চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫০
2024-01-06 15:59:33


১. চীনে খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদযাপন

লেজার শো, ফায়ারওয়ার্ক শো বা আতশবাজিসহ বর্ণাঢ্য আয়োজনে চীন জুড়ে উদযাপিত হয়েছে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০২৪। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গেল রোববার চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে রাতভর চলে নানা আয়োজন। 

উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের চিলিন শহরে আলোকসজ্জা, আতশবাজি ও একটি লেজার লাইট শো প্রদর্শনের মাধ্যমে নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়।

পার্শ্ববর্তী লিয়াওয়ুয়ান সিটিতে একটি তুষার-থিমযুক্ত পার্ক পর্যটকদের তুষার এবং বরফের ভাস্কর্য যেমন তুষারমানব, প্রাণী এবং স্থাপত্যের মতো সুন্দর আকারের শিল্প উপস্থাপন করে। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে পার্কে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে।

উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের শেনইয়াং শহরেও, আলোকসজ্জার পাশাপাশি গান ও নাচ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালকে বরণ করে নেয় অপেক্ষমাণ জনগণ। 

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপ্যালিটির কেন্দ্রস্থলে একটি স্কয়ারে ঘণ্টা বাজিয়ে ২০২৩কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।

আতশবাজি ফুটিয়ে চীনের হংকং এবং ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। হংকংয়ের ভিক্টোরিয়া হারবার এবং ম্যাকাওয়ের ম্যাকাও টাওয়ারে যথাক্রমে আতশবাজি ও লাইট শো’র আয়োজন করা হয়। ২০২৪কে স্বাগত জানাতে জড়ো হন নাগরিকরা।   

হংকং ট্যুরিজম বোর্ডের মতে, এই বছরের আতশবাজির প্রদর্শনী ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের ছিলো। এর আগে এই অঞ্চলে নববর্ষের আগের দিন গণনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ম্যাকাওর কালচারাল ব্যুরো।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।

 

২. সিএমজি’র জমকালো নববর্ষ-গালা

জমকালো আয়োজন আর বর্ণিল আতশবাজির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববাসী। তারই অংশ হিসেবে চীনেও তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। নতুন বছরকে বরণ করতে এবং দর্শকদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে প্রতি বছরের মত এবারও সিএমজি আয়োজন করে জাঁকজমকপূর্ণ এক গালা অনুষ্ঠানের।

ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের এবারের নাম ‘সেট সেল ২০২৪’। পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের তাইচৌতে মঞ্চস্থ করা হয় মনোমুগ্ধকর এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনাটি । 

৫ হাজার বছরের পুরনো চীনা ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিশেলে এই আয়োজনে ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং শৈল্পিক নান্দনিকতার সংমিশ্রণ, যা দর্শকদেরকে একটি উন্নত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করে।

 

মনোমুগ্ধকর এই গালায় তুলে ধরা হয় শুচৌর পিংথান। এটি মূলত  দক্ষিণ চিয়াংসু প্রদেশের জনপ্রিয় একটি বাদ্যযন্ত্র।

মৌখিক পারফরম্যান্সের মধ্যে ছিল বিশেষ শিল্প ফর্ম, থিয়েন চিন ক্ল্যাপার টক যা মূলত হাতের তালির সাথে ছন্দময় কথার একটি দারুন পরিবেশনা। 

 

এ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব চীনের লোকনৃত্য, মার্শাল আর্ট এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা বাদ্যযন্ত্রকেও দারুন ভাবে তুলে ধরা হয় বর্ণাঢ্য গালাতে।

স্ট্রিট ড্যান্সের সাথে চীনের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মিশেলে ছিল একটি যৌথ পরিবেশনা। একটি  ক্রিয়েটিভ, উদ্যমী এবং মৌলিক নাচের সাথে চীনা লোকনৃত্যের এই মিশেল অনুষ্ঠানে যোগ করে নতুন মাত্রা। 

এ ছাড়াও নাচ, গান, অপেরা এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের পারফরম্যান্স ছিল মনোমুগ্ধকর। গায়ক, অভিনেতা এবং পারফর্মিং শিল্পীদের  তারকা-খচিত পরিবেশনা দারুণ উপভোগ করেছেন চীন ও বিশ্বের দর্শক। 

৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২.০১ মিনিট থেকে চীন জুড়ে একাধিক টিভি এবং রেডিওর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে একযোগে  সম্প্রচারিত হয় এই গালাটি অনুষ্ঠানটি ।  

 

৩. ঢাকায় হ্যালো চায়না নিউইয়ার কনসার্ট

 

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ৫৫তম বর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে গেল ১ জানুয়ারি, নতুন বছরের প্রথম দিনে দীপ্ত টিভির কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো ‘হ্যালো চায়না নিউ ইয়ার কনসার্ট’। 

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এবং বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইয়ান হুয়ালং।

অনুষ্ঠানে চায়না মিডিয়া গ্রুপের আফ্রিকান ও এশিয়ান কেন্দ্রের পরিচালক আন সিয়াও ইয়ু ভিডিও বার্তা পাঠান। বেইজিং থেকে অনলাইনে যোগ দেন সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে আদান-প্রদান বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানান দীপ্ত টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান।

 

চায়না মিডিয়া গ্রুপ এবং দীপ্ত টিভির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কনসার্ট মাতান বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তাহসান এবং রক ব্যান্ড চিরকুট। 

এ সময় চায়না মিডিয়া গ্রুপকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকার কথা বলেন শিল্পী তাহসান।

দুই দেশের গানের আদান প্রদান আরও বৃদ্ধি করা উচিত উল্লেখ করে এই ধরণের আয়োজন চীন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও বাড়াবে বলে জানান এই দুই শিল্পী।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি ওই সময়ের রেডিও পিকিংয়ের মাধ্যমে। পরবর্তীতে রেডিও পিকিংয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে রেডিও বেইজিংয়ে পরিণত হয় এবং পরে তা পরিবর্তন হয়ে বিশ্বে সুপরিচিতি পায় চীন আন্তর্জাতিক বেতারে।

২০১৮ সালে চীন আন্তর্জাতিক বেতার এবং আরও ৩টি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম – চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন (সিসিটিভি), চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন) এবং চায়না ন্যাশনাল রেডিও (সিএনআর) নিয়ে গঠিত হয় চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি। 

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী /সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

ছবি: নাসুরুল্লাহ মানসুর রাসু।

----------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।