ড্রাগন-বর্ষ আসছে; ভোগ বাড়ছে চীনজুড়ে
2024-01-17 11:31:44


চীনের ঐতিহ্যবাহী পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১১ জানুয়ারি থেকে লা ইউয়ে বা বছরের শেষ মাস শুরু হয়েছে। এ সময় থেকে চীনারা ঐতিহ্যবাহী পঞ্জিকা অনুযায়ী নতুন বছরের জন্য নানান প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করে। বসন্ত উত্সব বা চীনা নববর্ষের জন্য প্রতিটি পরিবার কেনাকাটাসহ নানান ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে; ভোগ-বাজারে দেখা দেয় চাঙ্গাভাব।

 

বসন্ত উত্সবের সময় চীনারা লাল রঙের জিনিসপত্র দিয়ে বাড়িঘর সাজাতে পছন্দ করে; ব্যবহার করে লাল লণ্ঠন, লাল রঙের পেইন্টিং, ইত্যাদি। এবার নতুন বছর হবে ড্রাগন-বর্ষ। ড্রাগন আদলের নববর্ষের পেইন্টিং, লাল খাম এবং বসন্ত উত্সবের গাথাসহ নানান বস্তুর বিক্রি বাড়ছে দ্রুতগতিতে। চীনের ইউ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সিটি নববর্ষের পেইন্টিং, ওয়াল ক্যালেন্ডার এবং বসন্ত উত্সবের গাথা বিক্রির দিক দিয়ে চীনের বৃহত্তম কেন্দ্র। প্রতিদিন সারা চীন থেকে এখানে পরিবেশকরা আসেন বসন্ত উত্সবের জনপ্রিয় পণ্য কিনতে। জানা গেছে, এ বছর ইউ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সিটিতে এ ধরনের পণ্যের কেনাবেচা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

 

লাল রঙের জিনিস ছাড়াও, ফুল দিয়ে বাড়িঘর সাজানো চীনা মানুষের নতুন প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে ফুচিয়ান ও শানসিসহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশে উত্সবের ফুল বিক্রি বাড়ছে। ফু ছিং শহরের চিং ইয়াং জেলার একটি ফ্যালেনোপসিস ফুল চাষকেন্দ্রে নানান রঙের ফুল ফুটেছে। চাষের সময় থেকে শুরু করে ফুল ফোটা পর্যন্ত ৩ মাস সময় লাগে এ ফুলের এবং উত্সব উপলক্ষ্যে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুলগুলোর অন্যতম। এ বছর সাধারণ ফ্যালেনোপসিস ফুল ছাড়াও চিং ইয়াং জেলায় চাষ হয়েছে নানান নতুন প্রজাতির ফ্যালেনোপসিস ফুল। সেগুলো বিভিন্ন ক্রেতার চাহিদা মেটাচ্ছে। দু’বছর আগে এখানে মূলত লাল রঙের ফুল বিক্রি হতো, কারণ সবাই লাল রঙ পছন্দ করতেন; তবে, এখন নানান প্রজাতির ফুল বাজারে পাওয়া যায় এবং তার মধ্যে নিজের পছন্দেরটা বেছে নিতে পারেন ভোক্তারা।

 

যদি একটি জায়গায় সবকিছু কিনতে চান, তাহলে বসন্ত উত্সবের মেলায় যাবার পরামর্শ দেই। সম্প্রতি আমি বেইজিংয়ে একটি বসন্ত উত্সবসম্পর্কিত পণ্যমেলা ঘুরে দেখেছি। ওই দিন কোনো ছুটি ছিল না, অথচ মেলায় এতো ভিড় ছিল যে আমি হাঁটতেও পারছিলাম না! ৮০০০ বর্গমিটারের বড় প্রদর্শন হলে বুথ আর ভিড়ে পূর্ণ। এখানে মাংস, ফল, ফুল, শাকসবজি, সজ্জাসংক্রান্ত পণ্য, পোশাক, খেলনাসহ সব পাওয়া যায়। সুগার পেইন্টিং, কাগজ কাটাসহ নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রদর্শনও দেখা যায়। প্রবীণ বা শিশু নির্বিশেষে সবাই আনন্দের আমেজ উপভোগ করেন।

 

লোকজন মেলায় ঘুরতেও পছন্দ করে, শুধু কেনাকাটা করা তাদের লক্ষ্য থাকে না। এখানে জীবনের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করা যায় এবং নতুন বছরের জন্য আমাদের শুভকামনা এখানে রইল। বসন্ত উত্সবসম্পর্কিত পণ্যবাজারের সমৃদ্ধি অর্থনীতির উন্নয়নের প্রতীক এবং সুন্দর জীবনের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা ও ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণও এতে প্রতিফলিত হয়।

 

নতুন বছর আসছে এবং ভোগ বাড়ছে। বসন্ত উত্সবসম্পর্কিত পণ্যের ভোগ চীনা অর্থনীতির উন্নয়নে অবদান রাখবে এবং নতুন চালিকশক্তিতে পরিণত হবে বলে বিশ্বাস করা যায়। (শিশির/আলিম/রুবি)