মোবাইল ফোনকে শেলফে রেখে লাইভস্ট্রিমের পেইজে গিয়ে পরিচিত দর্শকদের অভিবাদন জানানোর পর পিছনে মাটি থেকে একটি তাজা সবুজ মূলা তুলে এ দিনের লাইভস্ট্রিম শুরু করেছেন চাং রুই।
“এ মূলা রসালো। খেতে মিষ্টি ও ঝাঁঝালো, যা ফলের মতো।” এ বিশেষ ধরনের মূলার গুণ, স্বাদ ও পুষ্টি এবং চাষের ইতিহাস, বীজের উত্স, চাষের প্রক্রিয়াসহ সব প্রক্রিয়া লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে তুলে ধরেন চাং রুই।
তার আন্তরিক ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনের কারণে লাইভস্ট্রিমে দর্শকরা খুব উৎসাহ দেখান এ মূলার ব্যাপারে। অনেকে মূলার গুণ, পাঠানোর উপায়, পাঠানোর সময় ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান। চাও রুই ধৈর্য্য সহাকারে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন।
“একবার লাইভস্ট্রিম করলে তা প্রায় ১ হাজার দর্শক সরাসরি দেখেন এবং ৩ লাখেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় সে ভিডিও।” লাইভস্ট্রিম সম্পর্কে চাও রুই দম্পতি হাসিমুখে এ কথা বলেন। মূলা স্বাদ ও লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির পদ্ধতির কারণে চীনের থিয়ান চিন শহরের সিন খৌ উপজেলার সিয়াও শা ওয়ো গ্রামে বসবাসরত এ কৃষক দম্পতি সুন্দর জীবনের দেখা পেয়েছেন।
সিয়াও শা ওয়ো গ্রাম থিয়ান চিন শহরের দক্ষিণে বেইজিং-হাংচৌ মহাখালের তীরে অবস্থিত। এখানকার মাটির উপর অংশ বালি এবং নিচের অংশ এঁটেল। মহাখালের পানির কারণে এখানকার মূলা খুব মিষ্টি, যেটি নাসপতির চেয়ে ভালো’ বলে স্বীকৃত।
চাং রুই ও কুও ছিং দম্পতি জানান, তাদের পুর্বপুরুষরা বরাবরই এ শা ওয়ো মূলা চাষ করেছেন। এক সময়ে এ মূলা সড়কের ঘাটে নিয়ে খুচরা বিক্রি করতেন কিংবা পাইকারী বিক্রি করতেন তারা। তবে নিজেদের চাষ করা মূলার বিক্রি ভালো ছিল না।
২০১৮ সালে শহরের কাজ ছেড়ে গ্রামবাড়িতে কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন এ দম্পতি। তারা ইয়োং ইয়োং শা ওয়ো মূলা চাষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে শাও ওয়ো মূলা বিক্রি শুরু করেন। চাং রুই বলেন, “স্থানীয় সরকার শা ওয়ো মূলাকে জনগণের সমৃদ্ধির শিল্পে পরিণত করতে যে সহায়তা নীতি প্রবর্তন করেছে, তা দেখে আমি নিজেই ইন্টারনেট বিক্রির অভিজ্ঞতা থাকার কারণে অনলাইনে বিক্রির পদ্ধতি গড়ে তুলি।”
চাং রুই মনোযোগ দিয়ে লাইভস্ট্রিমের স্ক্রিপ্ট লেখেন এবং লাইভস্ট্রিমের উপস্থাপন অনুশীলন করেন। বিশেষ করে তিনি নিজের গ্রিনহাউসে লাইভস্ট্রিম করতে শুরু করেন, যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহক বাস্তব পরিবেশে ক্রয়ের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। কুও ছিং নিজেই লাইভস্ট্রিম পরিচালনা শেখেন এবং ই-কমার্সে যুক্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং লজিস্টিক গ্রহণ করেন। তাছাড়া শা ওয়ো মূলা শীতকালে বাজারজাত হওয়ার কারণে বিশেষ প্যাকেজ বাছাই করেন তিনি।
এ দম্পতির প্রচেষ্টায় প্রথম দিকে ১০০ বাক্স মূলা বিক্রি হতো। বর্তমানে এর পরিমাণ দিনে ১ হাজার বাস্কে পৌঁছেছে। এখন চাং রুই দম্পতির গ্রিনহাউসের সংখ্যা ২০টি ছাড়িয়ে গেছে। শা ওয়ো মূলা বর্তমানে এ পরিবারের উপার্জন বাড়ানো এবং সমৃদ্ধ অর্জনের মূল উপায়ে পরিণত হয়েছে।
বছরের শেষ দিকে মূলার স্বাদ সবচেয়ে ভালো হয়। লাইভস্ট্রিমের ফাঁকে এ দম্পতি কয়েক দিন আগে শৈত্যপ্রবাহের কারণে পাঠানো যায়নি এমন মূলা পাঠান। প্রতিদিন তাদের জমি থেকে তোলা আড়াই হাাজর কেজি মূলা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া কুও ছিং ও চাং রুই দম্পতি শুটিং ও এডিটিং করার কৌশল শিখেছেন। গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে ৫শরও বেশি ভিডিও তৈরি করেছেন চাং রুই ও কুও ছিং। কিছু কিছু ভিডিওতে নিজেদের পণ্য চাষের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন। কিছু ভিডিওতে ফসলের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। সে সব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভিডিওর মাধ্যমে তাদের আকাউন্টে ফলোয়ারের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বর্তমানে সিন খৌ উপজেলার শা ওয়ো মূলা চাষের আওতাধীন জমির আয়তন ৪০০ হেক্টরে ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ ৩ কোটি কেজিতে উন্নীত হয়েছে এবং উপার্জন ১২ কোটি ইউয়ানে পৌঁছেছে।
(রুবি/রহমান)