আকাশ ছুঁতে চাই ৫৪
2024-01-25 17:07:32

১. নতুন পেশা ব্রাইডস মেইড

২. বরফে উষ্ণতা ছড়ালো এক মেয়ের ফোন

৩. চীনের নারীদের একশ বছরের জীবন তুলে ধরলেন চু রুয়োসুয়ান

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

ভিন্ন রকম পেশা: ব্রাইডস মেইড

বিয়ের আসরে কনের সঙ্গে থাকেন কয়েকজন সহচরী আর বরের সঙ্গে থাকেন কয়েকজন সঙ্গী। তাদের বলা হয় ব্রাইডসমেইড ও গ্রুমসমেন। সাধারণত কনে ও বরের চেনাজানা, আত্মীয়, বন্ধুরা এই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু আজকাল অনেকে পেশাগতভাবে ব্রাইডস মেইডের পেশা বেছে নিচ্ছেন। চলুন শোনা যাক নারীর এই নতুন পেশা বিষয়ে।

বিয়ের আসরে কনের সঙ্গে সহচরী বা ব্রাইডস মেইড থাকেন সাধারণত বোন, বান্ধবী বা পরিচিত তরুণীরা। কিন্তু অনেক সময় পরিবার থেকে দূরে থাকা কনের পক্ষে ব্রাইডস মেইড হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আত্মীয়, স্বজন বা বান্ধবীকে অনুরোধ করা সম্ভব  হয় না। এমন কনের জন্য রয়েছে পেশাদার ব্রাইডস মেইড নিয়োগের পদ্ধতি। চীনে এখন অনেক তরুণী ব্রাইডস মেইডের পেশা বেছে নিচ্ছেন।

 

                                           

এমন একজন ব্রিইডস মেইড হলেন সিয়ে ইয়ুকে।২৩ বছর বয়সী এই তরুণী সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতু ইউনিভারসিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর ব্রাইডস মেইডের পেশা বেছে নেন। তিনি আরও কয়েকজন তরুণীকে নিয়ে ব্রাইডস মেইড টিম গড়ে তুলেছেন।

ব্রাইডস মেইডের অনেক দায়িত্ব। তাকে কনের পাশে থাকতে হয়। অনুষ্ঠানস্থল সাজানোর দায়িত্বও পালন করতে হয়। কনের মেকআপ ও পোশাক ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্বও তার। বিয়ের সময় নার্ভাস কনেকে সাহস দেয়া তার মন ভালো রাখার দায়িত্ব ব্রাইডস মেইডের। উপহারের প্যাকেটও অনেক সময় তৈরি করেন তিনি।

সিয়ে ইয়ুকে জানান, আজকাল অনেক তরুণী নিজের হোমটাউন থেকে দূরে থাকেন। যদি কর্মস্থলের শহরে অথবা বরের শহরে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় তাহলে সেখানে নিজের বান্ধবী, আত্মীয় বা সহপাঠীদের আসতে বলাটা বিব্রতকর। কারণ আধুনিক ব্যস্ত জীবনে কারও এত সময় নেই যে দুতিন দিন ধরে কনের সঙ্গে এসে থাকবে। অনেকে সবরকম রীতি রেওয়াজ জানেও না।

পেশাদার ব্রাইডস মেইড সব রকম রীতিরেওয়াজ জানেন। তিনি ধৈর্য ধরে কনেকে সঙ্গ দেন। সিয়ে ইয়ুয়ে অনেকগুলো বিষয়ে খেয়াল রাখেন। তার দলের কোন সদস্যকে যখন তিনি ব্রাইডস মেইড হিসেবে নিযোগ দেন তখন তিনি লক্ষ্য রাখেন ব্রাইডস মেইড যেন কনের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বা সুন্দরী না হন। তার জোডিয়াক বা রাশি যেন কনের রাশির সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ না হয়।

 

একটি জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠানে সাধারণত ছয়জন ব্রাইডমেইডস ও ছয়জন গ্রুমসমেন দরকার হয়। সাদামাটা অনুষ্ঠানে এক থেকে তিনজন ব্রাইডস মেইড এবং সমসংখ্যক গ্রুমসমেন থাকেন। ব্রাইডস মেইডের পারিশ্রমিকে তারতম্য আছে। যোগ্যতা ভেদে একজন ব্রাইডস মেইডের প্রারিশ্রমিক প্রতি বিয়েতে ৩০০ থেকে এক হাজার ইউয়ান পর্যন্ত হতে পারে।

হাও রোংলির বয়স ১৯ বছর। শানতোং প্রদেশের ছিংতাও শহরে একটি নার্সিং কলেজে ইন্টার্নি শিক্ষার্থী। পার্টটাইম ভিত্তিতে কাজ করছেন ব্রাইডস মেইড হিসেবে। তিনি নিজেই ব্রাইডস মেইড ফর হায়ার বা ভাড়ার ভিত্তিতে ব্রাইডস মেইড নামে একটি নেটওয়ার্ক চালান। তার নেটওয়ার্কে তিনশর বেশি ব্রাইডস মেইড যুক্ত আছেন। তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের আযোজক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন।

তিনি বলেন, এই বাজারটা ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। আধুনিক জীবনে সকলেই ব্যস্ত। আত্মীয় স্বজন কেউ ব্রাইডস মেইড হতে চায় না। কনেও চায় না অনুরোধ করে কাউকে বিব্রত করতে। এজন্য পারিশ্রমিক দিয়ে ব্রাইডস মেইড নিতেই পছন্দ করেন অনেকে।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

বরফে উষ্ণতা ছড়ালো এক মেয়ের ফোন

হেইলংচিয়াংয়ের হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়ার্ড থিম পার্কে চলছে বিশাল উৎসব। অসংখ্য মানুষ সেখানে। এর মধ্যে মোবাইল ফোন হারিয়ে গেল এক তরুণীর। কি ঘটল তারপর? শুনবো সেকথা।

