চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫২
2024-01-20 15:32:41

১. ঢাকায় চীনের বর্ণিল বসন্ত-উৎসব গালা

চীনা শিল্পীদের বাদ্যযন্ত্রে ভেসে আসছে বাংলাদেশের

আবার একই মঞ্চে, একই সুরে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বের বার্তা

 

দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা। দ্য ২০২৪ "ভয়েসেস অফ স্প্রিং, গোল্ডেন ড্রিমস" শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয় ক্রস বর্ডার স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল ইভনিং গালা। গেল বুধবার  সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে যৌথভাবে এই গালার আয়োজন করে ইয়ুননানের প্রাদেশিক সরকার এবং বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস।

চীনের ইয়ুননান প্রদেশ থেকে আসা এক ঝাঁক শিল্পীর ঐতিহ্যগত নাচ, গান, অ্যাক্রোবেটিক্স, বাদ্যযন্ত্র ও জাদুসহ মনোমুগ্ধকর নানা পরিবেশনায় মুখরিত হয় গোটা আয়োজনস্থল। পাশাপাশি ছিলো বাংলাদেশের খুদে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

 

এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত চীনা শিল্পীরা। 

 ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক পরিবেশের গভীর আমেজ আছে। এখানকার আবহাওয়া বেশ ভালো। আমি বাঙালীদের মুখের হাসি পছন্দ করেছি। কারণ তা দেখে আন্তরিকতা প্রতিফলিত হয়।’   

 

তাদের কথায় উঠে আসে চীন-বাংলাদেশের মৈত্রীর বার্তা।

 ‘আমার নাম সিয়াং ছাও ছে। আমি ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিং সিটি কলেজের একজন শিক্ষক।’ 

‘বাংলাদেশী জনগণ আমাদেরকে আতিথেয়তা করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আশা করি, চীন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান আরো জোরদার হবে।’

 

বিআরআই উদ্যোগে সমর্থনকারী দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ বাংলাদেশ উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে চীনের ইয়ুননান প্রভিন্সিয়াল কমিটি অব সিপিসির পাবলিসিটি বিভাগের ভাইস মিনিস্টার ও ইয়ুননান প্রভিন্সিয়াল সিভিলাইজেশ্যন অফিসের ডিরেক্টর ফেং বিন,   দুই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কথা জানান।

 

“কুটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ও চীন পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া ঠিক রেখে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।“

চীনা বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন,

এটি একটি নতুন সূচনাকে রিপ্রেজেন্ট করে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। এটি নতুন সরকার,নতুন ভবিষ্যৎ, নতুন সহযোগিতার জন্য। এমন আয়োজন মানুষে মানুষে যোগাযোগ, তৃণমূলের সংস্পর্শকে জোরারোপ করে এবং পরস্পরের বুঝাপড়াকে বৃদ্ধি করে। তাই এটি ভবিষ্যৎ সহযোগিতায় নতুন সুযোগ তৈরি করে।

 

  

বসন্ত উৎসব বা স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল চীনের সবচেয়ে বড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। আসন্ন এই উৎসবকে ঘিরে এই ধরনের উদ্যোগ শুধু দর্শকদের বিনোদনই দেয়না দুই দেশের বন্ধন সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে সেতু হিসেবেও কাজ করে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।  

 

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী /সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

 

২. চীনের ৮ হাজার বছর আগেকার হাড়ের বাঁশি

চীনের খ্যাতিমান বাঁশির কারিগর তিন ইনকংয়ের বাড়ি পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌয়ের চংথাই এলাকার চিচিং গ্রামে। বাঁশের বাঁশি তৈরির জন্য খ্যাতি রয়েছে গ্রামটির। সারা দুনিয়ায় তৈরি বাঁশের বাঁশির ৮০ ভাগ তৈরি হয় এ গ্রামে। এর রয়েছে ২ হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য।

 

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা বাঁশি তৈরির কাজটিতে ছোটবেলাতেই পরিপক্ক হয়ে ওঠেন তং।

মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের উইয়াং কাউন্টির চিয়াহুতে ৮-৯ হাজার বছর আগেকার হাড়ে তৈরি বাঁশিটি আবিষ্কৃত হবার পর, সারা দেশের বাঁশির কারিগররা এটি তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগেন।

তাদেরই একজন তং অক্লান্ত চেষ্টায় পুনরায় তৈরি করতে সক্ষম হন-শুধু চীন নয়, বিশ্বের আদিতম বায়ুনির্ভর এ সংগীত যন্ত্রটি।

প্রাচীন চীনা কারিগররা ছয় ছিদ্র বিশিষ্ট বাঁশিটি তৈরি করতেন লালঝুঁটির সারসের হাড় দিয়ে। কিন্তু এ পাখিটি বর্তমানে চীনে জাতীয়ভাবে সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় থাকায় বেকায়দায় পড়েন তং।

হাল না ছেড়ে এর বদলে তিনি ময়ূর এবং টার্কির হাড় দিয়ে বাঁশি তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং ২০২১ সালে চিয়াহু হাড়ের বাঁশি তৈরিতে  সফল হন।

তং বলছিলেন তার সেই প্রচেষ্টার কথা:

আমি টানা দু’মাস এ কাজটি করেছি। যখন আমি বাঁশিটি তৈরিতে সফল হলাম তখন আমার আনন্দের সীমা ছিল না। রাত তখন ২টা। আমার ছেলেমেয়েরা নিচের ঘরে ঘুমিয়ে আছে। আমি টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম এবং বাঁশিটা বাজাতে শুরু করলাম। বাঁশির সুরটি ছিল প্রাচীন সময়ের মতো, তাতে ছিল প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির মোহনীয়তা।

এমন একটি শ্রম সাপেক্ষ ও অলাভজনক কাজে কেন উৎসাহী হলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তং বললেন চীনা সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের কথা:

অনেকই আমাকে এ প্রশ্ন করেন, আর্থিক লাভ না থাকলেও কেন আমি বাঁশিটি তৈরিতে এত সময় ব্যয় করলাম। তারা বুঝতেই পারছিলেন না কেন আমি এটা করছি। আমি তাদের বললাম- আমি আসলে এমন একটি কাজের মাধ্যমে আমার জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলছি। আমরা মানুষেরা মৃত প্রাণীর হাড়েও সুরের সঞ্চার করতে পারি। আমরা সেই আদি সুরকে পুনরায় সৃষ্টি করেছি মানুষের উপভোগের জন্য। এটি আমার জীবনকে অর্থবহ করেছে।

শুধু হাড়ের বাঁশির পুনরুজ্জীবন নয়, চীনের ঐতিহ্যবাহী বার্নিশ করা বাঁশি তৈরিতেও সুদক্ষ তং। তাঁর এখন একটাই চাওয়া চীনের প্রাচীন এবং আধুনিক বাঁশির সুরবৈচিত্রের সম্মিলন, প্রচার এবং সংরক্ষণ। এ নিয়ে বাদবাঁকি জীবন কাজ করে যাবেন চীনের খ্যাতিমান এই বাঁশিওয়ালা। 

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

----------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।