২০২৪ সালের নববর্ষের শুভেচ্ছাবাণীতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, চীনে টানা ২০ বছরের মতো খাদ্যের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে নতুন আবহ দেখা গেছে। নতুন বছরের শুরুতে আশাবাদী এ ভূমিতে কোটি কোটি কৃষক নতুনভাবে কাজ শুরু করেছে। তারা শক্তিশালী কৃষিনির্ভর দেশ গড়ে তুলছে এবং গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনে অবদান রাখছে।
শীতকাল হলেও বরফ ও তুষারে ঢাকা উত্তর-পূর্ব চীনের গ্রামে উষ্ণ বায়ুমণ্ডল দেখা যায়। হেই লং চিয়াং প্রদেশের উ চাং শহরের চেং সিং গ্রামে, সিপিসির সম্পাদক ইউয়ু তিয়ান হং উ চাং চাল বিক্রি করতে একটি ই-কমার্স লাইভ সম্প্রচার দলকে গ্রামে আসার আমন্ত্রণ জানান।
চে সিং গ্রাম, উ চাং চালের কেন্দ্রীয় উত্পাদন এলাকায় অবস্থিত। যদিও গত অগাস্ট মাসে বহু বছর পর অভূতপূর্ব বন্যা দেখা দেয়। তবে সবার যৌথ প্রচেষ্টায় দুর্যোগের প্রভাব সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বসন্ত উত্সব আসছে এবং উ চাং চালের বিক্রির শীর্ষ সময়ও আসছে, গ্রামের বাসিন্দারা এজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ইউয়ু তিয়ান হং বলেন, আমরা প্রতিদিন ব্যস্ততায় থাকি। অর্ডার গ্রহণ করি, উত্পাদন করি। ক্লান্ত হলেও টাকা উপার্জন করতে পারি ভেবে অনেক আনন্দ লাগছে।
২০২৩ সালে যদিও চীনে বিরল প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও টানা ২০ বছর ধরে খাদ্যের বাম্পার ফলন বাস্তবায়ন হয়ে আসছে, খাদ্য উত্পাদনের পরিমাণে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ বাম্পার ফলনের মূল কারণ হল কমরেড সি চিন পিং কেন্দ্রিক সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি ১৪০ কোটি মানুষের খাওয়ার সমস্যা দেশ প্রশাসনের প্রধান কাজ হিসেবে মনে করে।
গেল এক বছরে, সি চিন পিং গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন ও তৃণমূলে পরিদর্শনে সবসময় খাদ্য নিরাপত্তার উপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছন। হ্য পেই প্রদেশের চাং চৌ শহরে, তিনি লবণাক্ত-ক্ষার জমির উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং এমন জমির সহনশীল জাতের প্রচারে খোঁজ খবর নিয়েছেন। ইনার মঙ্গোলিয়ার পা ইয়ান নাও এ্যতে, জমি, বীজ, বৈজ্ঞানিক সেচসহ নানা ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিয়েছেন। গত বছরের শিষ দিকে অনুষ্ঠিত সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম বিষয়ক কর্মসভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, চাষের জমির আয়তন ও উত্পাদন ক্ষমতা জোরদার করা হবে।
বর্তমানে চাষের ফাঁকে চীনের নানা জায়গায় উচ্চ মানের চাষের জমি নির্মাণের কাজ চলছে। চিয়াং সি প্রদেশ ৮০০ কোটি ইউয়ান বিনিয়োগের মাধ্যমে সারা প্রদেশের ৯৩টি জেলার ৩০০০টির বেশি চাষের জমিতে উচ্চ মানের চাষের জমি নির্মাণ করছে।
চলতি বছর চীনে নতুন করে ১০০টি জেলায় ভুট্টা, ১০০টি জেলায় গম আর ১০২টি জেলায় অন্যান্য কৃষিপণ্য উত্পাদনের ক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি কৃষির কেন্দ্রীয় প্রযুক্তির গবেষণাও এগিয়ে যাচ্ছে। হু নান প্রদেশের ছেন চৌ শহরের একটি কৃষি যন্ত্রপাতি কোম্পানি আগে ছোট কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করত। আর এখন তারা ১৬০ এইচপি ও ১৮০ এইচপি ক্রলার ট্র্যাক্টর তৈরি করছে। এমন মেশিন আগে চীনে ছিল না। বছরের শুরুতে তাদের সব পণ্য দ্রুত বিক্রি হয়েছে। আন হুই প্রদেশের একজন কৃষি যন্ত্রপাতি ডিলার সিয়ে ইউয়ু পিং বলেন, আমি একবার এমন ২৫টি ট্র্যাক্টর কিনেছি। এত শক্তিশালী ট্র্যাক্টর সাধারণ বা জরুরি অবস্থায় ভালভাবে কাজ করতে পারে।
চীনের গ্রামে আছে আরও বেশি যুব মানুষ। ১.২ কোটির বেশি যুব মানুষ গ্রামে ফিরে ব্যবসা শুরু করেছে। তা মেং একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন, এখন তিনি ইউননান প্রদেশে একটি অ্যাভোকাডো-থিমযুক্ত কৃষি, সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন সমন্বিত খামার খুলেছেন। অ্যাভোকাডো ফলনের সময় আসছে এবং বসন্ত উত্সবে প্রথম দফা পর্যটক খামারে আসবে। তা মেং আশা করেন ২০২৪ সালে ৬০০জন কৃষক নিয়ে পরিবেশগত ও টেকসই উপায়ে ১০ হাজার অ্যাভোকাডো গাছ চাষ এবং শিল্প পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যাবে।
(শিশির/তৌহিদ/রুবি)