জাতিসংঘে তারা যা-ই বলুক, বাস্তব সিনচিয়াং দেখেছেন অনেকে: সিএমজি’র সম্পাদকীয়
2024-01-25 14:31:57

জানুয়ারি ২৫জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের চতুর্থ মানবাধিকার সম্মেলন হয়েছে গত ২৩ জানুয়ারি। সেখানে মানবাধিকারে নিজেদের অগ্রগতি ও সাফল্যগাথা তুলে ধরেছে চীন। মানবাধিকার নিয়ে চীনের অগ্রগতির ইতিবাচক মূল্যায়ন করেছে ১২০টিরও বেশি দেশ। মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নত করার ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তারা। যারা সিনচিয়াংসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চীনের মানবাধিকারকে রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা চালিয়েছে, তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য এটাই ছিল যথেষ্ট।

 

সম্মেলনে চীনের যে প্রশংসা করা হয়েছে, সেটার প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। সিনচিয়াংয়ের আলতাইয়ের কুরিপারান পরিবারের অতিথিশালার আয় এখন বছরে এক লাখ ইউয়ান ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে সিনচিয়াংয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটক ছিল ২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার। ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে যা ১১৭ শতাংশ বেশি। এটি রীতিমতো একটি রেকর্ড। কে কল্পনা করতে পারে যে, বহু বছর আগে এখানে সহিংসতা ঘটেছিল? পর্যটন পরিস্থিতি এভাবে ঘুরে দাঁড়ালই বা কী করে?

 

২৩ জানুয়ারি, ‘চীনের সন্ত্রাসবাদ দমন আইন ব্যবস্থা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে চীন। এতে চীনের সন্ত্রাসবাদ দমনের পদ্ধতি ও কার্যকারিতা তুলে ধরা হয় বিস্তারিত আকারে। সিনচিয়াংয়ের পরিবর্তন নিয়ে যাদের মনে প্রশ্ন ছিল, এই শ্বেতপত্র তাদের সব উত্তরই জানাবে।

 

সিএমজি’র সম্পাদকীয়তে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই শ্বেতপত্রের সর্বত্রজুড়ে আইনের বিধান মেনে সন্ত্রাস দমনের কথাই বলা হয়েছে। এতে শুধু জনগণের জানমালের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ঠেকানোর সর্বোচ্চ প্রয়াসই দেখা যায়নি, বরং এটি জনসাধারণের বেঁচে থাকা ও জীবনমানের উন্নয়নের অধিকারসহ মানবাধিকারও সুনিশ্চিত করেছে।

 

জরিপে দেখা গেছে, ২০১২ সালে চীনের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ছিল ৮৭.৫৫ শতাংশ ছিল, ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮.৬২ শতাংশে।

 

সন্ত্রাসবাদ মানবজাতির এক নম্বর জনশত্রু। চীনও এর শিকার। চীনের সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রধান ক্ষেত্র বলা যায় সিনচিয়াংকে। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত এ অঞ্চলে সহস্রাধিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিহত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক নিরীহ নাগরিক।

 

আতঙ্ক, হতাহত ও উন্নয়নে অচলাবস্থা—এসব নেতিবাচক বিষয় থেকে সবাই উপলব্ধি করতে পারে যে, আইনানুসারে সন্ত্রাসদমন করলেই কেবল মৌলিক মানবাধিকার সুনিশ্চিত করা সম্ভব।

 

১০ হাজারেরও বেশি শব্দের ওই শ্বেতপত্রে চীন স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে—সন্ত্রাসবাদ কাকে বলে। সেই সঙ্গে, পর্যায়ক্রমে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সন্ত্রাসবাদ দমন সংক্রান্ত আইনগত ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে চীন। ওতে যে কেবল সন্ত্রাসবাদ দমনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তা নয়; সেখানে আইনের তত্ত্বাবধানে সুস্পষ্ট বিধিমালার উল্লেখও আছে।

 

উল্লেখ করতে হয়, সন্ত্রাসদমনে চীন শুধু ‘ভুক্তভোগীদের মানবাধিকার রক্ষা’ করেনি, বরং সন্দেহভাজনদের আইনগত অধিকারও নিশ্চিত করেছে।

 

বাস্তব তথ্যপ্রমাণেই বলে যে, চীনের সন্ত্রাসবাদ দমন প্রক্রিয়া আইনগত চেতনাকে ধারণ করেই চলছে এবং এটি সন্ত্রাসবাদ দমনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।

এটি যেমন কার্যকরভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিহত করছে, তেমনি মানবাধিকারও সুনিশ্চিত করছে।

 

পশ্চিমের কিছু দেশে সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘দ্বিমুখী’ নীতি দেখা যায়। তারা তাদের তথাকথিত ‘আইনের শাসন’ ও ‘মানবাধিকার’র নামে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলায়। এতে শুধু সন্ত্রাসবাদ দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক উদ্যোগ বাধার মুখে পড়ছে না, বরং বৈশ্বিক মানবাধিকারের অবমূল্যায়নও হচ্ছে সুনিশ্চিতভাবে।

 

২০২৩ সালে বিদেশের অনেক ইন্টারনেট-তারকা চীনের সিনচিয়াং ভ্রমণ করেছেন। সিনচিয়াংয়ের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। রোমানিয়ার এক পণ্ডিত বলেন, ‘সিনচিয়াংয়ে আমি চীনের অকপটতা ও সৃজনশীলতা অনুভব করেছি।’

 

সন্ত্রাসবাদ দমনের মাধ্যমে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এগিয়েছে। নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উন্নয়ন বয়ে এনেছে কল্যাণ। আবার উন্নয়ন ও কল্যাণের হাত ধরেই জোরদার হয়েছে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। সিনচিয়াংয়ের পরিবর্তন নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর মিলবে এখানেই।

 

 

ওয়াং হাইমান/শান্তা/ফয়সল