‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. চীন ভ্রমণে ১৭ দেশের শিক্ষার্থী
বিশ্বের ১৭টি দেশ থেকে আসা ২০ জন শিক্ষার্থীর দলটি চীনের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করছেন। গেল সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু ঘুরে দেখেন তারা। সম্প্রতি সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ঐতিহ্যগত কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের এই সফর।
গত বছরের নভেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ঘোষণা করেন, আগামী পাঁচ বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীকে পারস্পরিক বিনিময় এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে চীন।
ছেংতুতে সফরকালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা শহরের ছিংছংশান হাইস্কুলে যান। যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দুজনেই ২০১১ সালে একসঙ্গে পরিদর্শন করেছিলেন।
প্রতিনিধি দলটি ২ হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত ছেংতু পান্ডা ঘাঁটিও ঘুরে দেখে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন এবং আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী রয়েছে এই প্রতিনিধি দলে। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা বাস্কেটবল খেলেছেন এবং একটি টাই-ডাই কর্মশালায়ও যোগ দেন।
ছিংছংশান হাইস্কুলের ছাত্র মা হুয়াওয়েই বলেন, ‘আমরা তাদের জানাতে চাই যে চীনা জনগণ তাদের স্বাগত জানায়।’
উইলিয়াম সিমকু নামের এক শিক্ষার্থী খেলাধুলার মাধ্যমে বন্ধন তৈরির কথা জানান।
‘আমি ছাত্রদের সাথে বাস্কেটবল খেলেছি। যদিও আমি খুব একটা ভালো করতে পারিনি, তারপরও খুব ভালো সময় কেটেছে। আমি মনে করি, আমাদের মাঝে বন্ধন দৃঢ় করার একটি দুর্দান্ত খেলা হতে পারে বাস্কেটবল। কারণ খেলাধুলা সবসময়ই সেতুবন্ধনের কাজ করে।’
পরিদর্শনকারী শিক্ষার্থী ক্যারোলিনা হেলম্যান বলেন, ‘শিল্পের মাধ্যমে মানুষ তার আবেগ প্রকাশ করতে পারে। একটি দেশ হিসেবে চীন কীভাবে চলছে তা বোঝার জন্য এই সফর একটি দুর্দান্ত সুযোগ।’
এই তরুণদের মধ্যে রয়েছে নতুন কিছু অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। দুই দেশের সম্পর্ককে সুন্দরভাবে এগিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও করছেন তারা। আবার ক্যারিয়ারেও এ অভিজ্ঞতাটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়েও তাদের মাঝে চলছে আলোচনা।
ভবিষ্যতে কূটনীতিক হতে চান অরকান ডগমাযের নামের এক শিক্ষার্থী। সোনালী মুহূর্তগুলোর উপলব্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন,
‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হলো এক ধরনের সেতু। এর মানে হলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বোঝা, একে অপরকে জানা এবং বৈচিত্র্য ও মিলগুলো উপলব্ধি করা। আমি মনে করি এ ধরনের ভ্রমণ ওই উদ্দেশ্যটিই পূরণ করে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভবিষ্যত পরিবর্তনের বাহক হিসেবে এই ‘সেতু’র কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।’
ছেংতুতে চার দিন থাকার পর, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেনচেনে যাত্রা করেন।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক : ফয়সল আব্দুল্লাহ
২. মূল ভূখণ্ডে তাইওয়ানের তরুণদের স্বপ্নসারথী ফ্যান চিয়াংফেং
চীনের মূল ভূখণ্ডে তাইওয়ানের একজন সফল উদ্যোক্তা ফ্যান চিয়াংফেং। দক্ষিণ-পূর্ব চীনের সিয়ামেন শহরে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন তিনি। ক্রীড়াশিল্প ও ইনকিউবেটর পরিষেবা ব্যবসায়ে পেয়েছেন সফলতা। মূল ভূখণ্ডে ক্যারিয়ার ও ব্যবসা শুরু করতে তাইওয়ানের তরুণদের পথনির্দেশক হয়ে উঠেছেন ফ্যান। ফ্যান এবং তার দল ২০২৪ সালে ক্রীড়া শিল্পের উপর বিশেষ নজর দিচ্ছেন।
