চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫১
2024-01-13 19:16:11

১. ইউননানে ছুশিয়ং ফ্যাশন সপ্তাহ

চীনে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের জন্য নাম রয়েছে দক্ষিণের ইউননান প্রদেশের। সম্প্রতি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে সেখানে আয়োজিত হয় একটি নতুন ফ্যাশন শো।

ইউননানের স্বায়ত্তশাসিত ছুশিয়ং ই প্রিফেকচারে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে ফ্যাশন সপ্তাহটি। এ অঞ্চলে ই জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বাস, যাদের এমব্রায়োডারি কাজের রয়েছে দারুণ সুনাম।

ছুশিয়ং ফ্যাশন সপ্তাহে ৪০টি ফ্যাশন শোতে ই জাতিসহ চীনের বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এক হাজার পোশাক প্রদর্শিত হয়।

হাইনানের উচিশানের প্রচার বিভাগের প্রধান ইউ ছিয়ান বলছিলেন তাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে।

‘তিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির পরিচয়বাহী প্রধান একটি উপকরণ পোশাক। আমরা এখানে আমন্ত্রিথ হয়ে সম্মানিত বোধ করছি। এখানে আমরা লি ও  মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর পোশাক প্রদর্শন করছি।’

 

ছুশিয়ংয়ের ই জাতিগোষ্ঠীর এমব্রয়ডারির ১ হাজার ৭০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় প্রশাসন প্রাচীন এ ঐতিহ্যবাহী শিল্পটির পুনরুজ্জবীন ও আধুনিক ফ্যাশনের সঙ্গে এর সমন্বয়ে কাজ করছে।

চুশিয়ংয়ের প্রচার বিভাগের প্রধান লি ওয়েনচুয়ান জানালেন তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

‘২০২৫ সালে আমরা এমব্রয়ডারি কারিগরের সংখ্যা ১ লাখে উন্নীত করতে চাই এবং এবং এর বাজার মূল্য এক বিলিয়ন ইউয়ানে নিতে চাই। আমরা ব্র্যান্ডিংয়ে জোর দিচ্ছি। আমরা চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের সঙ্গে যোগ রেখে একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি।’

ছুশিয়ং ফ্যাশন উইক শুধুর চীন নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ,  মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পোশাক ও সংস্কৃতিকেও তুলে ধরছে।

থাইল্যান্ডের অংশগ্রহণকারী কিটি টিপ্পাওয়ান জানালেন মেলায় তাদের অংশগ্রহণের গুরুত্বের কথা।

‘এ আয়োজটির মাধ্যমে লোকজন থাই-সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও ভালো জানতে পারছেন। আমরা এখানে যে পোশাক নিয়ে এসেছি তার ২০০ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। ছক্রি রাজংশের আমলে চতুর্থ ও পঞ্চম রামের রাজত্বকালে লোকজন এ পোশাক পরতেন।’

সপ্তাহব্যাপী ফ্যাশন শোতে এ শিল্পসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাশন ডিজাইনাররা একটি ফোরামে অংশ নেন। তারা সেলাই ও বুনন কৌশলসহ প্রাচীন পোশাকের সংরক্ষণ এবং আধুনিক সময়ের উপযোগী পোশাক উদ্ভাবনের উপায় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

২. হারবিন আন্তর্জাতিক বরফ ও তুষার ভাস্কর্য উৎসব

দর্শনীয় আতশবাজি প্রদর্শন এবং ড্রোন শোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে চল্লিশতম হারবিন আন্তর্জাতিক বরফ ও তুষার ভাস্কর্য উৎসব।

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলুং চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারবিনে শুরু হয়েছে এ উৎসব। এখানকার শতাধিক বরফ ও তুষারের ভাস্কর্য দর্শনার্থীদের ভীষণ আকৃষ্ট করছে। 

এ বছর হারবিন আইস-স্নো ওয়ার্ল্ড ৮ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। কারণ ৫শ’ মিটার লম্বা বরফের স্লাইড বরাবরই হিমশীতল তাপমাত্রার মধ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিশেষ অনুভূতি দেয় তাদের। 

প্রতিবছর শীতকালে চীনের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয় এই হারবিন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, তিন দিনের খ্রিষ্টীয় নববর্ষের ছুটিতে ৩০ লাখের বেশি পর্যটক স্থানটি ভ্রমণ করেছেন। 

আন্তর্জাতিক বরফ ও তুষার ভাস্কর্য উৎসবের উদ্বোধন বরফের শহরের শীতকালীন পর্যটনের জন্য সুবর্ণ সময়কালের সূচনা করেছে।

এদিকে, হেইলুং চিয়াং প্রদেশের হারবিন আইস-স্নো ওয়ার্ল্ড গিনেস রেকর্ড ভেঙেছে। আয়োজনটি উদ্বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের বিচারক চায়না আইস অ্যান্ড স্নো ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরাম-২০২৪-এ এই সনদটি ইস্যু করেন। 

৮ লাখ ১৬ হাজার ৬শ’ ৮৩বর্গ মিটার পার্ক এলাকা জুড়ে অনুষ্ঠিত ‍হচ্ছে বরফ ও তুষার থিমের এই প্রদর্শনী।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী /সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

 

৩. চীন-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য মেঘ’

আটলান্টিক মহাসাগরের  নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরিখাত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ।  চীনের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্পের কাজ চলছিল এখানে। গবেষকদের একজন চীনের জোনাস চাং সু ইন। হঠাৎ করেই একটি অজানা প্রাণী তাদেরকে আক্রমণের চেষ্টা করে। ফলে  তাদের উদ্ধারের জন্য প্রাক্তন মার্কিন নৌ সেনাদের একটি দলকে পাঠানো হয়। সফলভাবে উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা।

অজানা এই প্রাণীর নাম মেগালোডন। প্রায় দু’মিলিয়ন বছর আগে  বিলুপ্ত হওয়া ভয়ঙ্কর এই প্রাণীটি যেন আবার ফিরে এসেছে। আক্রমণ করছে বিভিন্ন পর্যটন অঞ্চলে। 

মানবজাতিকে মেগালোডনের হাত থেকে রক্ষা করতে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন গবেষকরা। তিনটি ধাপে এটিকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। 

প্রথমে তার শরীরে একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস সেট করে তার অবস্থান নিশ্চিত করে অ্যানেস্থেসিয়া বন্দুক দিয়ে মেগালোডনকে অজ্ঞান করা এবং পরে হত্যা করা।

মেগালোডনকে হত্যার মিশন সফল্ভাবে সম্পন্ন করার পর শোনা গেল আরেকটি জাহাজে আক্রমণ করে মেগালোডন। বিষয়টি মার্কিন এফবিআইয়ের কাছে জানানো হলে তারা তা বিশ্বাস করতে পারেন না।

এদিকে ট্র্যাকিং ডিভাইসের মাধ্যমে জানা যায়, চীনের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান সানইয়া সৈকতের কাছাকাছি এলাকায় একটি মেগালোডনকে দেখা যাচ্ছে, যে কোন মুহূর্তে এটি আক্রমণ  করতে পারে লাখের বেশি পর্যটক বিশিষ্ট ওই এলাকায়। এই পর্যটকদের কীভাবে রক্ষা করা হলো মেগালোডনদের হাত থেকে, জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে জোন টার্টেলটাউব পরিচালিত ‘দ্য মেঘ’ সিনেমাটি।

  

‘মেগ’ উপন্যাস থেকে নির্মিত সিনেমাটির চলচ্চিত্র স্বত্ব প্রথমে কিনে নেয় ডিজনি। কিন্তু দীর্ঘদিন এটি নির্মাণ না করার কারনে ২০ বছর পর চায়না ইনলি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্নার ব্রাদার্স পিকচার্স যৌথ ভাবে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। রোমাঞ্চকর অ্যাকশন ঘরনার এই সিনেমাটিতে খুব সুন্দরভাবে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার দিক তুলে ধরা হয়। 

ব্রিটেনের বিখ্যাত অভিনেতা জ্যাসন স্ট্যাথাম এবং চীনের অভিনেত্রী লি বিং বিং অভিনয় করেন এই সিনেমায়। ২০১৮ সালের ১০শে আগস্ট মুক্তি পায় সিনেমাটি। 

----------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।