চীনা ফিল্ম-২০২৩
2024-01-17 15:33:18

২০২৪ সালের পহেলা জানুয়ারি চীনের জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর উদ্যোগে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, সদ্যসমাপ্ত ২০২৩ সালে চীনের চলচ্চিত্রের বক্সঅফিসের মোট আয় ছিলো ৫ হাজার ৪৯২ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি এবং চলচ্চিত্র দর্শকদের সংখ্যা ছিল ১২৯ কোটি ৯০ লাখ। সেগুলোর মধ্যে দেশীয় চলচ্চিত্রের বক্সঅফিসের আয় ছিল ৪ হাজার ৬শ’ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি, যা মোট বক্সঅফিস আয়ের ৮৩ দশমিক৭৭ শতাংশ।

‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ-২’ চলচ্চিত্রে এ শিল্পের নতুন অগ্রগতি ফুটে ওঠে, ‘ছাং আন’ এবং ‘ক্রিয়েশন অব দ্য গডস ১: কিংডম অব স্টোর্মস’সহ বিভিন্ন মুভি চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ ও প্রথাগত সাংস্কৃতিক বহন করে। ‘নো মো বেটস’ এবং ‘নেভার সে নেভার’সহ বাস্তবতাভিত্তিক মুভিগুলো দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ‘দ্য ভোলেনটিয়ার্স: টু দ্য ওয়ার’ এবং ‘বর্ন টু ফ্লাই’সহ মুলধারার মুভিগুলোতে মানসিক শক্তির অসাধারণ প্রদর্শনী দেখা যায়। চীনা চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সৃজনশীলতা বাড়ছে, চলচ্চিত্রের থিম বৈচিত্র্যময় হচ্ছে এবং মুভি বাজারের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ আশা করেন, আরও বেশি সৃষ্টিশীল মানুষ চীনা জাতির শ্রেষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে বাস্তব জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন এবং সৃষ্টির আরও বেশি উপাদান খুড়ে বের করবেন।

২০২৩ সালে চীনের চলচ্চিত্রের বক্সঅফিস আয়ের তালিকায় শীর্ষ ১০টি চলচ্চিত্রের সবগুলোই দেশীয় চলচ্চিত্র। এ প্রসঙ্গে চীনের কলা একাডেমির অধ্যাপক চি ফেই না বলেন, ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোতে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি ও জনগণের জীবন তুলে ধরা হয় এবং মুভিগুলোর মানও স্পষ্টভাবেই উন্নত ছিল। তিনি বলেন, “দেশীয় মুভিগুলোর বক্সঅফিসের আয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এতে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতি প্রতিফলিত হয় এবং সংস্কৃতির প্রতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও দর্শকদের আস্থাও বাড়ে।”

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বক্সঅফিস চলচ্চিত্রের মূল্যায়নের একমাত্র মানদণ্ড নয়। বিগত এক বছরে কিছু মুভি বক্সঅফিস আয়ের প্রথম দশটি স্থানে প্রবেশ করেনি, তবে সেগুলোতে নির্মাতাদের সক্রিয় অন্বেষণও ফুটে উঠেছে।

গত বছরে বসন্ত উত্সব এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটিসহ নানা বিশেষ সময়পর্বে চলচ্চিত্রের বক্সঅফিস আয় বেশ বাড়ে।

২০২৩ সালের পর থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরো সাপ্তাহিক ছুটির সময় ভালো চলচ্চিত্রের মুক্তিকে উত্সাহিত করছে। চীনের অনেক জায়গার চলচ্চিত্র বিভাগগুলো চলচ্চিত্রের টিকিটের দামে ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করছে এবং মুভি দেখার কুপন প্রদানের মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশে আরও দেশি দর্শকদের উত্সাহিত করছে।

