চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার আগে, কুয়াংতং প্রদেশের শুনতে এলাকার অর্থনীতি নির্ভর করতো কৃষি, মত্স্য ও টেক্সটাইল শিল্পের ওপর। কিন্তু সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর, শুনতে এলাকার শিল্পে পুরোপুরি পরিবর্তন ঘটে; বিশেষ করে, বাড়িতে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র উত্পাদনের ক্ষেত্রে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে শুনতে এলাকা 'চীনের আবাসিক আসবাবপত্র নগর' খেতাব লাভ করে। মাইডি, হাইসেন্স ও গালেনজসহ বিভিন্ন বিখ্যাত হোম অ্যাপ্লায়েন্স ব্র্যান্ডের কারখানা শুনতে এলাকায় অবস্থিত। শুনতে এলাকার হোম অ্যাপ্লায়েন্স উত্পাদনের সামর্থ্য অগ্রণী শিল্প নকশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
২০১০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চীনের বৃহত্তম শিল্প ও নকশা ঘাঁটি শুনতে বেইজিয়াওতে খোলা হয়। শুনতে শিল্প ও নকশা ঘাঁটি চুচিয়াং ব-দ্বীপ এলাকার শিল্প ও শহরের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
শুনতেতে কুয়াংতং প্রদেশের শিল্প ও নকশার ঘাঁটি নির্মাণের কারণ সম্পর্কে প্রদেশের শিল্প ও নকশা ঘাঁটি'র চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কমিটির সম্পাদক স্যিয়াও চি ফেং বলেন, 'ঘাঁটিটি শুনতে এলাকার বেইজিয়াও থানায় অবস্থিত। চীনে শুনতেকে হোম অ্যাপ্লায়েন্স উত্পাদনের নগর' বলে আখ্যায়িত করা হয়। এলাকাটি কৃষিনির্ভরতা কাটিয়ে শিল্পনির্ভর হয়ে উঠেছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার প্রথম দিকে আমরা থানার প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিকারের সংস্কার করেছিলাম। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা মাইডি ও গেলেজসহ ধারাবাহিক বিখ্যাত ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছি। বিশেষ করে বেইজিয়াও থানায় সম্পূর্ণ ও অগ্রণী হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্প রয়েছে। এটি হল কুয়াংতং শিল্প ও নকশা ঘাঁটি এখানে নির্মাণের কারণ।'
স্যিয়াও চি ফেং বলেন, কুয়াংতং শিল্প ও নকশা ঘাঁটি ২০০৮ সালে খোলা হয়। সে বছর বেইজিয়াও থানার শিল্প উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি, যা ছিল তখনকার চীনের একটি শহরের মান। শুনতে এলাকায় আগে প্রধান শিল্প ছিল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প। নিজের ব্র্যান্ড ও নকশা ছিল না। সেজন্য আগে শুনতে'র প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্প-চেইনে নিম্ন পর্যায়ে ছিল। কিন্তু নকশা শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল। সেজন্য শুনতে শিল্পের নকশার মাধ্যমে কাঠামো পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে থাকে। শুনতে একদিকে গবেষণা ও বিক্রির ব্যবস্থা উন্নত করে, অন্যদিকে আঞ্চলিক উচ্চমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।
শিল্প নগর উন্নয়নের সংস্কার ও পরিকল্পনা অপারেশনসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, কুয়াংতং থংথিয়ান বিনিয়োগ পরিচালনা কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাদাম ফেং চিয়া নিং বলেন, 'গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে এখানে মাত্র একটি টেক্সটাইল কারখানা ছিল। কিন্তু বর্তমানে শুনতে হল একটি শিল্প ঘাঁটি। আমরা সম্পদ সমন্বয় ও সংযুক্ত করার মাধ্যমে বিনিয়োগ সংগ্রহ করি। বর্তমানে শুনতে আঞ্চলিক শিল্প ব্র্যান্ড, প্রতিষ্ঠান ও ডিজাইনার প্রশিক্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কার্যালয় ভবন ছাড়াও আমরা শিল্প নকশা যাদুঘর, বিজ্ঞান গবেষণালয় ও আন্তর্জাতিক নকশা কেন্দ্র নির্মাণ করেছি।'
ফেং চিয়া নিং বলেন, শিল্প ঘাঁটিতে ছয়টি গণসেবার প্ল্যাটফর্ম নির্মিত হয়েছে। প্ল্যাটফর্মগুলো শিল্প, তথ্য ও প্রযুক্তির গবেষণা, ব্র্যান্ডের প্রচার, প্রতিভাবান ব্যক্তি সংগ্রহ, সাফল্যের পরিবর্তন এবং বাজারের বাণিজ্যের জন্য ধারাবাহিক সেবা সরবরাহ করে।
১০ বছরের প্রচেষ্টায় কুয়াংতং শিল্প ও নকশা ঘাঁটিতে ৮ হাজার ডিজাইনার এবং ২৫০টি প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়েছে। এখানে শুধু পণ্য নয়, বরং প্রতিভাবান ব্যক্তি ও গণসেবা সৃষ্টি হয়। এ সম্পর্কে কুয়াংতং শুনতে শিল্প ও নকশা গবেষণালয়ের উপ প্রধান ও প্রধান প্রকৌশলী রেন স্যিয়াও লং বলেন, 'আমাদের এখানে রাজনীতি, প্রতিষ্ঠান, পণ্ডিত ও গবেষণা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আমাদের ১২০ জনেরও বেশি কর্মী নিয়ে গঠিত বিজ্ঞান গবেষণা দল আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করি। নিজস্ব গবেষণার পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা শিল্পায়ন ও সম্পত্তি অধিকারের সমন্বিত উন্নয়ন করি। বর্তমানে আমাদের গবেষণালয় কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছি।'
স্যিয়াও চি ফেং বলেন, নতুন শিল্পে নতুন প্রতিভাবান ব্যক্তি দরকার। নতুন প্রতিভাবান ব্যক্তিরা নতুন নগর নির্মাণ করতে পারেন। নতুন নগরে আধুনিক সেবাব্যবস্থা গড়ে তোলেন তাঁরা।
ইয়ংআই পেনশন পণ্য উত্পাদন কোম্পানি শুনতেতে নির্ভুল অবকাঠামোর জন্য এখানে কারখানা নির্মাণ করেছে। এ সম্পর্কে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ছুই জিং স্যুয়ে বলেন, 'কুয়াংতং শিল্প ও নকশা নগরে নকশার মাধ্যমে উত্পাদিত শিল্পের উন্নয়ন ও পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা হয়। এটি হল আমাদের এখানে কারখানা নির্মাণের কারণ। এখানে অবকাঠামো নির্ভুল। এখানে সম্পূর্ণ পণ্য সরবরাহ চেইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও নগরে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও নব্যতাপ্রবর্তনের সুযোগ বেশি।'
নকশা ও নব্যতাপ্রবর্তন উন্নয়নের পাশাপাশি কুয়াংতং শিল্প ও নকশা নগর ইতিবাচকভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। নগরটি জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ দশটিরও বেশি দেশের বিশেষজ্ঞ ও গ্রুপের সঙ্গে সহযোগিতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি নগরটি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি চীন-দক্ষিণ কোরিয়া কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। নগরটি জার্মানির সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মাদাম ফেং চিয়া নিং আশা করেন, আরও বেশি চীনা ডিজাইনার বিদেশে গিয়ে অগ্রণী নকশার জ্ঞান নিয়ে দেশে ফিরে আসবেন। (ছাই/আলিম)