‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫৪
2024-01-23 16:40:14

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের

২। শীতেও পর্যটক বেড়েছে তুয়েনহোয়াংয়ে

৩। সিনচিয়াংয়ের এনসিয়েন্ট ইকোলজিকাল পার্ক

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।   

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৪তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।       

 

১। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের

বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে হওয়া ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মতো চীনেও অনুষ্ঠিত হয় এমন উৎসব। বিশেষ করে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে দেখা মেলে হাজারো ঘোড়ার অংশ গ্রহণে ভিন্নধর্মী এক প্রতিযোগিতা। ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রদেশের ইলি নদীর তীরে আয়োজন করা হয় মনোমুগ্ধকর এ প্রতিযোগিতা। 

হাজার হাজার সাদা ও বাদামী রঙের ঘোড়া। ছুটে চলেছে তুষারাবৃত ইলি নদীর তীর ঘেষে। দৃষ্টিনন্দন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে  চীনের উইগুর স্বায়ত্ব্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের চাওসু কাউন্টিতে।

মূলত ঘোড়ার জন্য বিখ্যাত এই চাওসু কাউন্টি । তাই নতুন বছরের আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘোড়দৌঁড়কে ভিত্তি ধরেই নানা কার্যক্রমের আয়োজন করা স্থানীয়রা।

প্রাচীন উৎসবের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্থানীয়রা । ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে যাযাবরদের মতো ঘোড়া নিয়ে বিভিন্ন ক্রিড়াশৈলী প্রদর্শন করে তারা।

জানা যায়, হাজার বছর ধরেই সিনচিয়াংয়ের ইলি সংস্কৃতির অংশ এই ঘোড়া পালন। পশ্চিমা হান রাজবংশের সময় থেকেই পরিবহনের মাধ্যমে হিসেবেও ব্যবহার করা হয় এই প্রাণী। 

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী এই কাউন্টিতেই আছে প্রায় দেড় লাখ ঘোড়া। তাই এই কাউন্টির পশুপালকরা শুধু ঘোড়া পালন করেই পালটে দিয়েছে এখানকার অর্থনীতির চিত্র। পাশাপাশি ঘোড়ার নানা কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে এখানকার পর্যটনখাতও।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২। শীতেও পর্যটক বেড়েছে তুয়েনহোয়াংয়ে

শীতে সাধারণত পর্যটকের আনাগোনা থাকে না উত্তর-পশ্চিম চীনের তুয়েনহোয়াংয়ে। এবার ব্যতিক্রম। মৌসুমের বাইরেও পর্যটকরা আসছেন এখানে। বছরের শুরু থেকেই রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ভিড় করছেন মনোমুগ্ধকর শহরটিতে।

তুয়েনহোয়াংয়ে আছে নামকরা মোগাও গুহা, আছে বাঁকানো চাঁদের মতো জলধারা। আরও আছে মিংশা পর্বতের উটের গলায় বাঁধা সুরেলা ঘণ্টা।এসব দেখতেই সেখানে এ বছরের প্রথম ১৯ দিনে গেছে ১৩ হাজারেরও বেশি পর্যটক। যা আগের বছরের তুলনায় ৭৫ ভাগ বেশি।

মিংশা পর্বত ও নিরিবিলি বাঁকানো লেকগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন এসেছেন হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী।পর্যটকদের ছবি তুলে আয় করেন স্থানীয় আলোকচিত্রী লি চিয়ানচি। এর আগের কোনো শীতে এত দর্শনার্থী দেখেননি তিনি।

আলোকচিত্রী লি চিয়ানচি বলেন, ‘পর্যটকদের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। আগের বছরগুলোতে এত লোক আসতো না। মন্দার দিনে একটি অর্ডার পেতাম। স্বাভাবিক দিনে অর্ডার পাই চার-পাঁচটি।’

গত ডিসেম্বরে, তুয়েনহোয়াং বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার। যা ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

এদিকে, গত অক্টোবর থেকে তুয়েনহোয়াং রেল স্টেশনেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

তুয়েনহোয়াং রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান লি ইউয়েহু বলেন, ‘গত অক্টোবর থেকে, দিনে আমাদের যাত্রী এক হাজারের মধ্যে ছিল। ডিসেম্বরে  সংখ্যাটি প্রতিদিন দেড় হাজারে ওঠানামা করছে।’

আগে কখনই এত যাত্রী দেখেনি তুয়েনহোয়াং রেল স্টেশনের টিকিট বিক্রেতা।

টিকিট কর্মীচাং ফেং বলেন, ‘আগের বছরগুলোরর এ সময়টায় দিনে আমাদর যাত্রী থাকতো ২০০-৩০০। এমনকি একশজনেও নেমে এসেছিল।

