শীতকালেও চাষ নিয়ে ব্যস্ত চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়ার কৃষকরা
2024-01-26 18:14:01

এই শীতকালে হ্য থাও সমতলে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সকাল নয়টার দিকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ‘পা ইয়ান নাও এর’ শহরের লিয়ান ফেং গ্রামের বাসিন্দা লি চুন নিজের গ্রিনহাউসে এসেছেন। তিনি যন্ত্র চালু করে গ্রিনহাউস ঢাকা কম্বল সরিয়ে দিয়েছেন। লি চুন বলেন, “প্রতিদিন যখন তাপমাত্রা খানিকটা বাড়ে, তখন আমরা দ্রুত কম্বল সরিয়ে নিই, যাতে পর্যাপ্ত সুর্যালোক গ্রিনহাউসে প্রবেশ করে এখানকার তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।”

লি চুনের সঙ্গে যখন আমাদের সাংবাদিক গ্রিনহাউসে প্রবেশ করেন, তখন উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাসের প্রবাহ অনুভব করেন। সেখানে ঝুলে থাকা সব শসা খুব সতেজ দেখায়। শাক-সবজির গন্ধ ভেসে আসে। গাছ সাজানো, ফসল তোলা এবং প্যাকেজিং করা নিয়ে খুব ব্যস্ত রয়েছেন লি চুন ও তার স্ত্রী ইয়াং সুয়েন। লি চু বলেন, “এবার পুরোটা শসা চাষ করেছি। প্রতিদিন ২০০ কেজিরও বেশি শসা উত্পাদিত হয়। আগে শীতকালে বেশিরভাগ সময় গ্রিনহাউজ ফাঁকা থাকতো এবং কোনো উপার্জন হতো না। এখন সে অবস্থা আর নেই। খুব ব্যস্ত থাকি। পরিশ্রম করতে হয়। তবে উপার্জন অনেক বেড়েছে। একটি গ্রিনহাউসে চারা লালন এবং শাকসবজি চাষ থেকে ১ লাখ ইউয়ান উপার্জন করতে পারছি। আমার এমন ৫টি গ্রিনহাউস রয়েছে। উপার্জন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও পরিশ্রম করতে উত্সাহিত হয়েছি।”

জানা গেছে, গ্রিনহাউসে চাষবাস সমর্থন করতে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সরকার সব সময় লি চুনকে সহায়তা দেয়। তাকে চাষের অভিজ্ঞতা দেয় এবং যখন শীত পড়ে, তখন আগেভাগেই সতর্ক করে দেয় সরকার, যাতে চাষীরা যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুতি নিতে পারেন।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি’র লিয়ান ফেং গ্রাম কমিটির সম্পাদক ছাই জেন ছিং জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিয়ান ফেং গ্রাম কাঠামোগত কৃষি উন্নয়ন জোরদার করছে। বর্তমানে গ্রামটিতে ৬৮০টি গ্রিনহাউস গড়ে উঠেছে। এসব গ্রিনহাউস কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে ভালো সহায়ক হয়েছে।

‘পা ইয়ান নাও এর’ শহরের লিন হ্য এলাকার ইয়োং ফেং গ্রামে হাও থোং আধুনিক কৃষির দৃষ্টান্তমূলক উদ্যানে রয়েছে সারি সারি গ্রিনহাউস। হাও থোং আধুনিক কৃষি ও পশুপালন কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক ফেং মিং বলেন, এসব গ্রিনহাউস বিজ্ঞান-ভিত্তিক। গ্রিনহাউসগুলো যাতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায়, সেভাবে নকশা করা হয়েছে। এগুলো ৭ মিটার উচু এবং ১২ মিটার প্রশস্ত। এর ভিতরে পানি, সার ও ওষুধযুক্ত সেচ ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রিনহাউসের দেয়ালে গ্রাফিনের উপাদান রয়েছে, যার ফলে এ দেয়াল তাপ শোষণ এবং তাপ স্টোরেজ করতে পারে।

ইয়ো ফেং গ্রামের অধিবাসী চাং সিন এ উদ্যানের ২টি গ্রিনহাউসের মালিক। তার একটি গ্রিনহাউসে শসা পরিপক্ক হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি ২০২৩ সালের শুরুতে গ্রিনহাউস চালাতে শুরু করি। ওই বছরের প্রথমার্ধে একটি গ্রিনহাউস থেকে উপার্জন করি ৭০ হাজার ইউয়ান। এখন বছরের চার মৌসুমে চাষবাস নিয়ে ব্যস্ত। বছরে তিনবার চাষ করা সম্ভব হয়। তাই উপার্জন অনেক বেড়েছে।”

‘পা ইয়ান নাও এর’ শহরে চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ ৮লাখ হেক্টর। এ জায়গাটিকে মহাপ্রাচীরের উত্তরের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবহাওয়ার কারণে এখানে বছরে মাত্র একবার শস্য উৎপাদিত হতো। শরত্কালের ফসলের পর থেকে ৬ মাস কোনও চাষবাস হতো না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘পা ইয়ান নাও এর’ শহরে অবকাঠামো উন্নত করতে কৃষি উন্নয়ন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষকদের উপার্জন অনেক বেড়েছে।

‘পা ইয়ান নাও এর’ কৃষি ও পশুপালন ব্যুরোর উপমহাপরিচালক ওয়াং সিং বলেন, “পুরো শহর ‘সরকারের ভতুর্কি, প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্মাণ, কৃষকদের মাধ্যমে চাষ এবং কৃষক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা চালানো’র পদ্ধতিতে কৃষি উদ্যানে উন্নয়ন বেগবান করা হচ্ছে। সমবায় ও চাষীদের মধ্যে পণ্য সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফসল উঠার পর একসাথে সংগ্রহ ও বিক্রয় করা হবে, যাতে চাষীদের বিক্রয়ের সমস্যা সমাধান করা যায়।”

২০২৩ সালে ‘পা ইয়ান নাও এর’ ভতুর্কি অর্থ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করেছে। বড় চাষী, সমবায় ও প্রতিষ্ঠানসহ মালিকদের অংশগ্রহণ আকৃষ্ট করতে মোট ১০১ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করেছে স্থানীয় সরকার, যার ফলে পুরো শহরে কৃষির আওতাধীন জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৮২৭ হেক্টর বেড়েছে। এই শহরে শিল্প চাঙ্গা হওয়ার মাধ্যমে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে গতি এসেছে। 

(রুবি/রহমান)