দেহঘড়ি পর্ব-৫৫
2024-01-28 17:16:12

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের ভালো দাওয়াই টিসিএম

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) নারীদের এক ধরনের জটিল রোগ। প্রতি ১০ জন ঋতুমতী নারীর মধ্যে অন্তত ১ জন এ রোগে ভোগেন৷ অনেক ক্ষেত্রে এ রোগের সূত্রপাত হয় একেবারে কিশোর বয়সে এবং যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত এ রোগে ভুগতে হতে পারে। পিসিওএস হলে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে যায়; কখনও কখনও কয়েক মাস পরপর একবার পিরিয়ড হতে পারে, এমনকি বছরে মাত্র একবারও হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের নামকরণ করা হয়েছে ডিম্বাশয়ে সৃষ্ট ছোট সিস্ট থেকে। সিস্টগুলো আসলে অপরিণত ডিম্বাণু।

পিসিওএসকে প্রজনন ও এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের একটি ব্যাধি বলে মনে করা হয়। প্রচলিত চিকিৎসায় ঋতুচক্র নিয়মিত করতে মূলত হরমোন থেরাপি দেওয়া হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি বা টিসিএম এবং আকুপাংচারে হরমোনের ভারসাম্য এবং ডিম্বস্ফোটনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে প্রজননক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

উপসর্গ:

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম প্রজনন হরমোন এবং বিপাকীয় হরমোন উভয়ের ভারসাম্যহীনতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ রোগের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত বা বন্ধ পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় অস্বাভাবিক ব্যথা, বন্ধ্যাত্ব, ওজন বৃদ্ধি, শরীর বা মুখের অতিরিক্ত চুল গজানো, মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, ত্বকে কালচে ভাব, ব্রণ ও তৈলাক্ত ত্বক, ক্লান্তি, দ্রুত মেজাজ পরিবর্তন ও বিষণ্নতা।

কারণ:

পিসিওএস কেবল প্রজননের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; পাচনতন্ত্র ও এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের সঙ্গেও এটি সম্পর্কিত। পশ্চিমা চিকিৎসাশাস্ত্রমতে, এ রোগের কারণগুলো এখনও রহস্যাবৃত। সেকারণে এ চিকিৎসাব্যবস্থায় এ রোগের কোনও সামগ্রিক চিকিৎসা নেই। এর চিকিৎসায় সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির মতো কিছু হরমোন থেরাপির ওষুধ অন্তর্ভুক্ত থাকে। কোনও কোনও রোগীকে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের জন্য মেটফর্মিন দেওয়া হয়। এ রোগে আক্রান্ত যেসব নারী সন্তান নিতে চান তাদের ক্লোমিড ও লেট্রোজোল দেওয়া হয়। আবার ব্রণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চুল অপসারণের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করার এবং অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

টিসিএমে মনে করা হয়, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বিচ্ছিন্ন কোনও রোগ নয়; এটি অন্যান্য স্বাস্থ্যসমস্যা যেমন অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অ্যামেনোরিয়া ও বন্ধ্যাত্বের সাথে সম্পর্কিত একটি রোগ। টিসিএম শাস্ত্রমতে, এ রোগটি ঘটে শরীরের মূল শক্তি বা ‘ছি’, রক্ত ও অন্যান্য তরল চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা স্থবিরতায়৷

পিসিওএস অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুকারণেই হয়। বাহ্যিক কারণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বাতাস, ঠান্ডা, ক্লেদ, তাপ, শুষ্কতা ও শারীরিক আঘাত৷ অভ্যন্তরীণ কারণগুলো শরীরের মধ্যেই উদ্ভূত হয় এবং এগুলো পুষ্টি, ব্যায়াম, ঘুম, উদ্বেগ, অতিরিক্ত চিন্তা, রাগ, দুঃখ ও চাপের মতো খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার অভ্যাস ও আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত৷

চিকিৎসা:

পিসিওএসের টিসিএম চিকিৎসা-নীতি খুব সহজ - যদি শরীরের কোনও একটি অংশ দুর্বল হয়, তাহলে সেটিকে শক্তিশালী করতে হবে; আর যদি সেটির ক্রিয়া অত্যধিক হয়, তাহলে তা কমাতে হবে। এ চিকিৎসাব্যবস্থায় প্রত্যেক রোগীকে অন্যদের থেকে আলাদা হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে প্রত্যেককে আলাদা চিকিৎসা প্রোটোকল দেওয়া হয়।

পিসিওএস-সম্পর্কিত ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং ওজন বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিপাকীয় ত্রুটি দূর করতে সাহায্য করে আকুপাংচার। এই ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা লিউটিনাইজিং হরমোন এবং ফোলিকর স্টিমুলেটিং হরমোনের ভারসাম্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার ফলে ডিম্ব ও ডিম্বস্ফোটনে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ষোল সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং ইলেক্ট্রো-আকুপাংচার প্রয়োগ করায় রোগীদের মধ্যে এন্ড্রোজেনের মাত্রা হ্রাস পায় এবং মাসিকে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। আর নির্দিষ্ট চীনা ভেষজ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

শতবর্ষী ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল

ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের পার্শ্ববর্তী শানতুং প্রদেশের ছিংদাও শহরে অবস্থিত একটি প্রধান স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান। আজ থেকে ১০৮ বছর আগে, ১৯১৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এটি চীনের সর্বোচ্চ স্তরের প্রথম শ্রেণির হাসপাতালগুলোর একটি। সদরদপ্তর ও বেশ কয়েকটি শাখা নিয়ে গঠিত ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল হাসপাতাল। শাখাগুলো হলো পূর্ব হাসপাতাল, পশ্চিম হাসপাতাল, মিউনিসিপ্যাল ডার্মাটোলজি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কেন্দ্র, বেইজিয়ু ওয়াটার স্যানাটোরিয়াম এবং সুচৌ রোড হাসপাতাল। শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, রোগপ্রতিরোধ, স্বাস্থ্যসেবা, পুনর্বাসন ও স্বাস্থ্যপুনরুদ্ধার একই ছাদের নিচে এসেছে এই হাসপাতালে।

দুই হাজার ২শ শয্যার এ হাসপাতালে কর্মরত ৩ হাজার ৮শ জন জন কর্মী, যাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ পেশাদার পদবিধারী ৫৯৭ জন বিশেষজ্ঞ। এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে বছরে ২০ লাখের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়, ৯০ হাজার রোগী ভর্তি করা হয় এবং প্রায় ৩২ হাজার অস্ত্রোপচার করা হয়।

ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল  হাসপাতালে রয়েছে সাতটি প্রধান প্রাদেশিক-স্তরের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ, ১৯টি মূল প্রাদেশিক-স্তরের ক্লিনিক্যাল বিশেষায়িত বিভাগ, ২৪টি পৌর-স্তরের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিভাগ, সাধারণ রোগের চারটি মূল পরীক্ষাগার, পাঁচটি পৌর-স্তরের ক্লিনিক্যাল গবেষণা কেন্দ্র এবং ১০টি পৌর-স্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।

মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়-অনুমোদিত পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো তৈরির একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এই হাসপাতাল। ছিংদাওয়ের পৌর-স্তরের সর্ববৃহৎ সমন্বিত হাসপাতাল হিসাবে, ছিংদাও মিউনিসিপ্যাল  হাসপাতালের অন্যতম দায়িত্ব গুরুতর অসুস্থতার চিকিৎসা প্রদান। একটি উচ্চমানের আঞ্চলিক চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণে শহর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এ চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানটি।

অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় এটি শানতুং প্রদেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল। এছাড়া কার্ডিয়াক, মস্তিষ্ক, হাড় ও ইউরোলজি ক্ষেত্রে ব্যাপক সুনাম রয়েছে হাসপাতালটির। পাশাপাশি করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিংয়ের মতো জটিল অপারেশন, ইন্টারভেনশনাল সার্জারি, টিউমার অপসারণ, আর্থ্রোস্কোপিক রোগ নির্ণয় এবং মাইক্রোসার্জারিতে বিশেষভাবে পারদর্শী এখানকার শল্যচিকিৎসকরা।

হাসপাতালটি তার পূর্ব শাখায় একটি আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল বিভাগ চালু করেছে, যেখানে ছিংদাওয়ে অবস্থানরত বিদেশিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

 

হেলথ টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং ঘুমান

সুস্থতার একটি অপরিহার্য শর্ত হলো পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা ঘুমে ব্যাঘাত হলে তা শরীরের নিজস্ব-রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটায় এবং অবশেষে অসুস্থতা ডেকে আনতে পারে।

সঠিক বিশ্রাম শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরে শক্তি যোগায়। কাজ, ব্যায়াম, খেলা ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য এমন প্রয়োজন প্রত্যেকেরই। শখ, সামাজিক যোগাযোগ, ব্যায়াম ও নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ হ্রাস করা যায় এবং তার মধ্য দিযে শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি বলে, উষ্ণ মাসগুলোতে বেশি সক্রিয় থাকা এবং শীতকালে কম সক্রিয় থাকা উচিত।

 

 ‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।