চীনের অর্থনৈতিক শক্তি গতি পাচ্ছে
2024-01-29 10:12:29

চলতি মাসের ১৫ থেকে ১৯ পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ২ হাজার ৯শরও বেশি রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং বাণিজ্য ও তথ্যমাধ্যমের প্রতিনিধি বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তরিক আলোচনা করেন। অনেকে ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রভাবের ব্যাপারে আস্থা রাখেন।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীন বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও বৈজ্ঞানিক সৃজনশীলতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভুমিকা পালন করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জে ব্রেন্ডে এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেন, চীন বিশ্ব অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চীনের যথেষ্ঠ নীতি-অস্ত্র আছে। দেশটি বিনিয়োগ ও অবকাঠামো-ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি থেকে ইলেক্ট্রোমোবাইল-ভিত্তিক প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তর করছে। এছাড়া দেশটি এখন রপ্তানি থেকে পরিষেবা ও ডিজিটাল বাণিজ্যে পরিবর্তনের সময়ে আছে এবং পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের গুরুত্বপূর্ণ উত্পাদক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চলতি বছরের প্রতিপাদ্য ‘আস্থা পুনর্গঠন’ সম্পর্কে তিনি বলেন, সারা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বাসের অভাব এবং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীন কেবল বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে তা নয়, বরং একটি আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভুমিকা পালন করার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের আস্থা পুনর্গঠন বেগবানে অবদান রাখছে।

ব্রেন্ডে মনে করেন, চীনের অনেক ব্যবস্থা বিশ্বের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ। যেমন বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা এবং আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে দেশটি। চীন ‘বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলীয়’ দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রাখে এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন-আঙ্কটাডের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ লিয়াং কুওইয়ং বলেন, চীনের অর্থনীতির আকার বিশাল - বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে দেশটি। তিনি মনে করেন, এমন আকারের অর্থনীতিতে উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ বেগবান করলে, তা আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক উন্নয়ন এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘২০২৪ সালে বিশ্ব সংকট প্রতিবেদন’-এ বলা হয়, আগামী কয়েক বছর অর্থনীতির অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকবে এবং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য বাড়তে থাকবে।

ম্যাককিনসে চীনের চেয়ারম্যান জোসেফ নাই সম্প্রতি বলেন, ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকবে, তবে চীনের অর্থনীতিতে সুস্থ ধারা বজায় থাকবে। 

তিনি মনে করেন, গত দুবছরে চীনের অর্থনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বলিষ্ঠতা সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে। চীনা অর্থনীতির আকার বিবেচনা করে, দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্যান্য অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর গড় প্রবৃদ্ধিকে ‘ছাড়িয়ে গেছে’।

চীন নির্মাণখাত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তিতে বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি চাঙ্গা করার বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা ভুমিকা পালন করতে এবং কার্যকারিতা দেখাতে শুরু করছে। জোসেফ আরও বলেন, চীনের শক্তিশালী সৃজনশীল দক্ষতা এবং পরিশ্রম ও উচ্চমানের শ্রমিক আছে। দেশটির অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ উন্নয়নের সম্ভাবনায় ভরপুর। (প্রেমা/রহমান)