েতে উত্পন্ন হতো। এখানকার পাহাড়ে তামা ও লোহা আছে। সেজন্য পাহাড়টির রং অন্য পাহাড়ের মতো না।
দাইয়ে শহরকে অনেকে 'স্বর্ণস্থান' ও 'দক্ষিণ চীনের সম্পদের ঘাঁটি' বলে ডাকে। কয়েক হাজার বছর ধরেই দাইয়েতে খনিবিদ্যা ও ধাতুবিদ্যা শিল্পের উন্নতি ঘটেছে। বিশেষ করে, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি কার্যকর হওয়ার পর দাইয়েতে খনিবিদ্যা ও ধাতুবিদ্যা আরও দ্রুত উন্নত হতে শুরু করে। কিন্তু ২০০৬ সালের পর দাইয়ে'র অর্থনীতির কাঠামো অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে এখানে খনিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মান এবং পরিবেশের মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
হুপেই ফেংচিয়াশান ওল্লাস্টোনাইট ফাইবার কোম্পানি হল ওল্লাস্টোনাইট ফাইবার অনুসন্ধান ও উত্পাদনকারী একটি কোম্পানি। কোম্পানির চেয়ারম্যান ওয়াং দে ছিয়াং দাইয়ে'র ফেংচিয়াশানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ওল্লাস্টোনাইট ফাইবার ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক, পেইন্টস ও রংয়ে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু ওল্লাস্টোনাইট ফাইবার উত্পাদনের প্রযুক্তি ও বাজার যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির একচেটিয়া দখলে ছিল বহু বছর ধরে। অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চ দাম দিয়ে মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে এই ফাইবার আমদানি করতে হতো। ওয়াং দে ছিয়াং আট বছর নিজের উত্পাদন-প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণায় তিনি চীনের অন্যান্য কোম্পানি, রাশিয়া, ইউক্রেন, জাপান ও জার্মানির বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নেন। আগে প্রতি টন ফাইবার আমদানি করতে হতো ১৬ বা ১৭ হাজার ইউয়ান দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে ফেংচিয়াশান ওল্লাস্টোনাইট ফাইবার কোম্পানির নিজেদের তৈরী পণ্যের দাম তার মাত্র অর্ধেক। এ পর্যন্ত কোম্পানি চীনের এই বাজারের ৮০ শতাংশ দখল করেছে।
ওয়াং দে ছিয়াং বলেন, তাঁর কোম্পানির উত্পাদন-ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়। কারখানায় শ্রমিক বেশি নেই। এখানে ঘাস আর ফুল আছে বেশি; পরিবেশ চমত্কার।
দাইয়ে শহরে ঐতিহ্যগত শিল্পের কাঠামো পরিবর্তনের পর কোনো কোনো কারখানা আধুনিক কৃষিশিল্পে বিনিয়োগ করতে শরু করে। বিনিয়োগের ফলে দাইয়ে'র নতুন কৃষি দ্রুত উন্নত হয়।
সিনদং জৈবিক পরিবেশগত কেন্দ্রের আয়তন ২ বর্গকিলোমিটার। কেন্দ্রে বড় স্কেলে রোপণ, বায়োগ্যাস পুলে প্রজনন বর্জ্য থেকে জৈব সার উত্পাদন এবং জৈব উদ্ভিজ্জ চাষ করা হয়। কেন্দ্রটির অধিকাংশ ভূমি খনি ও পরিত্যক্ত জমি থেকে রূপান্তরিত।
সিনদং জৈবিক পরিবেশগত কেন্দ্রে কর্মীদের অধিকাংশ হলেন কাছাকাছি গ্রামের বাসিন্দা। সিনদং কোম্পানি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভূমি লিজ নিয়ে বিনিময়ে তাঁদেরকে টাকা দেয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। কেন্দ্রের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, "আমাদের অধিকাংশ কর্মী হলেন স্থানীয় নারী। তাঁরা প্রতিদিন এখানে আট ঘন্টা কাজ করেন। প্রতিমাসে তাঁদের বেতন প্রায় ৩ হাজার ইউয়ান।"
লিউরেনবা থানায় অবস্থিত লংফেং গ্রুপ হল বর্তমান হুপেই প্রদেশের বৃহত্তম কৃষি ও গ্রামীণ পর্যটন কোম্পানি। কোম্পানির মূল ব্যবসা গ্রামীণ পর্যটন। দশ বছর আগে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা লিউ হে উ 'পরিবেশগত উন্নয়ন' ধারণা থেকে লংফেং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে কোম্পানি অনুর্বর পর্বতকে পরীক্ষামূলক পার্কে পরিণত করতে শুরু করে। এ কোম্পানিও স্থানীয় কৃষকদের ভূমি লিজ নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাবতেই পারেননি যে, একদিন অনুর্বর পর্বত একটি সুন্দর পার্কে পরিণত হবে। বহু বছরের প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাসিন্দারা আসল মুনাফা লাভ করেছেন।
লংফেং কোম্পানির পার্কে কয়েকটি যাদুঘর রয়েছে। লিউ হে উ বলেন, পর্যটকদের বিশেষ করে যুব-পর্যটকদেরকে ইতিহাস জানানোর সুযোগ করে দিতেই এই যাদুঘরগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে।
দাইয়ের ভূমি ও পানির গুরুতর দূষণ এখন ইতিহাস। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৬.৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের 'চিনহু প্রাকৃতিক পার্ক' নির্মিত হচ্ছে।
পার্কের পরিকল্পনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা বলেন, তিন বছর ধরে দাইয়ে শহরের স্থানীয় সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ব্যয় করে পার্কটি নির্মাণ করছে। ভবিষ্যতে পার্কটি হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের শরীরচর্চার ভালো জায়গা। (ছাই/আলিম)