তাদের এমন সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করেন ফ্যান চিয়াংফেং। ‘প্রথমত, তাইওয়ানে অবকাশ ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা, বা শারীরিক পুনর্বাসন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতাসম্পন্ন অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এ সব ক্ষেত্রে প্রতিভা বিনিময়েরও প্রচুর সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা দেখেছি যে তাইওয়ানের জন্য মূল ভূখণ্ডের ২১টি অগ্রাধিকারমূলক সহায়ক নীতির মধ্যে ক্রীড়া বিনিময়কে শক্তিশালী করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে ফ্যান যৌথভাবে সিয়ামেন স্পোর্টস সেন্টারে একটি আইস রিঙ্ক তৈরির কাজ করেছেন। নতুন বছরে, ফ্যান মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ান উভয় পারের সম্পদ একত্রিত করে ক্রস-স্ট্রেট স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা পার্কের আরও বিকাশের জন্য কাজ করছেন।
নতুন বছরে তাঁর আশার কথা বলছিলেন ফ্যান চিয়াংফেং। ‘২০২৪ সালের জন্য, প্রথমে আমরা আশা করি যে আমাদের প্রকল্পগুলি আরও পরিপক্ক হয়ে উঠবে৷ আরও গুরুত্বপূর্ণ এই যে, আমরা আশা করছি আমাদের ইউফ্যান ফাউন্ডেশন তাইওয়ান দ্বীপে আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে, যাতে দ্বীপের আরও তরুণ তাদের পরিচিত গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং মাতৃভূমিতে আরও অবদান রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে পারে এবং এভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
ফ্যানের ক্রস-স্ট্রেট ইনকিউবেটর ব্যবসা এর মধ্যেই তাইওয়ানের ৪০ হাজারের বেশি যুবককে সেবা দিয়েছে এবং ৫ শ’র বেশি তাইওয়ানি যুবককে মূল ভূখণ্ডে ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করেছে৷
প্রতিবেদক : মাহমুদ হাশিম
৩. বেইজিং চাকরি মেলা গ্রামীণ ব্যবসার জন্য শহরের তরুণদের নিয়োগ করেছে
বেইজিংয়ের ছাওয়াং জেলায় জানুয়ারির শুরুতে একটি বিশেষ চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামাঞ্চলের কাজের জন্য প্রতিভাবান শহুরে তরুণদের নিয়োগ দিতে প্রায় ১ শ’ গ্রামীণ উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এতে অংশ গ্রহণ করেন।
এই আয়োজনটিকে একটু ভিন্নভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সবসময় গ্রামীণ বাসিন্দাদের চাকরির সুযোগের জন্য শহরে অভিবাসনের ঐতিহ্যগত জোয়ারের বিপরীতে করা এমন আয়োজনকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
সু তুও, ইভেন্টের একজন অন্যতম সংগঠক। তিনি বন্ধুদের সঙ্গে একটি গ্রামীণ ব্যান্ড পরিচালনা করেন। তার গ্রুপের জন্য একজন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেন এই মেলা থেকে।
একজন তরুণ চাকরিপ্রার্থী লি লিয়ানশু,"আমি এমন চাকরি খুঁজছি যেখানে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যায়। কাজটি কঠিন বা ক্লান্তিকর কিনা তা খুব একটা ব্যাপার না, তবে আমি আরও শিখতে চাই।’
আয়োজকরা জানান, গ্রামীণ এলাকায় চাকরির জন্য এমন অনেকেই আবেদন করেছেন, যাদের এখানে মধ্যে সদ্য স্নাতক হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তরুণ-তরুণীই বেশি। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে চাকরি করেছে বা করছে কিন্তু শহর থেকে গ্রামে যেতে চায়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী