আকাশ ছুঁতে চাই ৫১
2024-01-15 18:26:12

 

১. চীন-বাংলাদেশ বিজনেস  এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড  পেলেন নারী উদ্যোক্তা  মেহেরুন

২. নাচের তালে জীবন চলে  

৩. মিয়াও মেয়ের চোখে নতুন দিনের স্বপ্ন

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

চীন-বাংলাদেশ বিজনেস  এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড  পেলেন নারী উদ্যোক্তা  মেহেরুন

 

বাংলাদেশের নারীরা এখন ব্যবসা ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। এমনি একজন উদ্যোক্তা মেহেরুন নেসা। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো চীন-বাংলাদেশ বিজনেস  এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ পেয়েছেন বাংলাদেশের নেটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেরুন নেসা ইসলাম। নারী উদ্যোক্তা ক্যাটেগরিতে এই পুরস্কার পান তিনি। আরও বিস্তারিত শুনবো প্রতিবেদনে।  

  বাংলাদেশের আত্নপ্রত্যয়ী নারী মেহেরুন নেসা ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ভিন্নধর্মী পেশায় যুক্ত করেছেন নিজেকে। এখন একজন সফল নারীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

মেহেরুন বাংলাদেশের নেটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দ্বিপাক্ষিক বিজনেস এক্সিলেন্স এওয়ার্ড পেয়েছেন এই নারী ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিসিসিআই) ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিইএবি) যৌথভাবে আয়োজন করে এ এওয়ার্ড অনুষ্ঠানের। রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে এ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, সেতু ও পোশাক খাতসহ ১২টি খাতে ২৭ কোম্পানি ও গ্রুপকে দেওয়া হয় এ পুরস্কার।

প্রথমবারের মতো অ্যাওয়ার্ড পেয়ে মেহেরুন নেসা ইসলাম সিএমজি বাংলাকে জানান, “ আমরা ট্রেড ডেভেলপমেন্টে কাজ করি। সব সময় ব্যস্ত থাকি। আমাদের কাজের যখন স্বীকৃতি পাই তখন খুব ভালো লাগে। তখন সন্তুষ্টিটা বেড়ে যায়। কোন দূতাবাস ও চেম্বার্স প্রথমবারের মতো আমাদের কাজকে স্বীকৃতি দিল। আমরা বিভিন্ন দেশের সাথে ট্রেড ডেভলপমেন্টে কাজ করি”।

নিজেকে নারী হিসেবে কখনো আলাদা করতে চান না এই  ব্যবসায়ী। তিনি মনে করে কাজ সবার জন্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ আমি যখন কাজটি করি তখন শুধু পেশা হিসেবে কাজটি বেছে নিয়েছিলাম। কোন নারী হিসেবে নয়। আমি মনে করি যেকোন নারী যদি তার কাজকে পেশা হিসেবে নেয় তাহলে তিনি যেকোন পেশাতেই ভালো করবেন। আমি নিজেকে আগে ব্যবসায়ী, এরপর একজন নারী ভাবি”।

নিজ চেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি এই পর্যায়ে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন মেহেরুন নেসা ইসলাম। এখন তিনি আরও অনেক নারীর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

নাচের তালে জীবন চলে

চীনে রয়েছে অনেক জাতিগোষ্ঠী। এর মধ্যে তিব্বতি জাতির সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। তিব্বতি জাতির তরুণী ইয়াংগি। তিনি তিব্বতি ঐতিহ্যবাহী কুয়োচুয়াং নৃত্যকে ছেংতু শহরে পরিবেশন করে এই ঐতিহ্যকে ধারণ করছেন এবং জনপ্রিয় করে তোলার কাজ করে চলেছেন অক্লান্ত ভাবে। শোনা যাক এই তরুণীর গল্প।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু। আধুনিক ঝলমলে এই শহরের খোলা চত্বরে ঐতিহ্যবাহী তিব্বতি নাচ কুয়োচুয়াং পরিবেশন করছেন এক তরুণী। নাম তার ইয়াংগি। তিব্বতি রোমান্টিক গানের সুরে মধুময় হয়ে উঠেছে রাতের বাতাস। পথচলতি মানুষ উপভোগ করছেন তরুণী ও তার সহশিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা। তরুণীর পরনে তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। তার সঙ্গীরাও তেমনি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত।

 

ইয়াংগি কিন্তু পেশাদার নৃত্যশিল্পী নন। তিনি একজন কিন্ডারগার্টেন টিচার। ২০১৪ সালে ইয়াংগি আবা টিবেটান ও ছিয়াং অটোনোমাস প্রিফেকচার থেকে ছেংতু শহরে আসেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ শেষে তিনি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা হন। ৯ বছরের শহর জীবনে তিনি নিজের হোমটাউনকে খুব মিস করতেন। শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বাসনা থেকেই তিনি কুয়োচুয়াং নাচের চর্চা করতেন। তিনি পেশাদারী প্রশিক্ষণ নেননি। কিন্তু তার কাছে মনে হতো নাচ হলো সকল আবেগ প্রকাশের চিরন্তন ভাষা। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিব্বতি ঐতিহ্যবাহী নাচ পরিবেশন করে অনেক প্রশংসা পান। তার মনে হয় যদি রাজপথে বা কোন খোলা চত্বরে এই নাচ পরিবেশন করা যায় তাহলে অনেক মানুষের কাছে নিজের জাতির সংস্কৃতি পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। সেই চিন্তা থেকেই সমমনা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ২০২১ সালে তিনি কুয়োচুয়াং ডান্স গ্রুপ গড়ে তোলেন।

তারা ছেংতু শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, ব্যস্ত সড়কের পাশে চত্বর এবং অন্যান্য জায়গায় নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করেন।

বর্তমানে ছেংতু শহরে এই নৃত্যদল অত্যন্ত জনপ্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ৪লক্ষ ২০ হাজার ফলোয়ার আছে যারা শাংহাই, বেইজিংসহ বিভিন্ন শহরে বাস করে। অনেকে বিভিন্ন শহর থেকে আসেন তাদের পরিবেশনা সরাসরি দেখার জন্য। বিদেশেও প্রচুর ভক্ত রয়েছে ইয়াংগির।

তিনি মনে করেন নাচের মাধ্যমে নাগরিক ব্যস্ত জীবনের যে মানসিক চাপ সেখান থেকে কিছুটা হলেও রিল্যাক্স করা যায়। তিনি কিন্ডার গার্টেনের শিশুদেরও নাচে উৎসাহী করে তুলেছেন।

ইয়াংগি তার নাচের মাধ্যমে তিব্বতি জাতির ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলাকে তুলে ধরতে চান। সেই সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন ব্যস্ত নাগরিক জীবনে নিয়ে আসতে চান স্বস্তি ও কিছুটা প্রশান্তির স্পর্শ।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

মিয়াও মেয়ের চোখে নতুন দিনের স্বপ্ন

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের জন্য একটি চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে চীন।

চীনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও এখন দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে এসেছেন। দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির ফলে দারিদ্র্য মুক্তি ঘটেছে তাদের। চীনে এখন চলছে গ্রামীণ পুনর্জীবনের ধারা। এই ধারায় এখন দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের মানুষও আধুনিক জীবনের স্রোতে সম্পৃক্ত হতে পারছেন। এমনি নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা এক মেয়ের গল্প শুনবো এখন।

চীনের ৫৬ জাতির অন্যতম মিয়াও জাতি। মিয়াও জাতির কিশোরী চি সুয়ে। কুইচোও প্রদেশের এক পার্বত্য গ্রামে তার বাস। পাঁচ বছর আগেও এলাকাটি এমন দুর্গম ছিল যে পাহাড়ি পথ দিয়ে স্কুলে যেতে হলে দুই ঘন্টা হাঁটতে হতো। পরিবারেও ছিল দারিদ্র্য। আগের যুগে এমন প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের পক্ষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ছিল কঠিন। অনেক মেয়ে হয়তো কেবল সংসারের কাজেই নিজের জীবন কাটিয়ে দিতো। কিন্তু এখন দিন পরিবর্তিত হয়েছে।

 

 চিয়ে সুয়ের পরিবারে পাঁচ বছর আগে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সুফল পৌছায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়। চি সুয়ে এখন তার পরিবারের সঙ্গে বাস করছে কুইচোও প্রদেশের লোংথান গ্রামে। তার স্কুল আনশুন সিটির সিসিউ জেলায়। বাড়ি থেকে দশ মিনিট হেঁটেই স্কুলে যেতে পারে চি সুয়ে।

 

 কারণ এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে স্কুল ও আবাসিক এলাকা। জীবন যাত্রার মান দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে। অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বাড়ছে। চি সুয়ে এখন স্কুল ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায়। সেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তার চোখে এখন নতুন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: আফরিন মিম,  শান্তা মারিয়া, শুভ আনোয়ার,

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল