আকাশ ছুঁতে চাই ৫২
2024-01-11 17:18:54

                                             

 

১. পিওনি ফুলের হাসি

২. শিক্ষক চিন সিয়া

৩. ওদের চোখে ফুটবলের স্বপ্ন

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

পিওনি ফুলের হাসি

চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী ফুল হলো পিওনি। এটি চীনের অনেক প্রদেশেই খুব জনপ্রিয় ফুল। এই ফুলকে অবলম্বন করে নিজেদের আয় রোজগার বাড়িয়ে নিয়েছেন শানতোং প্রদেশের স্থানীয় নারীরা।তারা পিওনি ফুলের ছবি আঁকছেন। চীনে এই ধরনের পেইন্টিংয়ের রয়েছে বিশেষ কদর। কিভাবে এই পেইন্টিংকে ব্যবহার করছেন নারীরা সে গল্প শুনবো এখন।

 

 

ফুলের ছবি আঁকছেন কয়েকজন নারী। তারা আঁকছেন পিওনি ফুলের ছবি। এই ছবির মাধ্যমে তারা যেমন লোকজ ঐতিহ্যকে ধরে রাখছেন তেমনি নিজেদের জীবনকেও গড়ে নিচ্ছেন।

পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের হ্যচ্য সিটির চু ইয়ে কাউন্টি। সেখানে পিওনি ফুলের পেইন্টিং তৈরি করা লোকজ অবৈষয়িক সংস্কৃতির অংশ। পিওনি থিমের রিয়ালিস্টিক পেইন্টিং শিল্প গড়ে উঠেছে এখানে। মূলত নারীরা এই ছবি আঁকার মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের অবসর সময়টা ভালো কাটাচ্ছেন তেমনি এই পেইন্টিংগুলো বিক্রি করে তাদের আয় রোজগারও বাড়ছে।

শিল্পী ওয়েই লানলান এ বিষয়ে তার স্টুডিওতে কর্মশালারও আয়োজন করেছেন। নারী শিল্পী ওয়েই লানলান তার এলাকার নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি রোজগারের পথ খুলে দিয়েছেন।

বিশ হাজারের বেশি মানুষ বর্তমানে পিওনি থিমের  এই রিয়েলিস্টিক পেইন্টিং শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। শোনতোং প্রদেশের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এই পিওনি ফুলের ছবি বিক্রি হচ্ছে পর্যটকদের কাছে। শুধু ছবি নয়, অন্যান্য সামগ্রী যেমন ব্যাগ ,চাদর ইত্যাদিতেও পিওনি থিম ছবি ক্রেতা পর্যটকদের ভালো সাড়া পেয়েছে। সুভ্যেনির হিসেবে অনেকেই সংগ্রহ করছেন রিয়েলিস্টিক পিওনি পেইন্টিং।

অনেক অবসরপ্রাপ্ত বা প্রবীণ নারীও এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে পিওনি ফুলের ছবি আঁকা শিখেছেন। ওয়েই লানলান মনে করেন অবসর প্রাপ্ত প্রবীণদের জন্য এই ছবি আঁকা দুইভাবে উপকার নিয়ে আসে। প্রথমত তারা অবসর সময়টা ভভালোভাবে কাটাতে পারেন। তারা জীবনে একটা ভালো বিনোদন পান। পাশাপাশি তাদের আয রোজগার বাড়ে। তাদের শিল্পকর্ম পৌছে যাচ্ছে  দেশের বিভিন্ন স্থানে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

শিক্ষক চিন সিয়া

  এমন অনেক মানুষ আছেন যারা শৈশবে বা তরুণ বয়সে জীবন ও জীবিকার চাপে ভালোভাবে লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাননি। পরিণত বয়সে তারা আবার নতুনভাবে লেখাপড়া শিখতে চাচ্ছেন। এমন মানুষদের সাহায্যে আছেন শিক্ষক চিন সিয়া। তিনি নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একজন বাসিন্দা। দুই সন্তানের জননী চিন সিয়া তার সংসার ও অন্যান্য কাজ সামলে অনলাইনে তার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করছেন। তার অনলাইন শিক্ষার্থীরা সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চলুন শোনা যাক তার গল্প।

চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের এক উদ্যোগী নারী চিন সিয়া। ৪১ বছর বয়সী চিন সিয়া বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের একজন শিক্ষক।

 

চিনসিয়ার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগের বয়স ৪০ থেকে ৬০ বছর। তারা অনেকে গৃহবধূ, শ্রমিক এবং কৃষক। তারুণ্যে জীবন ও জীবিকার তাগিদে তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাননি। ইচ্ছা থাকা সত্তেও হয়তো ভালোভাবে শিখতে পারেননি গণিত কিংবা বিজ্ঞান অথবা সাহিত্য। পরিণত বয়সে তারা আবার শিক্ষা গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। এদের অনলাইনে শিক্ষা দেন চিনসিয়া।