হারবিন আইস অ্যান্ড স্নো ওয়াল্ডল্ড থিম পার্কে চলছিল বিশাল উৎসব। এখানে ফোন হারিয়ে ফেলেছিলেন তরুণী সিয়ে। তিনি হেইলংচিয়াং ইউনিভারসিটি অব চাইনিজ মেডিসিনের ছাত্রী। তার ফোনটি খুঁজে পেয়ে অনুষ্ঠান কেন্দ্রে জমা দেন এক ব্যক্তি।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে, এই কথা বলে জানান ফোনের পিছনে লেখা আছে, বিশুদ্ধ ভালোবাসা, শুধু চীনের জন্য।  কথাগুলো শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে আবেগআক্রান্ত হন। কারণ, এটি হলো শহীদ চীনা বীরের বিখ্যাত উক্তি। চীনের বীর সৈনিক চেন সিয়াংরোং ২০২০ সালের জুন মাসে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সীমান্ত সঙঘর্ষে শহীদ হন। তার ডাইরিতে লেখা ছিল দেশপ্রেমের এই উক্তি। সিয়ে কেন এই উক্তি লিখেছে তার ফোনে? কারণ সিয়ে মনে করেন দেশপ্রেম অত্যন্ত মহান একটি অনুভূতি। তিনি নিজেও দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে চান। তাই তিনি চীনের পতাকা এবং এই দেশপ্রেমমূলক উক্তি লিখে রেখেছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ : শুভ আনোয়ার

সিয়ে বলেন, ‘অনেকে মনে করে ২০০০ সালের পরে জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্ম শুধু হালকা বিষয় নিয়ে চিন্তা করে। কিন্তু  আমি মনে করি আমরাই দেশের ভবিষ্যত গড়ে তুলবো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগে দেশকে গড়ে তুলতে হবে, সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করতে হবে।’

 সিয়ের এই কথা অনুষ্ঠান মঞ্চে দারুণ আলোড়ন তোলে। বরফে ঢাকা হারবিনের শীতল আবহাওয়া যেন উষ্ণ হয়ে ওঠে এই তরুণীর দেশপ্রেমে। অনেকেই এখন শহীদ বীরের এই কথাগুলো ওয়াল পেপার বানিয়ে রাখছেন।

 

চীনের নারীদের একশ বছরের জীবন তুলে ধরলেন চু রুয়োসুয়ান

১৯২০ থেকে ২০২০। একশ বছরে আমূল বদলে গেছে চীনের নারীদের সাজসজ্জা, লাইফ স্টাইল, পেশা, বলতে গেলে সমগ্র জীবন। চাইনিজ ভিডিও প্লাটফর্ম বিলিবিলিতে  এই পরিবর্তন তুলে ধরেছেন বিখ্যাত ভিডিও ক্রিয়েটর নারী চু রুয়োসুয়ান। শুনবো তার গল্প।

চীনের জনপ্রিয় ভিডিও প্লাটফর্ম বিলিবিলি। এখানে চীনের নারীদের একশ বছরের জীবন তুলে ধরে খ্যাতি পেয়েছেন নারী কনটেন্ট ক্রিয়েটর চু রুয়োসুয়ান। বিলিবিলিতে সেরা ১০০ ক্রিয়েটরকে সম্প্রতি সম্মানিত করা হয়। এই সেরাদের অন্যতম চু রুয়োসুয়ান।

চু রুয়োসুয়ানের জন্ম ১৯৯৮ সালে নানচিংয়ে। চীনা নারীদের জীবনের একশ বছরের পরিবর্তনকে ভিডিওতে তুলে ধরে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পান। সেখানে ১৯২০ এর দশকের নারীদের ফ্যাশন, সাজসজ্জা যেমন উঠে এসেছে তেমনি তাদের জীবনযাত্রাও প্রতিফলিত হয়েছে। যুদ্ধের সময় নারীর ভূমিকা,জাপানি আগ্রাসন এবং নানচিং গণহত্যার শিকার নারীদের ভয়াবহ অবস্থা, তাদের প্রতিরোধ, মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সময় নারীদের জীবন ও অবদান, দেশগঠনে নারীর ভূমিকা এসবকিছুই উঠে এসেছে তার ভিডিওতে। তিনি পুরোনো ফটোগ্রাফ থেকে নারীদের মুখে অনুভূতির প্রকাশ ধরতে চেয়েছেন।

১৯২০ থেকে ২০২০ এ বদলে যাওয়া চীনা নারীর জীবন বিষয়ক ভিডিওটি বিলিবিলিতে ১০ মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়। ১৩ ডিসেম্বর চু নানচিং গণহত্যার সময়কার নারীদের জীবন নিয়ে একটি ভিডিও বানান। এটিও আলোচিত ও সমাদৃত হয়। নানচিং গণহত্যার সময় ধর্ষণ থেকে বাঁচতে অনেক চীনা নারী তাদের চুল পুরুষের স্টাইলে কেটে ফেলেন যাতে তার নারী পরিচয়কে আড়াল করা যায়। এই বিষয়গুলোকেও তুলে আনেন চু।

অতীতের নারীদের জীবন তুলে ধরার জন্য গতানুগতিক ইতিহাস বইয়ের পাশাপাশি চু বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ফটোগ্রাফ এবং চলচ্চিত্রের উপর। নারীর পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বের বদলটাও তুলে ধরেছেন চু।

অতীত থেকে বর্তমান সময়ে নারীর পরিবর্তন, তার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠা এগুলোও প্রতিফলিত হয় চুর ভিডিওতে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ : আফরিন মিম

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল