চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭ জানুয়ারি জানিয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বিদেশি নিষেধাজ্ঞা বিরোধী আইন অনুযায়ী, তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি করা ৫টি মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা ব্যক্তি ও কোম্পানিকে সতর্ক করেছে চীন।
ওই ৫টি মার্কিন কোম্পানি হলো আরিওভিরোনমেন্ট, বিএই সিস্টেমস ল্যান্ড এন্ড আরমামেন্ট, আলিয়েন্ট টেকসিস্টেমস অপারেশন, ভিয়াস্যাট এবং ডেটা লিংস সলিউশনস কোম্পানি। এর কিছু বিখ্যাত ও অপরিচিত কোম্পানি হলেও তারা সবাই তাইওয়ানের নিয়মিত অস্ত্র বিক্রেতা।
যেমন, বিএই সিস্টেমস ল্যান্ড এন্ড আরমামেনন্ট কোম্পানি তাইওয়ানকে আর্মড রিকোভারি ভেহিকেল এবং উভচর যুদ্ধযান বিক্রি করে এবং এখন তাইওয়ানের অস্ত্র ডিলারের সঙ্গে স্ব-চালিত হাউইটজার বিক্রির বিষয়ে আলোচনা করছে।
এ ৫টি কোম্পানি তাইওয়ানে নতুন মার্কিন অস্ত্র বিক্রেতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে তাইওয়ানে ৩০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা বর্তমান মার্কিন সরকারের দ্বাদশবার তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি। যুক্তরাষ্ট্রের এ আচরণ এক চীন নীতি ও চীন-মার্কিন তিনটি ইস্তাহার লঙ্ঘন করেছে এবং সানফ্রান্সিসকোতে চীন ও মার্কিন নেতার শীর্ষসম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে। তাইওয়ান সমস্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও কাজ এক রকম নয়, বরং কথার বরখেলাপ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়, তাইওয়ানের পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও টেলিযোগাযোগ দক্ষতা জোরদার করতে এসব অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগে তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ বিক্রি করেছিল বিমান, মিসাইল ও ড্রোনসহ নানা অস্ত্র। তবে যুদ্ধের দক্ষতা নির্ভর করে টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও নেটওয়ার্কের সমন্বিত ব্যবস্থার উপর। এবার তাওয়ানের সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে এসব সরঞ্জাম বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আগুন নিয়ে খেললে মূল্য দিতে হয়। চীন অনেকবার জোর দিয়ে বলেছে, তাওয়ান হল চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থের কেন্দ্র, চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ভিত্তি এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি রেড লাইন, যা কখনও অতিক্রম করা যাবে না। তাওয়ানে মার্কিন অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে চীন গেল কয়েক বছর কয়েকটি মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এবার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে চীনে তাদের সম্পদ হিমায়িত করা, চীনা কোম্পানি ও ব্যক্তি তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ করাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বেইজিং।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান সমস্যা নিয়ে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে; তারপর চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাই চীনের কাজ যৌক্তিক। তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রির তুলনায় এ ৫টি কোম্পানির চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মুনাফা বেশি। চীনের অবরোধ ব্যবস্থা তাদের ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে। তা ছাড়া, পরে যদি তাওয়ানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও যোগসাজশ করে, তাহলে আরও কঠোর অবরোধ ব্যবস্থা আরোপ করবে চীন।
এ নামতালিকা প্রকাশ করা হলো চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার ইচ্ছা ও সংকল্প। যুক্তরাষ্ট্রে উচিত্ এক চীন নীতি এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতায় সমর্থন না করার প্রতিশ্রুত পালন করা। তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি করা অব্যাহত থাকলেও চীনের একীকরণ প্রক্রিয়া জোরালোভাবে এগিয়ে যাবে।
(শিশির/তৌহিদ/রুবি)