মাটির ভাস্কর্য প্রভু খরগোশে বেইজিংয়ের সংস্কৃতি তুলে ধরে উত্তরাধিকারী চাং চুং ছিয়াং
2024-01-11 16:35:11

চীনের বেইজিংয়ের ছিয়ান মেন অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সিয়ে সড়কের প্রবেশাদ্বারে একটি ‘বেইজিংয়ের প্রভু খরগোশ’ নামক দোকান রয়েছে। চাং চুং ছিয়াং এ দোকানের মালিক। তিনিই মাটির ভাস্কর্য প্রভু খরগোশ অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারী।

এ দোকানর প্রস্থ মাত্র এক মিটার। বণার্ঢ্য মাটির ভাস্কর্য প্রভু খরগোশ চারিদিক থেকে আসা পর্যটকদের স্বাগত জানায়।

মার্টির ভাস্কর্য প্রভু খরগোশ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। অতীতে একবার বেইজিং শহরে রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। জনসাধারণ প্রকোপের ভয়াবহতায় ভুগছিল। সে সময় চাঁদে বাসকারী পরী চাং তার জেড খরগোশকে পাঠান ওষুধ দিতে। এর ফলে জনসাধারণ রোগ থেকে মুক্তি পায়। তবে তীব্র ক্লান্ত হয়ে জেড খরগোশটি পড়ে যায় একটি মন্দিরের একটি পতাকার খুঁটির পাদে। তাই স্থানীয় শিল্পীরা তার স্মৃতি হিসাবে প্রভু খরগোশ তৈরি করেছে। প্রভু খরগোশ  শুভকামনা ও সুস্থতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।  

চারশ বছর ধরে অব্যাহত থাকার ফলে বর্তমানে প্রভু খরগোশ আগেকার মধ্য-শরৎ উত্সবের সময় ব্যবহৃত জিনিস থেকে বেইজিংয়ের সবচেয়ে প্রতীকী অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি এটা পর্যটকের পছন্দের স্যুভিনিয়রেও পরিণত হয়েছে। প্রতিবার যখন নতুন প্রভু খরগোশ বাজারজাত করা হয়, তখন দ্রুত সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়। চাং ছোং ছিয়াং বলেন, ‘বিশেষ করে ২০২৩ সালে চীনের খরগোশ বর্ষ। আমাদের দোকানে প্রভু খরগোশ ভালো বিক্রি হয়েছে, যা চাহিদা মেটাতে পারছিল না।”

প্রভু খরগোশের সঙ্গে চাং চুং ছিয়াং’র ভোগ্য যুক্ত হয়েছে অসাবধানে নয়। ছোটবেলায় যখন মধ্য-শরৎ উত্সবে অন্য পরিবারের নেওয়া প্রভু খরগোশ প্রদর্শিত হতো, তখন চাং চু ছিয়াং আঙ্গিনার অনেক শিশুদের সঙ্গে সেটা উপভোগ করতেন। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থায় চাকরি নেন। সেখানে প্রাচীন বেইজিংয়ের অনেক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন। এগুলোর মধ্যে একটি প্রভু খরগোশ সংস্কৃতি।  তারপর তিনি ধীরে ধীরে প্রভু খরগোশ তৈরির কৌশল শিখতে শুরু করেন। তার সৌভাগ্য এই যে, তিনি অনেক মাটি ভাস্কর্য শিল্পীর কাছ থেকে শিখতে পেরেছেন। ২০১৬ সালে প্রভু খরগোশ সংস্কৃতির জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক উত্তরাধিকার শুয়ান ইয়ান তাকে শিক্ষা দেন, যার ফলে চাং চুং ছিয়াং’র কৌশল অনেক উন্নত হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী কৌশলে একটি প্রভু খরগোশ তৈরি করতে লাগে কাদামাটি, ট্রিমিং, পলিশিং, পেইন্টিংসহ বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া। প্রভু খরগোশ দেখতে সুন্দর ও চকচকে না হলে সেগুলো নষ্ট করে আবার মাটি মাখা হয়। এমন কি মাটি তৈরির সময় মাত্রিকভাবে তুলাও মিশানো হয়।

ঐতিহ্যবাহী প্রভু খরগোশ তৈরিতে রঙিন আঁকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপর থেকে নিচে এবং বাইরে থেকে গভীরে; সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো চেহারা আঁকা।

চাং চুং ছিয়াং বলেন, ‘প্রভু খরগোশ দেখতে প্রাণবন্ত কি না, তা নির্ভর করে ভ্রু ও চোখ আঁকার কৌশলের ওপর। মনোযোগ দিয়ে আঁকা খরগোশে থাকে প্রাণশক্তি, যা দেখলে মনে হয় যেন সেটা আপনার সাথে কথা বলছে। এতে আপনি উষ্ণতা অনুভব করতে পারেন এবং মনোমুগ্ধকর হয়।

প্রভু খরগোশের প্রাণশক্তি চাঙ্গা করতে উত্তরাধিকারী হিসেবে ক্যাম্পাস ও কমিউনিটিতে গিয়ে প্রভু খরগোশ তৈরি শিখাতে চান চাং চুং ছিয়াং। পাশাপাশি তিনি অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রভু খরগোশের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।

চাং চুং ছিয়াং রাশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, কিরগিজস্তানসহ নানা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনেক বিদেশি বন্ধু তার কারণে প্রভু খরগোশ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং বেইজিং, এমন কি চীনকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন।