বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ৫৪তম সম্মেলন ১৫-১৯ জানুয়ারি সুইজারল্যাণ্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে ২ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি যোগ দেন ফোরামের বার্ষিকে এই সম্মেলনে। এতে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং। ‘আস্থা পুনরুদ্ধার’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত এবারের সম্মেলনে অংশ নেয়া বিশ্বনেতাদের মুখে ছিল চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও অগ্রগতির প্রশংসা। ডাভোস সম্মেলনে, ঘুরেফিরে একটা কথাই উচ্চারিত হয়েছে, চীনের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্ববাণিজ্য ও বিশ্ব-অর্থনীতি।
মঙ্গলবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং, ডাভোস সম্মেলনে যোগ দেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াব সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় বক্তব্যে লি ছিয়াং বলেন, এই বার্ষিক সভার প্রতিপাদ্য হল ‘আস্থার পুনরুদ্ধার’, যা জনগণের উদ্বেগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি আস্থা পুনরুদ্ধার, সহযোগিতা জোরদার, ও বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয় প্রক্রিয়া জোরদার করাসহ ৫-দফা পরামর্শ দেন।
২০২৩ সালে চীনের ৫.২ শাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে লি বলেন, চীনা বাজার বেছে নেওয়ায় কোনো ঝুঁকি নেই, বরং এটি একটি সুযোগ। তিনি চীনে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে সারা বিশ্বের কোম্পানিগুলোকে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানান। চীন একটি বাজার-ভিত্তিক প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম-ডব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াব, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক গোজি ওকোনজো-ইওয়েলাসহ আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বনেতারা চীনের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
ক্লাউস শোয়াব বলেন, অব্যাহত উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি এবং গতিশীলতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার প্রজ্ঞা চীনের রয়েছে।
চীন এখন প্রযুক্তির অনেক খাতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে ডব্লিউইএফ নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘চীন এখন জিডিপিতে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করছে।
সম্মেলনের ফাঁকে চীনা গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ক্লাউস ২০১৭ সালে ফোরামের বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণের উল্লেখ করে বলেন, তার ভাষণে মূল্যবান দায়িত্ববোধ ফুটে ওঠে। চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আস্থার ভিত্তিতে, মতৈক্য সৃষ্টি করে, বিশ্ব প্রশাসনব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করে তুলবে এবং আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চীন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন ডব্লিউটিও মহাপরিচালক গোজি ওকোনজো-ইওয়েলা।
ওকোনজো বলেন, চীন এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে দেশটি জোরালো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
২০ বছরেরও বেশি আগে ডব্লিউটিও’তে যোগদানের পর থেকে, চীন বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে ওকোনজো বলেন, যা বিশ্বের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখছে।
বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের মূল ভূমিকার কথা তুলে ধরে ওকোনজো-ইওয়েলা বলেন, ‘চীনের ক্ষেত্রে যা কিছু ঘটুক না কেন তা বিশ্বকে প্রভাবিত করে এবং সে কারণেই চীনা অর্থনীতির ভালো করাটা সবার স্বার্থের অনুকূলে।
বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষায় চীনের ভূমিকার প্রশংসা করে ওকোনজো- বলেন, ‘ডব্লিউটিওর দৃষ্টিকোণ থেকে চীন বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং বহুপাক্ষিকতার শক্তিশালী সমর্থক।’
সুইস-এশিয়া চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট উরস লুস্টেনবার্গার বলেন, ‘চীনা অর্থনীতির পারফরম্যান্স দারুণ আকর্ষণীয়। এটি বিশ্বের প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। আপনার যদি একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি থাকে এবং পণ্যটা যদি বৈশ্বিক হয়, তবে চীনে আপনার উপস্থিতি না থাকা মানে আপনি অনেক কিছু হারাচ্ছেন।’
সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, তার দেশের সঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চীনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
চিলির অর্থনীতিবিদ মার্সেলা ভেরা বলেছেন, ‘চীন সফলভাবে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে উন্নয়নের সুবিধা ভাগাভাগি করার একটা ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা ব্যুরো, সিএমজি বাংলা।