জানুয়ারি ১৭: স্থানীয় সময় গতকাল (মঙ্গলবার) চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং, ডাভোস আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২৪ সালের বার্ষিক সভায় যোগদান করেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াব সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় লি ছিয়াং বলেন, এই বার্ষিক সভার প্রতিপাদ্য হল "বিশ্বাস পুনর্নির্মাণ", যা জনগণের উদ্বেগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। পারস্পরিক আস্থা নির্ভর করে মানবজাতির ভালো ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রত্যাশা এবং এর জন্য একসাথে কাজ করার ইচ্ছার ওপর। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যেমন উল্লেখ করেছেন, বিশ্ব অস্থিরতা ও পরিবর্তনের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, কিন্তু মানব উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাধারণ দিক পরিবর্তন হবে না; আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন ভবিষ্যতও পরিবর্তন হবে না। সকল পক্ষের উচিত তাদের কুসংস্কার ও মতভেদ দূর করা, একে অপরের সাথে আন্তরিকতার সাথে আচরণ করা, এবং পারস্পরিক আস্থা পুনরুদ্ধার করা।
সভায় লি ছিয়াং বিশ্বাস পুনর্গঠন, সহযোগিতা জোরদার, ও বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য ৫-দফা পরামর্শ দেন: প্রথমত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সমন্বয়-প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে, বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে হবে, এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সমন্বয়-প্রক্রিয়াকে আরও ভালোভাবে পরিচালিত করতে হবে; দ্বিতীয়ত, শ্রম ও সহযোগিতার আন্তর্জাতিক শিল্প বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরণ ও সহজীকরণের জন কাজ করে যেতে হবে, এবং বিশ্বব্যাপী শিল্প ও সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা ও মসৃণতা বজায় রাখতে হবে; তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য ও বৈষম্যহীন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, এবং উদ্ভাবনের উপাদানগুলোর প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করে এমন বাধা ভেঙে দিতে হবে; চতুর্থত, সবুজ উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, বিভিন্ন সবুজ বাধা দূর করতে হবে, যৌথভাবে সবুজ রূপান্তরকে উন্নত করতে হবে, এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সক্রিয়ভাবে সাড়া দিতে হবে; পঞ্চমত, উত্তর-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ‘এজেন্ডা ২০৩০’ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে, উন্নয়নের ব্যবধান কমাতে হবে, এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
লি ছিয়াং জোর দিয়ে বলেন, চীন এমন একটি দেশ যে তার প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করে এবং সর্বদা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে তা পূরণের চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিশালী প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। বিশ্ব পরিস্থিতি যেভাবেই পরিবর্তিত হোক না কেন, চীন বহির্বিশ্বের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করার মৌলিক জাতীয় নীতি অনুসরণ করে যাবে এবং বিদেশিদের জন্য নিজের দরজা আরও প্রশস্ত ও বিস্তৃত করবে।
তিনি বলেন, চীনা বাজার বেছে নেওয়ায় কোনো ঝুঁকি নেই, বরং এটা একটি সুযোগ। আমরা চীনে বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সারা বিশ্বের কোম্পানিগুলোকে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই। আমরা একটি বাজার-ভিত্তিক প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বক্তৃতার পর, লি ছিয়াং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বৈশ্বিক শাসন সম্পর্কে শোয়াবের প্রশ্নের উত্তর দেন; জনকেন্দ্রিকতা, সর্বজনীন সুবিধা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন; এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের দিকনির্দেশনা দেন। চীন সর্বদা বহুপাক্ষিকতাবাদের পক্ষের শক্তি বলে তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন।
এবার ইভেন্টগুলোতে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন দেশের অন্যান্য প্রতিনিধিসহ প্রায় ১৫০০ জন অংশগ্রহণ করেন। (জিনিয়া/আলিম/ফেই)