কানসু প্রদেশের অন্যান্য জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানেও বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। এ তালিকায় আছে ইয়াতান ন্যাশনাল জিওলজিক পার্ক, ইয়াংকুয়ান গিরিপথ ও ইউমেন গিরিপথ। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখানে প্রতিদিন আগের চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি দর্শনার্থী দেখা যাচ্ছে।

তুয়েনহোয়াংয়ের সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রেডিও, টেলিভিশন ও পর্যটন ব্যুরো জানিয়েছে, এ বছরের শুরু থেকে গত শনিবার পর্যন্ত, প্রদেশের ছয়টি প্রধান দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গেছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৩২ জন পর্যটক। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২১ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদন- ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩।সিনচিয়াংয়ের এনসিয়েন্ট ইকোলজিকাল পার্ক

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমছির একটি বিখ্যাত পার্ক হলো এনসিয়েন্ট ইকোলজিকাল পার্ক। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশাল এই পার্কটিতে সিনচিয়াংয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে যেমন জানা যাবে তেমনি উপভোগ করা যাবে এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। 

এখানে রয়েছে অসাধারণ সব ভাস্কর্য, বিচিত্র আকৃতির  মিলেনিয়াম পপুলাস ইউফ্রেটিকা গাছের বন, লোকজ সংস্কৃতির বাগান, প্রাচীন গাছের বাগানসহ দারুণ আকর্ষণীয় কিছু বিষয়। এছাড়া রয়েছে চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও সেতুং এর একটি বিশাল ভাস্কর্য রয়েছে যা অনবদ্য শিল্প।

এই পার্কে আছে পাথরের বন। যেখানে প্রাচীন গাছ ফসিল হয়ে পাথরের রূপ নিয়েছে। রয়েছে উল্কা পিন্ড। এই উল্কা পিন্ডগুলো তুষার যুগে আলতাই অঞ্চলে পড়েছিল।

এই পার্কে গেলেই চোখে পড়বে স্থানীয় লোকশিল্পের জাদুঘর। যা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর। সিনচিয়াং চীনের রেশমপথের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেই প্রাচীন সিল্করোড সংস্কৃতির নিদর্শন নিয়ে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর।

পার্কটির একটি আকর্ষণীয় দিক হলো এখানে বিশাল একটি হর্স ক্যাম্প বা ঘোড়ার আস্তাবল ও পার্ক রয়েছে। এই ঘোড়ার ক্যাম্পে রয়েছে বিশেষ প্রজাতির ঘোড়া আখাল-থেকে। এটি মধ্য এশিয়ার এক বিশেষ ঘোড়ার জাত। দ্রুতগতির এই ঘোড়া যেমন বুদ্ধিমান তেমনি ছুটতেও পারে দীর্ঘসময় ধরে। বিশ্বে এই ধরনের মাত্র ৩১০০ ঘোড়া আছে। এখানে আরও আছে আদিম বুনো ঘোড়ার প্রজাতি। ইকুস ফেরুস নামের এই ঘোড়ার প্রজাতি হলো বিশ্বের আধুনিক গৃহপালিত ঘোড়ার পূর্বপুরুষ। আকারে ছোট, মজবুত পা, পাতলা লেজ ও কেশরযুক্ত এই ঘোড়ার প্রজাতি খুবই বিরল।

ঘোড়ার ক্যাম্পটির নাম ‘ফারগানা। মধ্যএশিয়ার ফারগানা রাজ্যে জন্ম নিয়েছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর। মধ্যএশিয়া ও সিনচিয়াংয়ের সংস্কৃতিতে ঘোড়ার রয়েছে এক বিশেষ স্থান।  এ সম্পর্কে জানা যাবে এই পার্কের জাদুঘরে। পার্কের ভিতরে রয়েছে ঘোড়ার অসাধারণ সব ভাস্কর্য। ঘোড়ার ক্যাম্পে ঘোড়ায় চড়ার সুযোগও রয়েছে। মিশুরা ছোট ঘোড়ায় আর বড়রা বড় ঘোড়ায় চড়তে পারবেন। এখানে স্থানীয়দের জন্য ঘোড়ায় চড়া শেখানোর জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাও ।

যারা একটি পার্কে এসে অনেক কিছু উপভোগ করতে চান তাদের জন্য এই পার্ক হতে পারে আদর্শ গন্তব্যস্থল। অনন্য  অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সিনচিয়াং এনসিয়েন্ট ইকোলজিকাল পার্কের যেন জুড়ি নেই।

প্রতিবেদন –শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী