চীন-নির্মিত নাইজেরিয়ার রেলপথ ভ্রমণকারীদের প্রথম পছন্দ
2024-01-22 13:58:53

নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর লাগোসে সম্প্রতি সালোদিন পরিবারের ছয় সদস্য দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইবাদন শহরগামী একটি ট্রেনে চড়েন। পরিবারের বড় ও ছোট সবার হাসি নতুন বছরের ভ্রমণের প্রত্যাশায় পূর্ণ। সালোদিন আনন্দচিত্তে স্ত্রীর সঙ্গে এবারের ভ্রমণ নিয়ে আলাপ করেন। চার বাচ্চা উত্তেজনার সঙ্গে জানালার বাইরে তাকায়। এবারের ট্রেন ভ্রমণের মাধ্যমে ট্রেন লাইনের দুপাশের দৃশ্য উপভোগ করার প্রত্যাশা তাদের। তিনি বলেন, “ছুটিতে আমি পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ট্রেন ভ্রমণ করি। আমি এ রকম অভিজ্ঞতা খুব উপভোগ করি।”

‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’র আওতায় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি)-নির্মিত লাগোস-ইবাদন রেলপথ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ২০২১ সালের জুনে। এ রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৫৭ কিলোমিটার এবং এর শাখা লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার। ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে সক্ষম এ রেলপথে আধুনিক রেলপথের মানদণ্ড মানা হয়েছে।

চলতি বছরের নববর্ষের ছুটিতে ভ্রমণের জন্য অনেক নাইজেরিয়ান সেখানে চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত রেলপথকে প্রথম পছন্দ-তালিকায় রাখেন। লাগোস-ইবাদন রেলপথ ছাড়া রাজধানী আবুজা থেকে উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাদুনা পর্যন্ত রেলপথও সিসিইসিসি নির্মাণ করেছে, যেটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

“রেল একটি সুলভ ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা এবং অনেকের জন্য একটি বিকল্প যোগায়।” আবুজা-কাদানা রুটে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে ভ্রমণকারী যাত্রী ওমোতোলা ফায়েহুন সাংবাদদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা বলেন। বিমানের তুলনায় রেল ভ্রমণে ব্যয় কম। আবার সড়ক পরিবহনের চেয়ে রেলপথ অনেক বেশি নিরাপদ।

আরামদায়ক ভ্রমণে যাত্রীরা ট্রেনে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি এসি বগিতে তিনটি করে টিভি স্ক্রিন আছে। প্রত্যেক বগির টয়লেট পরিষ্কার এবং সাজ-সরঞ্জাম সম্পূর্ণ। জানালার পাশের সিটে বৈদ্যুতিক চার্জিং পোর্ট আছে। এছাড়া আকস্মিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ট্রেনে চিকিত্সা ও নিরাপত্তাকর্মী আছেন।

অ্যাবিওকুটার ব্যবসায়ী মাইকেল এগবো ট্রেনের সুবিধা ও নিরাপত্তার প্রশংসা করেন। তাঁর মতে রেলপথ পর্যটন শিল্প ও বাণিজ্য বেগবান করবে।

অতীতে তিনি অনেকবার পরিবারের সদস্যের সঙ্গে গাড়িতে করে প্রতিবেশী পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোতে গেছেন। তাঁর গাড়ি একবার একটি নির্জন জায়গায় আটকে যায়। কল্পনা করা যায়, গভীর রাতে একটি পরিবার ঘন ঘন জঙ্গলে আটকা পড়েছে, যেখানে কোন টেলিফোন নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংকেত নেই!

তিনি বলেন, সে অ্যাডভেঞ্চারের পর পরিবারের হৃদয় এখনও ভয়ে দোলে। এখন তিনি ট্রেনে করে ছুটি কাটাতে যান। “আমি কিছুদিন ধরে ট্রেনকে পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছি। ট্রেন যাত্রা মসৃণ ও দ্রুত।”

সিসিইসিসি নাইজেরিয়া কোম্পানি লিমিটেডের অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কুও ছেন বলেন, “চালু হবার কয়েক বছরে আমাদের নির্মিত নাইজেরিয়া রেলপথ আফ্রিকার বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশটির জন্য প্রাণশক্তি যোগাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমরা নাইজেরিয়ায় ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’র বাস্তবায়ন আরও গভীর করবো।” (প্রেমা/রহমান)