২০২৩ সালের আগস্ট মাসে জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত চীনা মুভির নতুন শক্তিবিষয়ক ষষ্ঠ ফোরাম চীনের চিলিন প্রদেশের ছাংছুন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। কীভাবে চীনা চলচ্চিত্রের আরও সমৃদ্ধ উন্নয়নে অবদান রাখা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হন চীনের বিভিন্ন স্থানের তরুণ চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ-২’, ‘বর্ন টু ফ্লাই’, ‘লস্ট ইন দ্য স্টার্স’, ‘নো মো বেটস’, ‘হু ইস দ্য সাসপেক্ট’, ‘এন্ডলেস জার্নি’ - এক বছরে তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও চিত্রনাট্যকার একের পর এক দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞদের কাছে এসব তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালকদের শিল্পকর্মগুলো দারুণ হয়েছে। শাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাংহাই ফিল্ম একাডেমির অধ্যাপক লিউ হাই বোং বলেন, পাণ্ডুলিপি তৈরি করা কিংবা অডিওভিজ্যুয়াল ভাষার অভিব্যক্তি, যাই হোক না কেন, চীনা তরুণ চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের সৃষ্টির মান ক্রমশই পরিপক্ব হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২৩ সালে নতুন দেশীয় চলচ্চিত্রগুলো বিষয় অনুসন্ধানে অগ্রগতি অব্যাহত রাখে এবং দর্শকদেরকে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সততা ও উদ্ভাবন দেখিয়ে দেয়।

সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্র গত এক বছরে সভ্যতার মধ্যে বিনিময় ও পারস্পরিক অভিজ্ঞতার আদান-প্রদানে ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন আমদানিকৃত চলচ্চিত্র দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজারকে সমৃদ্ধ করেছে এবং দেশীয় চলচ্চিত্রগুলো বিদেশে সক্রিয়ভাবে চীনা সংস্কৃতির আকর্ষণ প্রদর্শন করেছে। ফলে চীন ও অন্যান্য দেশের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়ের আরও বিস্তৃত পথ খুলেছে।

বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় আমদানিকৃত চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের বেশি দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে গত বছরে। আমদানিকৃত মুভিগুলোর বক্সঅফিসের আয়ের দিক থেকে দেখা যায়, চীনা দর্শকদের মুভি উপভোগের চাহিদা আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে।

বিদেশে চীনা চলচ্চিত্রগুলো উল্লেখযোগ্য সাফল্যও অর্জন করেছে। ‘দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থ-২’ মুভিটি বিদেশের নানা শহরে মুক্তি পায় এবং চীনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-নির্ভর মুভির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। ‘ক্রিয়েশন অব দ্য গডস ১: কিংডম অব স্টর্মস’ মুভিটি ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শিত হয় এবং আরও বেশ কয়েকটি চীনা মুভি বিদেশের বড় পর্দায় আবির্ভূত হয়েছে।

তাছাড়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বা উত্সব আয়োজন এবং কান চলচ্চিত্র উত্সব ও মার্কিন চলচ্চিত্র বাজারে চীনা মুভির যৌথ বুথ স্থাপনের মাধ্যমে চীনা চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে বিদেশি চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানাশোনা গভীরতর হচ্ছে। কান চলচ্চিত্র উত্সব চলাকালে ‘চীনা চলচ্চিত্রের তরুণ ব্যক্তিদের রাত’ কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বেশি তরুণ চীনা চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের প্রবেশকে এগিয়ে যাওয়া এবং বিশ্বের বড় আকারের চলচ্চিত্র উত্সবে সাফল্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে।

এখন চীনা ও বিদেশি চলচ্চিত্র বিনিময়ের প্লাটফর্ম বিস্তৃত হচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম গোল্ডেন পান্ডা পুরস্কার সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহরে উন্মোচিত হয়। এটি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটককে বাহক হিসেবে পান্ডাকে সংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলাকে উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারিত একটি আন্তর্জাতিক প্রচার পুরস্কার।

চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ই মৌ বলেন, “ভালো শিল্পকর্ম একটি সেতু এবং বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগকারী মানুষের মতো। সবাই শিল্প ও সৌন্দর্য পছন্দ করেন এবং উপভোগ করেন এবং অনুপ্রেরণাদায়ক ও চিন্তায় পূর্ণ শিল্পকর্ম দেখতে পছন্দ করেন।”

লিলি/রহমান