সুখী হওয়ার পথে পিছিয়ে থাকবে না কেউ
2024-01-19 10:23:12


 

একটি পাহাড়ের পর আরেকটি পাহাড়। একটি বাঁক পেরোতেই আরেকটি বাঁক। ব্রেকের পর ব্রেক। চীনের সিজাংয়ের চিয়া ইং গ্রামে যেতে চাইলে এমন পরিস্থিতেই পড়তে হয়। এখানকার সব গাড়িচালককেই পাহাড়ী অঞ্চলে কুয়াশার মধ্যে খাদের কিনারে দু-তিন ঘণ্টা ধরে দিতে হয় দারুণ এক পরীক্ষা।

 

সিজাংয়ের লি চি শহরের ওয়া লুং উপজেলায় বিখ্যাত তুষারে ঢাকা মেইলি পবর্তমালার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত চিয়া ইং গ্রাম। আঁকাবাঁকা পথ ও অপূর্ব ভূদৃশ্যের কারণে গ্রামটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভ্রমণপ্রেমীদের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে চিয়া ইং।

 

উপর থেকে চিয়া ইং গ্রাম দেখলে দেখা যাবে, আলপাইন তৃণভূমির মধ্য দিয়ে গ্রামটি দুই ভাগ হয়েছে। এক ভাগে বিশাল বনাঞ্চল, অনাবিল হ্রদ আর তুষারে ঢাকা সুবিশাল পাহাড়। অন্য ভাগে চোখে পড়বে শিশুদের খেলাধুলার দৃশ্য, সিজাং-ঘরানার বাড়িঘর এবং চমরি গাইয়ের চারণভূমি। এককথায় মনোরম, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ একটি দৃশ্যপট।

 

এমন শান্তিময় সুন্দর জীবন কিন্তু সহজে তৈরি হয়নি। লু পু গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক চা লা বলেন, ‘চিয়া ইং গ্রামে আগে ১২টি পরিবার ছিল। পরে দূরত্বের কথা ভেবে কিছু গ্রামবাসী পাহাড়ের পাদদেশে চলে যায়। তাতে গ্রামটিতে পরিবারের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪টিতে। গত দুই বছরে যে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে এখন এখানে আছে ৬টি পরিবার।’

এমন শান্তিময় সুন্দর জীবন কিন্তু সহজে তৈরি হয়নি। লুং পু গ্রামের সিপিসি’র সম্পাদক চা লা বলেন, ‘চিয়া ইং গ্রামে আগে ১২টি পরিবার ছিল। পরে দূরত্বের কথা ভেবে কিছু গ্রামবাসী পাহাড়ের পাদদেশে চলে যায়। তাতে গ্রামটিতে পরিবারের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪টিতে। গত দুই বছরে যে উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে এখন এখানে আছে ৬টি পরিবার।’

 

দূরত্বের প্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী তা ওয়া চিয়াং ছুনের মনে পড়ে যায়—২০ বছর আগে ঘোড়ায় চড়ে উপজেলায় যেতেন তিনি। তখন ৫০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে তার লাগতো এক দিন। ২০১৬ সালে গড়ে উঠেছে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। এতে বিনিয়োগ হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ইউয়ান। সাড়ে ৩ মিটার চওড়া সড়কটির কারণে স্থানীয়দের জীবনমানও বদলেছে অনেকখানি।

 

তা ওয়া চিয়াং ছুন বলেন, ‘আগে আমরা পাহাড়ি ভেষজ, মাশরুম বিক্রি করে উপার্জন করতাম। সময়টা কঠিন ছিল। ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়তে থাকে। প্রতিটি পরিবার চালু করে ছোটখাট হোটেল ও রেস্তোরাঁ। এখন বছরের মে ও জুনে পর্যটনের ভরা মৌসুম। মাঝেমধ্যে হোটেলের কক্ষও ফাঁকা থাকে না।’

 

চীন সরকারের সহযোগিতায় গ্রামবাসীরা তৈরি করেছ গ্রিনহাউস। সেখানে বাঁধাকপি, মুলা ও পেঁয়াজ কলির চাষ হচ্ছে। তা ওয়া চিয়াং ছুন বলেছেন, ‘এখন জীবন অনেক সুন্দর। শীতেও তাজা শাক-সবজি খেতে পারছি।’ উপার্জন বাড়াতে গ্রামবাসীরা এখন গ্রিনহাউসে মাশরুমও চাষ শুরু করেছেন তারা।

 

রেন জেন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছেন। অনলাইন ক্লাস শেষে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘আগে এ গ্রামে ইন্টারনেট ছিল না। যে কারণে কিছু শিক্ষার্থী ছুটির দিনেও গ্রামে ফিরতে চাইতেন না। এখন চায়না মোবাইল অ্যান্ড টেলিকম আশেপাশে অনেক সিগনাল টাওয়ার বানিয়েছে। এতে বেশ সুবিধা হয়েছে।’

 

এত সমৃদ্ধির পরও চিয়া ইং অধিবাসীরা কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব ভোলেননি। সোং লা পু বু গ্রামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিনি বনাঞ্চলে ফেলা বর্জ্য পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেরই এখানকার পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আছে। পরিবেশ নষ্ট হলে কেউ এখানে আসতে চাইবে না।’

 

গ্রামের দৃশ্য উপভোগের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ স্টেশন তৈরি করেছে গ্রামের রেন ছিং পরিবার। সেখানে ঢুকলেই চোখে পড়বে পরিবারটির সবাই চুলার চারপাশে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা এখানে ঘরের দেয়ালে লিখছেন মনের কথা। কিছু পর্যটক চিয়া ইং গ্রামের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘এখানকার দৃশ্য অনেক সুন্দর। গ্রামবাসী অনেক উদ্যমী। আগামীতে আবার আসবো।’

 

তুষারাবৃত মেলি পাহাড়ের পাদদেশের চিয়া ইং গ্রামে কেবল ৬টি পরিবার থাকলেও সুখী হওয়ার পথে একজনও পিছিয়ে পড়েননি। গ্রামীণ জীবনের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে তারা প্রত্যেকেই রাখছেন চমৎকার অবদান।

 

রুবি/ফয়সল/রহমান