‘৩৮২০’ কৌশল কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে? এর উত্তরটি চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে অবিচল থাকা
2024-01-22 16:32:57

জানুয়ারি ২২: ‘৩৮২০’ কৌশলগত প্রকল্প হচ্ছে চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফুচৌ শহর উন্নয়নের জন্য তত্কালীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি’র) ফুচৌ শহর কমিটির সম্পাদক সি চিন পিংয়ের নির্ধারিত একটি ২০ বছরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কৌশলগত নকশার ধারণা। এটি ফুচৌ স্থানীয় উন্নয়নের একটি সুন্দর ব্লুপ্রিন্ট। ‘৩৮২০’ কৌশলগত প্রকল্প ১৯৯২ সালে সিপিসি’র তত্কালীন ফুচৌ কমিটির সম্পাদক সি চিন পিং প্রস্তাব করেন। এর অর্থ হল ফুচৌ-এর অর্থনীতিকে একটি বড় স্তরে আনতে তিন বছর সময় লাগবে, অর্থাৎ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। আট বছরের মধ্যে ফুচৌ চীনের একটি আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে এবং ২০ বছরের মধ্যে অর্থাত্ ২০১০ সাল পর্যন্ত, ফুচৌ এশিয়ার  মধ্যম সারির উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানে পৌঁছাবে। এটি কিভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে? এর উত্তর হল, কমরেড সি চিন পিং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ গভীরভাবে বাস্তবায়নের ধারণা দিয়েছেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমি এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

 

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ হচ্ছে ‘৩৮২০’ কৌশলগত প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। ফুচৌ একটি প্রবাসীদের শহর। ৪০ লাখেরও বেশি চীনা প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। প্রবাসীদের জন্মস্থানে পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে কমরেড সি নিজস্ব প্রতিনিধিদল নেতৃত্ব করেছেন।

সব প্রবাসীদেরকে জন্মস্থানে ফিরে শিল্প পার্ক এলাকা নির্মাণ করতে উত্সাহ দেন কমরেড সি। সিপিসি’র তত্কালীন ফুছিং কমিটির সম্পাদক লিয়ান চি সুয়ান বলেন, ‘কমরেড সি বলেন যে, জন্মস্থানে ত্রাণ-সামগ্রী পাঠানো যেন স্থানীয় অধিবাসীদেরকে ডিম দেওয়া, ডিম খাওয়া শেষ হলে, কি করবেন? সমস্যাটি সমাধান করতে হবে না। কিন্তু শিল্প পার্ক এলাকা প্রতিষ্ঠিত হলে, স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য যেন একটি মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা হবে। তাহলে ডিম প্রতিদিন খেতে পারবে এবং আমাদের জীবনও দিন দিন ভাল হয়ে উঠবে’।

 

প্রবাসী চীনারা কমরেড সি’র কথা শুনে রাজি হন। বহু আলোচনার পর ৫ লাখ বর্গকিলোমিটার ‘ইউয়ান হুং’ বিনিয়োগের এলাকা নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি চীন ও ইন্দোনেশিয়ার ‘দু’দেশের পার্কের’ পূর্বসূরী, এটি চীনে সবার আগে ‘প্রবাসীদের’ তৈরি উন্নত এলাকার মধ্যে অন্যতম।

দেশে-বিদেশে আধুনিক শহরগুলোর সঙ্গে বিনিময় অধিক থেকে অধিকতর বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুচৌ শহরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ বেশ দুর্বল ছিল। সেসময় ফুচৌ শহরে বেসরকারি বিমানবন্দর ছিল না, ব্যবসায়ীরা ফুচৌ আসতে পারতো না, ফুচৌ’র সামগ্রীও বাইরে যেতে পারতো না, আর চীনে বেসরকারি বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল না।

সিপিসি’র ফুচৌ শহরের তত্কালীন উপ-সম্পাদক ফাং ছিংইয়ুন বলেন, ‘কমরেড সি বলেন যে, বিমানবন্দর প্রকল্পটি সমাধান না হলে, ফুচৌ শহরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হবে। আমাদের কাজ করতে হবে যে, নিজেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করতে হবে।’

সেসময় চীনের জাতীয় কার্যক্রমে ফুচিনে বিমানবন্দর নির্মাণের কোন পরিকল্পনা ছিল না। ফুচৌ নিজেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাঁচ বছরের মধ্যে ‘ছাংল্য’ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৯৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের চাহিদা বাড়ানোর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কমরেড সি আবারো ‘৩৮২০’ কৌশলগত প্রকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী সার্বিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণকাজ এগিয়ে নেন। এর মধ্যে রয়েছে গভীর জলে টার্মিনাল, হাইওয়ে এবং শহুরে ফ্রিওয়ে প্রভৃতি।

২০১০ সাল নাগাদ, ‘৩৮২০’ কৌশলগত প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। ফুচৌ আঞ্চলিক উত্পাদনের মোট পরিমাণ ১৯৯২ সালের ১৫ বিলিয়ন ইউয়ান থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১০ সালে ৩২৪.২৬৫ বিলিয়ন ইউয়ান। গড় বার্ষিক বৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। শহর ও গ্রামের অধিবাসীদের মাথাপিছু নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের পরিমাণ পৃথক পৃথকভাবে ৯গুণ এবং ৬.৭গুণ বেশি।

বিগত পাঁচ বছরে, ফুচৌ শহরে আমদানি ও রপ্তানির মোট পরিমাণ ২৫০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। নতুন বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার, ফুচৌ’র বাণিজ্যিক অংশীদার ২ শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। (ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)