চিনসিয়ার জন্ম উচোং সিটিতে। মধ্যচীনের হুবেই প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষকতা বিষয়ে পাঠ নিয়েছেন। একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে তিন বছর কাজও করেছেন। পরে স্বামীর সঙ্গে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যৌথভাবে কাজ করেন। তিনি দুই সন্তানের জননী। সংসার দেখাশোনার কাজটাও করতে হয়। এরপরও অনলাইনে শিক্ষাদানের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে তার। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কোর্সে অংশ নেয়ার জন্য ১০০ ইউয়ান প্রদান করে।

চিনসিয়া মনে করেন শিক্ষকতা পেশায় যে সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়া যায় তা সত্যি অসাধারণ।

চিনসিয়া বলেন, ‘তারা যখন আমার জন্য উপহার পাঠায়, তাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানায় তখন দারুণ ভালো লাগে।’

কেউ হয়তো ঘরে তৈরি খাবার বা হাতে বোনা কোন উপহার পাঠালো। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।

চিনসিয়া জানান, অনেক শিক্ষার্থী জীবনে কখনও কল্পনাও করেনি যে তারা একজন শিক্ষক পাবে, তারা নতুনভাবে বিদ্যা অর্জন করতে পারবে। এখন চিনসিয়ার সাহায্যে তারা লেখাপড়া শিখতে পারছেন। চিনসিয়া নিজেও তার সংসারে বাড়তি উপার্জন করতে পারছেন। নিজের ক্যারিয়ারও গড়ে তুলেছেন শিক্ষকতা পেশায়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

ওদের চোখে ফুটবলের স্বপ্ন

ফুটবল খেলায় এখন অনেক দেশের নারী এগিয়ে এসেছেন। নারীরা ফুটবলে বেশ ভালো করছেন। কিন্তু এক সময় অনেক সমাজে মনে করা হতো ফুটবল মোটেই নারীদের খেলা নয়। চীনেরও কোন কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ধরনের ধারণা ছিল। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে এই ধারণার। অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে এখন মেয়েদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে ফুটবল। কিভাবে সেটি ঘটছে চলুন শোনা যাক।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালটির অধীনে শিচু থুচিয়া অটোনোমাস কাউন্টির এক পাহাড়ি টাউন। এখানে সানহ্য টাউন প্রাইমারি স্কুলের মেয়েরা ফুটবল খেলাকে ঘিরে বুনে চলেছে তাদের স্বপ্ন। তাদের কাছে ফুটবল শুধু মাত্র একটি খেলা নয় বরং জীবন বদলে দেয়ার পদ্ধতি।

ছিন ফুরং ছিলেন সানহ্য টাউন প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টিমের একজন সদস্য হিসেবে খ্যাতি পায়। এই খেলার সুবাদে এখন তিনি শাংহাই শহরের তোংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তার জন্য ভবিষ্যতের দুয়ার খুলে দিয়েছে এই খেলা।

ছিন একা নয়। গত এক দশকে অনেক মেয়ে শাংহাই এর থোংচি ইউনিভারসিটি এবং বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভারসিটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এই ফুটবল খেলার কারণে।

এই গ্রামের কিশোরীদের জীবন পরিবর্তনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। সেসময় সানহ্য টাউন প্রাইমারি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন সুন সিয়াওমিং। তিনি মেয়েদের ফুটবল টিম গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তিনি চিন্তা করেন এই টিমের মাধ্যমে প্রিাইমারি স্কুলের মেয়েরা খেলাধুলায় এগিয়ে আসবে এবং নিজেওেদর জীবনের একটা নতুন গতি অর্জন করবে। তিনি নিজেও ছিলেন শরীরচর্চার শিক্ষক। তিনি তার স্কুলের শিশুদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিতে থাকেন।

তবে অভিভাবকদের বুঝাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কারণ তারা ভাবতেন ফুটবল মেয়েদের খেলা নয়। এই পশ্চাৎপদ ধারণা থেকে তাদের বের করে আনেন সুন।

তবে সেসময় ভালো প্রশিক্ষক ছিল না। মা ছিংলিন নামে একটি মেয়ে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। তাই মা ছিংলিনকে পাঠানো হয় বড় শহরে প্রশিক্ষণের জন্য। মা ছিংলিন ভালো ফলাফল করে ছোংছিংয়ের একটি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির জন্য বৃত্তি পায়। ২০১৩ সালে ২০জন ছাত্রী নিয়ে গড়ে ওঠে প্রাইমারি স্কুলের মেয়েদের টিম।

২০১৫ সালে ছিন ছোংছিং ক্যাম্পাসে ফুটবল লিগে ভালো ফলাফল করে। ছিন এর টিম চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে।

এরপর থেকে সানহ্য টাউন প্রাইমারি স্কুলের ফুটবল টিমের মেয়েরা অনুপ্রাণিত হন। তারা তাদের স্বপ্নজয়ের পথে এগিয়ে যান ফুটবলের সেতু ধরে। গত একদশকে এই টিমের মেয়েরা পৌছে গেছেন বিভিন্ন বড় বিশ্ববিদ্যলয়ে। নতুন যারা এসেছে তারাও একই ধরনের স্বপ্নকে লালন করে চলেছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  শান্তা মারিয়া, শুভ আনোয়ার, আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল