‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫২
2024-01-09 14:18:15

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে     

১। পর্যটক ভিড় করছে আন্তর্জাতিক বরফ ও তুষার ভাস্কর্য উৎসবে

২। ভিসা ছাড়াই থাইল্যান্ড ঘুরতে পারবেন চীনা পর্যটকরা

৩।  কুয়াংচৌ শহরের জমজমাট এলাকা সান ইউয়ান লি

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।       

১। পর্যটক ভিড় করছে আন্তর্জাতিক বরফ ও তুষার ভাস্কর্য উৎসবে

হাড় কাঁপানো শীত আর শুভ্র তুষারের মধ্যে চীনে শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তুষার উৎসব। চীনের হারবিনে চলছে সবচেয়ে বড় তুষার ও বরফের তৈরি ভাস্কর্যের আন্তর্জাতিক উৎসব। এবার বসেছে ৪০তম আসর। চীনের এই উৎসবটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বরফ-তুষার উৎসব।

এখানে বরফ কেটে বানানো হয়েছে দুর্গ, প্রাসাদ, ঘরবাড়ি। প্রতি বছর দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসে এই চোখ ধাঁধানো বরফ উৎসবে যোগ দিতে। তাই আলো আর বরফে তৈরি চোখ ধাঁধাঁনো পরিবেশ দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। এটি এখন বিশ্বের পর্যটকদের জন্য হয়ে উঠেছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা।

 

উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলুং চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারবিনে একি দর্শনীয় আতশবাজি প্রদর্শন এবং ড্রোন শোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবারের উৎসব।  এ বছর ৮ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হারবিন আইস-স্নো ওয়ার্ল্ড ।

হারবিন উৎসবে থাকে নানা আয়োজন। তার মধ্যে প্রধান আকর্ষণ হল বরফের অট্টালিকা আর স্থাপত্য। এ ছাড়া থাকে তুষার দিয়ে গড়া পৌরাণিক সব চরিত্র, বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব কিংবা প্রাচীন প্রাসাদ। সোংহুয়া নদী থেকে দুই-তিন ফুট চওড়া বরফের চাঁই এনে তৈরি করা হয় অট্টালিকাগুলো।বরফ কাটতে ব্যবহৃত হয় বিশেষ বিশেষ বাটালি, কুঠার ও করাত। আর বরফগুলো আলোকভেদী করার জন্য শিল্পীরা ব্যবহার করেন বিশুদ্ধ পানি।

অট্টালিকাগুলো দাঁড়িয়ে গেলে সাজানো হয় বর্ণিল আলো দিয়ে। ব্যবহার করা হয় লেজার। হারবিন ইন্টারন্যাশনাল আইস অ্যান্ড স্নো স্কাল্পচার ফেস্টিভালে থাকে কয়েকটি বিভাগ। একেকটি বিভাগে চলে একেক রকম ‘শীতল প্রদর্শন’।

এমনকী পর্যটকদের বসে খাবার জন্য তারা তৈরি করেন বরফের রেস্তরাঁ, যেখানে টেবিল এবং অধিকাংশ আনুষঙ্গিক আসবাব সবই বরফ খোদাই করে তৈরি করা হয়। পর্যটকদের জন্য এটাও আলাদা আকর্ষণ।

অনেক দম্পতি এই উৎসবের সুযোগ নিয়ে হারবিনে তাদের বিয়ের আয়োজন করেন বরফ নগরীতে ও বরফ নগরীর ভাস্কর্যকে বিয়ের থিম হিসাবে ব্যবহার করে। জনপ্রিয় এই বিয়ের ভেন্যু বুক করার জন্য লম্বা লাইন পড়ে হবু দম্পতিদের।

 

এছাড়াও এই উৎসবের মরশুমে হারবিনে আয়োজন করা হয় বরফের ঢাল বেয়ে স্লেজ চালানোর, চলে বরফে ফুটবল (আইস ফুটবল) এবং হকি (আইস হকি) খেলা। থাকে স্পিড স্কেটিং ও স্কি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা।

 

প্রতিবছর শীতকালে চীনের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয় হারবিন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, সম্প্রতি তিন দিনের খ্রিষ্টীয় নববর্ষের ছুটিতে ৩০ লাখের বেশি পর্যটক স্থানটি ভ্রমণ করেছেন।

আন্তর্জাতিক বরফ ও তুষার ভাস্কর্য উৎসবের উদ্বোধন বরফের শহরের শীতকালীন পর্যটনের জন্য সুবর্ণ সময়কালের সূচনা করেছে। উৎসবটি মার্চের গোড়ার দিক পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।


প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম

 

২। ভিসা ছাড়াই থাইল্যান্ড ঘুরতে পারবেন চীনা পর্যটকরা

কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে আনন্দে কিছুটা সময় কাটাতে অনেকেই ছুটেন থাইল্যান্ডে। কেউবা যান ব্যাংকক ,কেউবা চিয়াং মাই আবার কেউবা ফানোম র‍্যাং।  থাইল্যান্ডের এই পর্যটন গন্তব্যে যেতে চীনা নাগরিকদের লাগবে না কোন ভিসা। চীনা নাগরিকদের স্থায়ীভাবে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে চলেছে চীন । চীনের নাগরিকদের থাইল্যান্ড ভ্রমণে লাগবে না কোন ভিসা।

পর্যটক টানতে গেল সেপ্টেম্বরে চীনা নাগরিকদের থাইল্যান্ডে প্রবেশে ভিসার বাধ্যবাধকতা বাতিল করেছিল থাই কর্তৃপক্ষ। তাদের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক সাড়া দেন চীনা পর্যটকরা। ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার প্রথম দুই দিনেই দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে প্রবেশ করেন ২২ হাজারের বেশি চীনা পর্যটক।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন আমরা সীমান্ত খুলে দিতে এবং পারস্পরিকভাবে উভয় দেশের পর্যটকদের ভালো যত্ন নিতে প্রস্তুত। এই সিদ্ধান্ত চীন-থাইল্যান্ড সম্পর্কোন্নয়নের প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে থাই পাসপোর্টের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

মালয়েশিয়ার পর চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক পায় থাইল্যান্ড। থাই পর্যটন কর্তৃপক্ষ গত নভেম্বরে জানিয়েছিল, ২০২৩ সালজুড়ে ৩৫ লাখ চীনা পর্যটক পাওয়ার আশা করছে তারা। যদিও তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ৪০ লাখ।

এই সংখ্যাটিও অবশ্য ২০১৯ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। করোনা মহামারির আগে সে বছর প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ চীনা পর্যটক থাইল্যান্ড ভ্রমণে গিয়েছিলেন। তবে ২০২২ সালে চীন থেকে মাত্র ২ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক পেয়েছিল থাই কর্তৃপক্ষ। সেই হিসাবে ২০২৩ সাল তাদের জন্য যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। ২০২৪ সালে অন্তত ৮২ লাখ চীনা পর্যটক পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে থাইল্যান্ড।

এ অবস্থায় বন্ধুত্বের প্রতিদান হিসেবে চীনও থাই নাগরিকদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে চলেছে। গত নভেম্বরে ইউরোপ-এশিয়ার ছয় দেশের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ঘোষণা করেছিল বেইজিং। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও মালয়েশিয়া।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম

 

৩। কুয়াংচৌ শহরের জমজমাট এলাকা সান ইউয়ান লি

কুয়াংতোং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌ একটি জমজমাট শহর। আর এই শহরের একটি সুপরিচিত পাড়া হলো সান ইউয়ানলি। এখানে রয়েছে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। অনেক বিদেশী এখানে থাকেন। এখানে কম দামের হোটেল থেকে শুরু করে বেশি দামের হোটেল পর্যন্ত সব রকম ব্যবস্থাই রয়েছে।

এই এলাকায় রয়েছে সান ইউয়ানলি টেম্পল। এটি একটি তাও টেম্পল বা তাও মন্দির। বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখানে চীনা মুক্তিকামী জনতা সমবেত হয়েছিলেন। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জাদুঘর রয়েছে। এই জাদুঘরে চীনের অনেক দেশপ্রেমিক বীরের পরিচিতি রয়েছে।

এখানে রয়েছে সান ইউয়ানলি স্মৃতি পার্ক। এই পার্কে বিপ্লবী শহীদ বীরদের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। সান ইউয়ানলি আরও কিছু বিষয়ের জন্য বিখ্যাত। পর্যটকরা এখানে আসেন চামড়ার তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী কেনার জন্য। এখানে সুবিধাজনক দামে বিভিন্ন রকম লেদার ব্যাগ, জ্যাকেট ইত্যাদি পাওয়া যায় । এখানকার জুতাও বিখ্যাত। লেদার সামগ্রীর বেশ কয়েকটি মার্কেট আছে এই এলাকায়।

সান ইউয়ানলি রেস্টুরেন্ট পাড়া হিসেবেও বিখ্যাত। সন্ধ্যার পর এলাকাটি জমজমাট হয়ে ওঠে নানা দেশের মানুষের পদচারণায়।

সান ইউয়ান লি পার্ক এবং খোলা চত্বরে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে প্রায়ই। সান ইউয়ান লি মেট্রো স্টেশনে সরাসরি বিমান বন্দর থেকেও পৌছানো যায়।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী