চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2024-01-26 14:43:00

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

চলতি বাণিজ্যের ৫৪তম পর্বে থাকছে:

 

১.  ১৩ ট্রিলিয়ন ছাড়াল চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের জিডিপি

২.  উৎপাদন বৃদ্ধি করছে চীনের ওয়ানলি টায়ার

৩. উজবেকিস্তানকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নির্ভর হতে সহযোগিতা করছে চীন

 

 

১৩ ট্রিলিয়ন ছাড়াল চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের জিডিপি

দক্ষিণ চীনের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কুয়াংতোং প্রদেশ। ২০২৩ সালে এই প্রদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বেড়ে ১৩ দশমিক ৫৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। যা বিশ্বের অনেক দেশের জিডিপির থেকেও বেশি।

টানা ৩৫ বছর ধরে চীনের প্রদেশগুলোর মধ্যে জিডিপিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে কুয়াংতোং প্রদেশ। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এ প্রদেশের জিডিপি বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

সম্প্রতি প্রাদেশিক পিপল’স কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সরকারি এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান কুয়াংতোংয়ের গভর্নর ওয়াং ওয়েইচং।

এ সময় তিনি জানান, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও প্রদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুজ্জীবিত ও উন্নত হয়েছে।

এর মধ্যে শুধুমাত্র কুয়াংতোংয়ের রাজধানী কুয়াংচৌয়ের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের বেশি।

এদিকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রদর্শক হিসেবে পরিচিত শেনচেন প্রদেশ। জিডিপির বিবেচনায় এই প্রদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২৩ সালে শেনচেনের জিডিপি এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে।

 

কুয়াংতোং প্রদেশের উৎপাদন শিল্পগুলো জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে, প্রাদেশিক সরকার উৎপাদন শিল্পগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ায় এমন অর্জন সম্ভব হয়েছে।

বর্তমানে প্রদেশটিতে ৭১ হাজারেরও বেশি শিল্প উদ্যোগ এবং ৭৫ হাজারেরও বেশি উচ্চ-প্রযুক্তি উদ্যোগ গড়ে উঠেছে।

এই প্রদেশের মোট জিডিপি দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং স্পেনের মতো দেশকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১৫তে স্থান করে নিয়েছে।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

উৎপাদন বৃদ্ধি করছে চীনের ওয়ানলি টায়ার

চীনের কুয়াতোং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌতে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান ওয়ানলি টায়ার কোম্পানি লিমিটেড। গত বছর থেকে দেশটির টায়ার শিল্প বিকশিত হওয়ার ফলে ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে এ কোম্পানিটির।

চীনের অটোমোবাইল শিল্প বিকশিত হওয়ার ফলে দেশটির টায়ার খাতও গত বছর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি চীনের বিখ্যাত টায়ার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ানলি আগের বছরগুলোর লোকসানকে শুধুমাত্র যে লাভে পরিণত করেছে তাই নয়, বরং গত দুই বছরে এর বিক্রয় দ্বি-অঙ্কেও নিয়ে গেছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে নিজেদের বাজার আরও বৃদ্ধির বিষয়েও আশাবাদী তারা।

নতুন উৎপাদন সক্ষমতা এবং স্মার্ট প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে কোম্পানিটি ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউয়ানের মুনাফার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

২০২৩ সালে ওয়ানলির টায়ার উৎপাদন বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। একই বছর বিক্রয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফলে শুধুমাত্র ২০২৩ সালে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ২৯ কোটি ২০ লাখ ইউয়ান।

এর মধ্যে ইস্পাত রেডিয়াল টায়ারের উৎপাদন প্রায় ১৪ কোটি ইউনিটে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশটির ন্যাশনাল বিজনেস ডেইলির একটি প্রতিবেনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ইস্পাত রেডিয়াল টায়ারের উৎপাদন ৫৯ কোটি ১০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশীয় গাড়ি নির্মাতাদের প্রবল চাহিদা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্ডার এসেছে।  

মূলত ওয়ানলি টায়ার কোম্পানি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি চালিত যানবাহনগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের গবেষণা ও উন্নয়নেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।

বৃহৎ এই কোম্পানিটি তাদের তৃতীয়-পর্যায়ের বর্ধিতকরণের আগে কুয়াংচৌ, হ্যপেই, আনহুই প্রদেশে দুটি প্রধান উৎপাদন কারখানায় স্মার্ট উৎপাদনের লক্ষ্যে একাধিক প্রযুক্তিগত রূপান্তরেও বিনিয়োগ করেছে।

এর মধ্যে হ্যপেই বেস হলো ওয়ানলি টায়ারের প্রথম সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এবং অটোমেটেড পরিবেশবান্ধব টায়ার কারখানা।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই কম্বোডিয়ায় একটি কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানির বিশ্ববাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ানলি টায়ারের উৎপাদন সম্প্রসারণ স্থানীয় শিল্প বিনিয়োগ, বিশেষ করে উদীয়মান শিল্পগুলোকে আরও বিকশিত হতে সাহায্য করবে।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

ভিনদেশে চীন:

উজবেকিস্তানকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নির্ভর হতে সহযোগিতা করছে চীন

সূর্যালোক সম্পদ সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে বছরে ৩২০ দিনই রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে। এমন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশটিকে জ্বালানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করছে চীন। বিশেষ করে, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নির্ভর হতে সহযোগিতা করছে।

২০২৩ সালের বছরের মে মাসে উত্তর-পশ্চিম চীনের সিআন সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘ফার্স্ট চায়না-সেন্ট্রাল এশিয়া’ শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে চীন ও উজবেকিস্তান।

চুক্তি অনুযায়ী, উজবেকিস্তানে ৫ গিগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি ফোটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন এবং বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে চীন। এতে মোট ব্যয় হয় ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সূর্যের আলো প্রায় সারা বছরই ব্যবহার করা যায়। এই আলো থেকে যে পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় তা বছরে ১৮২ মিলিয়ন টন তেল পোড়ালে যে পরিমাণ শক্তি মেলে তার সমান। এ কারণেই রৌদ্রোজ্জ্বল উজবেকিস্তান পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে।

উজবেকিস্তানের কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির মোট বার্ষিক উৎপাদন ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে চায়।

চীন ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশটির উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীনা প্রকৌশলীরা কাশকাদরিয়া এবং বুখারাতে ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

এই প্রকল্পগুলোতে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি নতুন কর্মসংস্থান খাত তৈরি হবে এবং প্রতি বছর ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে।

বুখারা প্রকল্পের চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ইয়াং হুয়াচি জানান, বুখারার ফটোভোলটাইক পাওয়ার প্ল্যান্টটি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত, একটি পাম্পিং স্টেশন এবং একটি ফটোভোলটাইক অঞ্চল। এই পাওয়ার স্টেশনটি তৈরি করতে, চীন থেকে ২০০ জনেরও বেশি প্রকৌশলী এবং ১৫০ জন গ্রিড ইন্সটলেশন বিশেষজ্ঞ দেশটিতে এসেছেন।

এই ফোটোভোলটাইক পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুতের কোনও সমস্যা থাকবে না।

চীন ও উজবেকিস্তানের সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র জ্বালানি হলেও দুই দেশ আরও বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উজবেকিস্তানে চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে চারগুণ । ২০২২ সালের তুলনায় দেশটিতে বিনিয়োগকারী কোম্পানির সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৪ সালে চীনা বিনিয়োগকারীরা উজবেকিস্তানে কৃষি, পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল শিল্প, যান্ত্রিক প্রকৌশল এবং পরিবহনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেবে।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- নাজমুল হক রাইয়ান

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী