‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫৩
2024-01-16 20:08:04

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে     

১। পরিকল্পিত পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প পালটে গেছে চীনের গ্রাম

২। হেইলংচিয়াংয়ে আনন্দ ছড়ালো লোক সংস্কৃতির থিম ট্রেন

৩। পাতাছু টেম্পলের অসাধারণ সৌন্দর্য

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।       

১। পরিকল্পিত পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প পালটে গেছে চীনের গ্রাম

পাহাড় ঘেঁষা এই বাড়িতে ৬০টি পরিবারের বাস। পাহাড় ঘেঁষা বাড়িগুলো একটা থেকে আরেকটা আলাদা। চীনের ইউননান প্রদেশের ইয়ংইয়াং কাউন্টির হোং হ্য ও ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত প্রত্যন্ত এই গ্রামের নাম আচেখ্য। অভাব অনটন ছিল এ গ্রামের বাসিন্দাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। কাজের অভাবে আর্থিক অস্বচ্ছলতায় জীবন কাটতে থাকে তাদের।

জানা যায় ২০১৮ সালে এ গ্রামের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৪২০ মার্কিন ডলার। চরম দারিদ্র্যতার কারণে বেশির ভাগ মানুষ ছুটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কিন্তু একই বছরে পালটে যেতে থাকে গ্রামের চেহারা। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের সান ইয়াত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি একদল স্থানীয় পর্যটনের প্রচারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আচেখ্য পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পিত এই পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবর্তন হতে থাকে গ্রামবাসীদের জীবন।

 

আচেখ্য গ্রামে জনপ্রিয় ব্যবসা হয়ে উঠতে থাকে পর্যটন। দূর-দূরান্ত থেকে আসতে থাকে দর্শনার্থীরা। পর্যটনকে কেন্দ্র করে দূর হতে থাকে দরিদ্রতা এবং একই সঙ্গে সাহায্য করে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে। 

আচেখ্য পরিকল্পনা চালু হওয়ার এক বছর পর গ্রামটিকে দারিদ্র্যমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই উন্নয়নকে টেকসই করতে আচেখ্যের পর্যটন ব্যবসা চালু করতে প্রয়োজন হয় পেশাদার লোকের।

গ্রামবাসীদের আগ্রহে অনেক তরুণ ফিরে আসেন গ্রামে। তরুণরা ফিরে শুরু করেন হোমেস্ট পরিচালনা। পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে লোক সংস্কৃতি সম্পর্কিত নানা কর্মকান্ডও চালু করেন তারা।

একজন তরুণ বলেন, “আমি পর্যটন ব্যবস্থাপনা নিয়ে পড়ালেখা করেছি। এই বছর আমি একটি হেমেস্ট পরিচালনা করতে বাড়ি ফিরে এসেছি। এখানকার বাসিন্দারা ভেবেছিল তারা হয়তো কখনৈ স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবেন না। তাই তারা বাধ্য হয়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে থাকে”। 

স্নাতকের একজন শিক্ষার্থী হয়ে গ্রামে ফিরে আসাকে নিজের সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রাম উন্নয়নশীল হওয়ায় অনেকে আসছেন আমাদের সাহায্য করতে। তাই আমার মনে হয় এমন সময়ে গ্রামে ফিরে এসে ঠিক কাজ করেছি”।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর থেকেই গ্রামেই অনেক কাজের সুযোগ হয়েছে তরুণদের।

আরেক তরুণী জানান, আমি শহরে কাজ করতাম। বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে কাজ চাইনি। প্রতি রাতে বাড়িতে ফোন করতাম। বয়স্ক লোকরা কেমন আছে তা জানার জন্য এবং বাচ্চাদের স্কুলে পড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে। পর্যটন কোম্পানি চালু হওয়ার পর আমি চলে আসি এখানে কাজ করার জন্য। আজকাল আমি আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি, কেননা আমি কাজ শেষে সরাসরি বাড়ি ফিরতে পারি”।

স্বচ্চল জীবনযাপন আচেখ্যবাসীকে আরও পর্যটন শিল্পে আগ্রহী করে তুলেছে। আর পর্যটকরাও ভিড় জমাচ্ছেন এই গ্রামে।


প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম

 

২। হেইলংচিয়াংয়ে আনন্দ ছড়ালো লোক সংস্কৃতির থিম ট্রেন

বরফ ও তুষারকে ঘিরে নানান উৎসবের জন্য বিখ্যাত চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশ। প্রদেশটির হারবিন শহর থেকে মোহে পর্যন্ত চালু হয়েছে  অন্যরকম একটি ট্রেন। স্থানীয় লোকসংস্কৃতির নানান উপাদানে ভরপুর এ ট্রেনে চড়তে এখন ভিড় করছেন পর্যটকরা।

আপাদমস্তক স্থানীয় লোক সংস্কৃতির চাদরে মোড়ানো এ ট্রেন যাত্রাীদের দিচ্ছে ভিন্ন এক যাত্রার অভিজ্ঞতা। ট্রেনের ভেতরটা সাজানো হয়েছে চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্যবহনকারী লাল ও সবুজ রঙের ফুলের নকশায়।

চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের জন্য রয়েছে হরেক আয়োজন। কাগজ কেটে নানান শিল্পকর্ম তৈরির পাশাপাশি যাত্রীরা ডাম্পলিংও রান্না করছেন ট্রেনের ভেতর।

কুয়াংতোং থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, “এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা। আমি মোহে যাচ্ছি। কিন্তু মোহে পৌঁছানোর আগেই বেশ উত্তেজনা বোধ করছি।’

ট্রেনের ভেতর দেখা যাবে উত্তরপূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য ‘ইয়াংকো’। আর নাচের তালে তালে যাত্রীরা পাচ্ছেন হেইলংচিয়াংয়ের সাংস্কৃতিক আস্বাদ।

শীতের সময় হারবিনের বরফ উৎসব দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন হাজারো পর্যটক। তাদের জন্যই সাংস্কৃতিক ও পর্যটনকে একীভূত করে গতবছর হেইলংচিয়াং প্রদেশে চালু হয়েছিল বেশকটি থিম ট্রেন।

ট্রেনটির একজন কনডাক্টর মু শানশান। তিনি বলেন, “দক্ষিণের যারা পর্যটক আছেন তাদেরকে উত্তরপুবের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে পারছে আমাদের ট্রেনগুলো। এতে করে তারা আমাদের সম্পর্কে আরও জানছে এবং এ অঞ্চলের বরফ ও তুষার পর্যটন আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। ট্রেনটি সবসময়ই যাত্রীতে পরিপূর্ণ  এবং চীনের নতুন চান্দ্রবর্ষ পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।”

 

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের শুধু নভেম্বরেই হেইলংচিয়াংয়ে এসেছিলেন ২ কোটি ৭৫ লাখেরও বেশি পর্যটক। যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭৫ শতাংশ বেশি। এতে করে প্রদেশটির পর্যটন খাতের আয় এক বছরের ব্যবধানে সাড়ে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি ইউয়ানে।

প্রতিবেদন- ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। পাতাছু টেম্পলের অসাধারণ সৌন্দর্য

বেইজিংয়ের পশ্চিম উপকণ্ঠের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান পাতাছু টেম্পল। এটি শিজিংশান জেলায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে আটটি বৌদ্ধ টেম্পল, বাগান এবং অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য ।


 

 

বেইজিংয়ের বিখ্যাত ওয়েস্টার্ন হিলস পর্বতমালার পাদদেশে তিনটি পর্বত রয়েছে এখানে। পাতাছু পার্কও বলা হয় পুরো এলাকাটিকে। এখানে রয়েছে হুথোও পর্বত, ছিংলং পর্বত এবং ছুইওয়েই পর্বত। এই তিনটি পর্বতের অবস্থান এমন যে দেখলে মনে হয় একটি ইজিচেয়ার বা আরাম কেদারা।

মন্দিরগুলোর মূল নির্মাণ কাজ হয় সপ্তম শতকে। ছুইওয়েই পর্বতে রয়েছে রাজকুমারী ছুইওয়েই এর সমাধি এবং পাঁচটি মন্দির। হুথোও শব্দের অর্থ বাঘের মাথা। এই পর্বতের চূড়া দেখলে মনে হয় একটি বাঘ ঘুমিয়ে আছে। এখানে রয়েছে দুটি টেম্পল। ছিংলং পর্বতে আছে আরেকটি টেম্পল।

শীতে জমে যায় পাতাছু পার্কের জলাশয়। বরফজমা লেকের উপর দিয়ে চলে স্কেটিং এবং কুকুরে টানা স্লেজ গাড়ি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত পর্যটকরা এই বিনোদন উপভোগ করেন।

পাতাছু টেম্পল পার্কের আটটি মন্দিরেই রয়েছে অপূর্ব কারুকার্য। মূল টেম্পলের স্থাপত্য শৈলীও অসাধারণ। এখানে একটি মন্দিরের পিছনের দরজা দিয়ে পরবর্তী মন্দিরে যেতে হয়। সেজন্য বেশ খানিকটা পাহাড় বেয়ে ওঠার প্রয়োজন পড়ে। 

এই পার্কে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন গাছ। এগুলো প্রায় ছয়শো বছর বয়সী। পাতাছু পার্কে রয়েছে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের ১২টি বিশেষ স্থান। দর্শনার্থীরা এক টেম্পল থেকে অন্য টেম্পলে যাবার পথে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। সাবওয়ে স্টেশন থেকে পাতাছু টেম্পলে যাবার বিশেষ বাস রয়েছে।

পাতাছু টেম্পল পার্কের আশপাশে সুভ্যেনিরের দোকান রয়েছে বেশ কয়েকটি। তাছাড়া স্থানীয় ফেরিওয়ালাদের কাছেও পাওয়া যায় কারুশিল্পেরে চমৎকার কিছু সামগ্রী।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী