এবারের পর্বে রয়েছে
১. চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া যায় ?
২. চীনে বাড়ছে বিশেষ প্রজাতির পাখির সংখ্যা
নিজ দেশের নাগরিকসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের জন্য সুখবর নিয়ে এলো চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। বলা যায় বেশ বড় পরিসরেই উদ্যোগ নিয়ে এ দেশের কৃষিখাতের বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্য দিয়ে পেছনে পড়ে থাকা ছোট-ছোট গ্রামগুলো পরিণত হচ্ছে চালিকা শক্তিতে। দিনশেষে এ ধরেন বাস্তবসম্মত উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
মিশরেও বেড়েছে চিনির দাম, কী উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির সরকার?
শান্তা মারিয়া:
বাংলাদেশের মতো দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নতুন কোন ঘটনা নয়। এজন্য বলাই যায় এরকম বিষয়গুলোর সঙ্গে এক রকম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন এদেশের মানুষ, কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এবার আপনারা শুনবেন মিশরের চিনির মার্কেট সম্পর্কে।
আপনাদের জানাতে চাই কেন দেশটিতে চিনির দাম কীভাবে বাড়লো, আর সব মিলিয়ে নাগরিকদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিশনের উদ্যোগগুলো কতটা কাজে লাগছে ?
চিনি, শব্দটা মিষ্টি হলেও বিশ্বজুড়ে বেশ কদর রয়েছে এর।
রান্না ঘরের অন্যতম অনুসঙ্গ এই চিনির স্বাদে যেমন ভিন্নতা রয়েছে তেমনি এর দামও কখনো কখনো চলে যায় নাগালের বাইরে।
বাংলাদেশে প্রায় সময় শোনা যায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। তবে শুধু বাংলাদেশ নয় মিশরসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে এখন পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী হয়েছে।
সম্প্রতি মিশরে দাম বেড়ে যাওয়া পণ্যের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে চিনি। নিত্য দিন ব্যবহার করা এই কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
পরিস্থিতি নাগালের মধ্যে রাখতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে সব ধরনের চিনি রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মিশর।
পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের মিষ্টি খাবার তৈরি করা একজন গৃহিনী নোহা জানিয়েছেন তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
“আমরা সবাই খুব অবাক হয়েছি ! কেন এমন হলো? অন্যান্য সামগ্রীর দাম যখন বেড়ে যায় তখন আমরা পরিমাণে কম কিনি এবং ব্যবহারের পরিমিতি আসে। এখন ঠিক সেভাবেই কম পরিমাণ চিনির ব্যবহার করছি। এতে অবশ্য পরিবারের সদস্যদের মিষ্টি খেতে চাওয়ার অভ্যেসেও ভারসাম্য এসেছে। একদম ছোট সদস্য আমার ছেলে বলে, “থাক আম্মু , আপাতত চিনি একটু কম খাই। দাম কমলে তখন বেশি করে মিষ্টি বানিয়ে দিও।“
মিশরে চিনি দিয়ে নানা রকম মুখরোচক খাদ্য তৈরি হয়। মিশরীয়রা মিষ্টি, বিস্কিট,হালুয়া, কেকসহ নানা রকম মিষ্টি খাদ্য পছন্দ করেন। তারা এমনকি চায়েও চিনি ব্যবহার করেন।
তাই চিনির দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ফারামাওয়ে নামের এক ক্রেতা কাছে শুনবো তার অভিজ্ঞতার কথা।
“আমাকে চিনি এবং চিনিজাত সামগ্রী কিনতে হবে। আমার বড় পরিবার। চার ছেলেমেয়ে এবং নাতিনাতনি আছে। আগে ৩০ ইজিপশিয়ান পাউন্ড দিয়ে কেক কিনতাম। এখন এর দাম ৬০ ইজিপশিয়ান ডলার। দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মানুষের হাতের নাগোলে দামটা থাকা উচিত।“
চিনির দাম বাড়ার কারণেই কেক থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়েছে। মহি আবদেল সালাম নামের একজন অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেলো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম?
“রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে সরবরাহ চেইনে সমস্যা হয়েছে। মিশরসহ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। আরেকটি কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এরফলে ব্যাপকভাবে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খরা ও অন্যান্য কারণে ভারত ও থাইল্যান্ডের মতো বিশ্বের বৃহত্তম দুই রপ্তানিকারক দেশেও কৃষিখাতে ধ্বস নেমেছে।“
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত খরা ও বন্যার কারণে বিভিন্ন দেশে ফসল হানির কারণে বাড়ছে বিভিন্ন কৃষিপণ্যের দাম।
আবার অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়াচ্ছে চিনির দাম। এজন্য মিশরের সরকার পদক্ষেপও নিয়েছে। এবার চলুন শুনে আসি মিশরীয় সিনেটর আদেল নাসের কী বলছেন?
“যারা বাজারকে অস্থির করে, সরকার ওই ধরনের ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করছে, কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। সরকার চিনির সরবরাহ বাড়াতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি দিয়ে কম মূল্যে চিনি সরবরাহ করছে।“
জনগণের কথা ভেবে কী ধরনের কার্যকর উদ্যোগ নিলো মিশর সরকার?
"রাজ্য আরও প্লট জমি চাষ করছে। সরকার প্রায় ৫ মিলিয়ন ফেডান (প্রায় ২.১ মিলিয়ন হেক্টর ) চাষ করার একটি ভাল বিস্তৃত পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০,০০০ফেডান (প্রায়১৪৭,০০০ হেক্টর) সুগার বিট, আখ এবং গম সহ অন্যান্য কৌশলগত তেল, গম এবং চিনির মতো ফসল উৎপাদন হবে। সফল হলে, ২০২৪-২০২৫ সালের পরে আমাদের এই পণ্যগুলি আমদানি করতে হবে না"
এভাবেই নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সব রকমভাবে চেষ্টা করছে মিশরের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা।
সম্পাদনা: অভি/রহমান
কার্যকর উদ্যোগে চীনে বাড়ছে বিশেষ প্রজাতির পাখির সংখ্যা
শুভ আনোয়ার:
বিপন্ন কিংবা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সুরক্ষায় বিশেষ নজর দিয়ে থাকে চীন গবেষকরা। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ। এ নিয়ে আমাদের হাতে একটি প্রতিবেদন আছে।
বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাখি ক্যাবটস ট্রাগোপান। তিতিরের প্রজাতির এই পাখিটি এতোটাই বিরল যে একে সম্মান করে করে চীনারা ‘জায়ান্ট পান্ডা অব বার্ড’ অর্থাৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাখি হিসেবে দেখে। সম্প্রতি চীনের নানাবিধ পদক্ষেপ আর সুরক্ষা ব্যবস্থার এ পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া উচ্ছ্বসিত দেশটির বন কর্মকর্তা-কর্মীরা।
মূলত আবাসস্থল সংকুচিত হওয়া এবং মানুষের শিকারের কারণেই এই পাখির জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। চীনের প্রথম স্তর সুরক্ষার অধীনে রয়েছে ক্যাবটের ট্রাগোপান।
স্ত্রী পাখি পুরুষের চেয়ে ছোট এবং এর পালক পুরুষ পাখির মতো রঙিন নয়।
শত্রুদের আক্রমণ মোকাবেলায় এদের বোকামি এবং ধীর প্রতিক্রিয়া, কম উর্বরতার হার এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণেও এদের সংখ্যা কমেছে।
যদিও ক্যাবটের ট্র্যাগোপানের সংখ্যা বৃদ্ধির কাজটি কঠিন ছিল। এরপরও বহু বছর ধরে নানা পদক্ষেপে এদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি আনন্দদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি চীনের উয়িশান ন্যাশনাল পার্কের চিয়াংসি এলাকায় বন কর্মীরা জাতীয় উদ্যানের উত্তর অংশে কাবোটের ট্রাগোপানে দেখা পেয়েছেন।
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সংযোগস্থলে অবস্থিত, উয়িশান জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
২০১৬ সালে প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য উয়িশান ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভ এবং উয়িশান ন্যাশনাল পার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একত্র করে একটি পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করা হয়। এই এলাকাটিকে ২০২১ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে উয়িশান জাতীয় উদ্যানকে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো। এটি ‘সাপের রাজ্য, পতঙ্গের জগত এবং পাখিদের স্বর্গ নামেও পরিচিত।
উয়িশান ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভের (চিয়াংসি) ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর পরিচালক ফান ছিয়াংইয়ং বলেন, “উয়িশান ন্যাশনাল পার্কের ফ্লাগশিপ বা প্রধান প্রজাতি এই ক্যাবটস ট্রাগোপান। ২০১২ সালে চিয়াংসি অঞ্চলে এই পাখির আবাসস্থলের ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মিটারের মধ্যে এক জরিপে ৪০০ থেকে ৬০০টি ক্যাবটস ট্রাগোপানের দেখা পাওয়া যায়। বর্তমানে ৪০০ থেকে দুই হাজার মিটারেরও বেশি অঞ্চলজুড়ে এই পাখির আবাসস্থল এবং এদের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।”
কণ্ঠ: বিপুল
সম্পাদনা: রহমান
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী