সিচাং অর্থাৎ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নাছু শহরের নিমা জেলার অবস্থান ছিয়াংথাং মালভূতিতে। এখানকার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। নিমা জেলা মানবহীন এলাকার কাছাকাছি। সেখানে গড় উচ্চতা ৫ হাজার মিটার এবং পরিস্থিতি অনেক কঠিন।
ঝড়ো হাওয়া ও তুষারময় আবহাওয়ায় শীতের মধ্যে মানুষ যাতে উষ্ণতার সঙ্গে বসবাস করতে পারে নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে নিমা জেলার বিভিন্ন বিভাগ। কৃষক ও পশুপালকদের জীবনযাত্রায় উন্নতি হয়েছে, বাড়িতে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে এবং বাড়ি উষ্ণও হয়েছে।
নিমা জেলার আবহাওয়া স্টেশনে কর্মীরা মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্যের সারসংক্ষেপ করতে ব্যস্ত থাকেন। নিমা জেলার আবহাওয়া ব্যুরোর পূর্বাভাসকারী তেনজেন লুওইয়াং বলেন, “সাম্প্রতিক দুদিনে জেলার সমস্ত থানা ও গ্রামে প্রবল বাতাস বয়ে যায় এবং নিমা জেলায় বাতাসের শক্তি ১২ স্তরে পৌঁছায়। নিমা জেলার প্রতিটি থানা ও গ্রামে আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট, রেডিও ও টেক্সট বার্তাসহ নানা পদ্ধতিতে প্রতিদিন আবহাওয়ার সতর্কতা প্রচার করি এবং আবহাওয়া বিষয়ক পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করি।”
নিমা জেলার রোংমা থানার হেলথ সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীরা মাসে একবার ঘুরে বেড়ান। মানুষ যদি ফোন কল দেয়, তারা যত দূরেই থাকুক না কেন, জনগণকে সেবা প্রদান করবেন। স্বাস্থ্যকর্মী লাজেন বলেন, “আবহাওয়া ঠাণ্ডা এবং কৃষক ও পশুপালকদের সহজেই সর্দি-কাশি হতে পারে। আমরা সাধারণভাবে ব্যবহৃত অনেক ওষুধ প্রস্তুত করেছি এবং জনগণের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত জেলার হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।”
নিমা জেলার লুকেন গ্রামের অধিবাসী কামারেচিয়ে’র দুটি ভাণ্ডার আছে। একটি ভাত, নুডুলস, সাম্পা, মাখন দিয়ে ভরা এবং ফ্রিজে সবজি রয়েছে। আরেকটি গুদাম গরুর মাংসে ভরা।
সান শেডের মধ্যে বসে নিমা জেলার মুগারেসে সম্প্রদায়ের সদস্য শান জেন খুব আরাম বোধ করেন। শান জেনের সামনের টেবিলটি দুধ, পানীয় জল ও কেক দিয়ে ভরা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারের সহায়তায় সম্প্রদায়ের প্রতিটি পরিবারকে প্রায় ৬০ ব্যাগ জ্বালানি দেওয়া হয়। আমরা যা খেতে চাই, তা কিনতে জেলায় যেতে পারি। সেখানে বিভিন্ন পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে এবং এটা খুব কাছাকাছি আর সুবিধাজনক।”
নিমা থানার কুমা চারণ এলাকায় সিমেন্টের তৈরি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে এবং ভিতরে বিদ্যুৎ আছে। আগে তাঁবুতে থাকার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে এটা। নিমা থানার পার্টি কমিটির সচিব ইন ছিয়াং বলেন, “চারণ করার এমন আধুনিক অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নিমা থানায় রয়েছে ৪২টি। এখন শুধু পশুপালকদের থাকার ব্যবস্থাই উন্নত হয়নি, ভেড়া রাখার স্থানও উন্নত করা হয়েছে। ভেড়ার রাখার নতুন স্থান পরিষ্কার ও পরিপাটি, তাপ নিরোধক এবং ভেড়া নিরাপদে শীতে বেঁচে থাকতে পারে।”
এচিউ থানার কৃষি ও পশুপালন বিষয়ক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণ সামগ্রীর রিজার্ভ গুদামে সংবাদদাতা দেখতে পান যে, পশুখাদ্য, চুলা, সুতির কাপড়, কয়লা, তুষার অপসারণ সরঞ্জাম ইত্যাদি সব পাওয়া যায় সেখানে। এচিউ থানার প্রধান নিমা চাশি বলেন, “গুদামে প্রায় ১৭৭ টন খড়, ২১৪ টন শস্যের মজুদ এবং প্রায় ১৪৫ টন জ্বালানি মজুদ রয়েছে। আমরা শীত আসার আগেই কৃষক ও পশুপালকদের মধ্যে এসব উপকরণ আগাম বিতরণ করেছি এবং দুর্যোগের সময় প্রাসঙ্গিক জরুরী পরিকল্পনা প্রণয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগের সময়ে স্থানান্তর রুটও তৈরি করেছি। একবার কিছু ঘটলে শহর এবং জেলার সরকার আমাদেরকে সাহায্য করবে। এমনকি প্রচণ্ড তুষারঝড় হলে এবং বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বিঘ্নিত হলে আমরাও কমপক্ষে ৮ মাস ধরে বেঁচে থাকতে পারবো।”
বান তিয়েন নামে এচিউ থানার একজন বৃদ্ধার উঠানে খননযন্ত্র, ট্রাইসাইকেল ও পিকআপ ট্রাক পার্ক করা। তিনি বলেন, “আমার গাড়ি আছে, তাই আমি যে কোনও জায়গায় যেতে পারি। যখন ভারী তুষার জমে, আমি একটি খননযন্ত্র ব্যবহার করে রাস্তা পরিস্কার করতে এবং যান চলাচল পুনরুদ্ধার করতে পারি।”
বান তিয়েনের ৭০০টিরও বেশি ভেড়া ও ৬০টিরও বেশি গরু রয়েছে। অতীতে গবাদি পশু মারা যাওয়া একটি সমস্যা ছিল যা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করত। এখন গবাদি পশু ও ভেড়ারও বিমা আছে এবং তারা যদি দুর্ঘটনার শিকার হয়, মালিকেরা ক্ষতিপূরণ পান।
এখন ছিয়াংথাং মালভূমিতে কৃষক এবং পশুপালকরা একটি উষ্ণ শীত কাটাচ্ছেন।
লিলি/রহমান