জানুয়ারি ৫: ‘জীবনে আমরা এখন যে চাপের মুখোমুখি হচ্ছি তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমাদের যেন গলায় দড়ি পড়েছে, আর ফাঁসটা যেন ক্রমশ কঠিন হয়ে চেপে বসছে গলায়’। মার্কিন নাগরিক কার্ল উইলেটের এমন বক্তব্য থেকে ধারনা করা যায়, ২০২৩ সাল তার জন্য একটি খুব অসুখী বছর ছিল। মার্কিন সরকারের ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ এবং পণ্যের উচ্চ দামসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের প্রভাবে উইলেটের মতো সাধারণ মার্কিন অধিবাসীরা ভারী আর্থিক বোঝা বহন করছেন।
নতুন বছরের শুরুতেই মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য তাদের আরেকটি ধাক্কা দিয়েছে। স্থানীয় সময় গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী ঋণের মোট পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৩৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
৩৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মানে কি? মার্কিন সংশ্লিষ্ট সংস্থার জরিপ অনুসারে, এটি মার্কিন জিডিপির ১২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর মানে এই যে প্রত্যেক মার্কিন অধিবাসীর ঘাড়ে অন্তত ১ লাখ মার্কিন ডলার ঋণের দায় রয়েছে। যদি প্রতিটি মার্কিন পরিবার ১ হাজার মার্কিন ডলার অবদান রাখে, তাহলে এই বিশাল ঋণ পরিশোধ করতে আরও ২২ বছর লাগবে। এটি মার্কিন অর্থনীতি এবং সমাজের উপর যে চাপ দিয়েছে তা অভাবিত।
যুক্তরাষ্ট্রের এত বিশাল ঋণ কিভাবে হলো? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা সিএমজি’র সম্পাদকীয়তে বলেছেন যে, ঘাটতি পূরণের জন্য, মার্কিন সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ঋণ থেকে অর্থ পেয়েছে। অত্যন্ত কম ঋণের খরচের কারণে, ‘মার্কিন ঋণ স্নোবল’ বড় থেকে আরও বড় হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকে মার্কিন অর্থনীতি মন্দাবস্থায় পড়েছে। এ অবস্থা থেকে টেনে তুলতে প্রচুর পরিমাণে ঋণ নেয় মার্কিন সরকার, যার ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধির গতি প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে দ্রুত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি রোধ করার জন্য, ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে, মার্কিন সরকারের ঋণ পরিশোধের খরচ আরও বেড়েছে। সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স কমানোর ফলে ঋণের মাত্রা অনিবার্যভাবে প্রসারিত হয়েছে।
তবে এই ধরণের ‘মার্কিন ঋণ স্নোবল’ থামবে না। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রতি বছর মার্কিন সরকারের ঋণ ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হবে। মার্কিন দুটি দল আর্থিক সমস্যা নিয়ে তীব্রভাবে লড়াই করছে এবং সরকার তার ঋণ সমস্যা সমাধানের কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখাতে পারছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন ঋণ সমস্যা আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন সরকারী ঋণের মধ্যে বিদেশী ঋণ অ্যাকাউন্ট একটি উচ্চ অনুপাতে রয়েছে। মার্কিন ঋণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে, যা অনিবার্যভাবে মার্কিন অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে প্রভাবিত করবে। যদি বিনিয়োগকারীরা তাদের মার্কিন ঋণের ধারকাংশ কমিয়ে দেন বা সেগুলো বিক্রি করেন, তাহলে মার্কিন ডলার দেয় বা সেগুলি বিক্রি করে, তাহলে মার্কিন ডলার অবমূল্যায়নের চাপের সম্মুখীন হবে, যা মার্কিন সরকারের ঋণ পরিশোধের বোঝা এবং তহবিল সংগ্রহকে আরও কঠিন করে তুলবে।
ঋণ সংকটের প্রেক্ষাপটে, মার্কিন দুটি দল বাজেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড লড়াই চালিয়ে যাবে। এতে ঐকমত্যে পোঁছাতে না পারলে অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে না পার্লামেন্ট, আর মার্কিন সরকার আরেকটি শাটডাউনের সম্মুখীন হতে পারে।
এই ধরণের অবস্থা দেখা দিলে, বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মচারী অবৈতনিক ছুটি নিতে বাধ্য হবে বা তাদের মজুরি বিলম্বিত হবে। আর খরচ কমাতে যে প্রকল্পগুলো চালানো যাবে না, দেখা যায় সেগুলো প্রায়শই জনগণের জীবিকার প্রকল্পগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। অন্য কথায়, শেষ পর্যন্ত এটি আবারও সাধারণ মার্কিন জনগণের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
মার্কিন ফক্স নিউজ প্রকাশিত ২০২৩ সালের শেষের একটি জরিপ দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি নিবন্ধিত ভোটার মনে করেন, মার্কিন অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় পড়েছে। এটা ধারনা করা কঠিন নয় যে, মার্কিন অর্থনীতির এ গভীর সংকটের সমাধান ‘দূর অস্ত’।
(ওয়াং হাইমান/হাশিম)