‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৫১
2024-01-02 14:51:21

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে     

১। পর্যটক আকর্ষণ করছে উত্তর চীনের স্কি রিসোর্ট, বাড়ছে স্থানীয় কর্মসংস্থান

২। চীনের জনপ্রিয় শীতকালীন খাবার হটপট

৩। শাওশান গ্রামে মহান নেতার স্মৃতি জাদুঘর

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৫১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।       

১। পর্যটক আকর্ষণ করছে উত্তর চীনের স্কি রিসোর্ট

বরফঢাকা স্থানে স্কি করছেন একদল পর্যটক। এমন দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে উত্তর চীনের স্কি রিসোর্টগুলোতে। হেইলংচিয়াং প্রদেশের শাংচি সিটির ইয়াবুলি টাউন। এখানে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিকমানের স্কি রিসোর্ট। চারটি স্কি এলাকা রয়েছে এখানে যেখানে ৫৬টি পিসতেস রয়েছে। এই এলাকায় ১৮ হাজার মানুষ স্কি করতে পারেন।

যাদের স্কি করার কোন অভিজ্ঞতা নেই তারা এমন পিসতেস বেছে নিতে পারেন যেখানে একেবারে যারা শুরু করছেন তারা পেশাদার কোচের কাছে নিরাপদে স্কি শিখতে পারবেন।

হুবেই থেকে আসা পর্যটক ইয়িন ছেংকাং বলেন, “এই রিসোর্টের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হলো এখানে অনেক রকম পিসতেস রয়েছে। এর কিছু প্রাকৃতিক পিসতেসও রয়েছে যেগুলো অরণ্যের ভিতরে অবস্থিত। এগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এই রিসোর্টের পর্যটকদের জন্য অনেক সুযোগসুবিধা আছে। তাই, আপনি যদি আনন্দ করতে চান তাহলে অবশ্যই এখানে আসতে পারেন। এটা বেশ ভালো রিসোর্ট”।

কুয়াংতোং থেকে আসা পর্যটক চাং লিংলিং বলেন, “এটা বেশ মজার। আমরা দক্ষিণ থেকে এসেছি। আমরা মাত্র স্কি করা শুরু করেছি। দারুণ উত্তেজনাকর। এখানকার দৃশ্যও খুব সুন্দর। যেভাবেই ছবি তোলেন ভালো হবে। প্রকৃতি এত সুন্দর, আকাশ খুব নীল, চোখকে শান্তি দেয়”।

এখানে একদিনে ১১ হাজার পর্যটক আসার রেকর্ডও রয়েছে। পর্যটকদের আসার ফলে স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান হচ্ছে।। হোম স্টেগুলোতে আয় বাড়ছে। স্কি কোচের চাকরির সংখ্যাও বাড়ছে।

৩২ বছর বয়সী ওয়াং তাওয়েই একজন পেশাদার স্কিকোচ। পেশাদার স্কি কোচ হিসেবে কোয়ালিফায়েড হওয়ার জাতীয় পরীক্ষায় পাশ করেছেন দশ বছর আগে।

ইয়াবুলি তার হোমটাউন।তিনি বেইজিং ও শাংহাইতে কাজ করতেন। কিন্তু এখন তার সন্তান জন্ম নিয়েছে। তিনি হোম টাউনেই থাকতে চান।

স্থানীয় স্কিকোচ ওয়াং তাওয়েই বলেন, “প্রতিবছর শীতে আমি বাড়তি রোজগারের জন্য বাড়ি ছেড়ে দূরে যেতাম। কিন্তু এখন আমার হোমটাউনেই তুষার ক্রীড়ার স্থান গড়ে উঠেছে।, অনেক দর্শনার্থীও আসছেন। আমার পরিবারের মুরুব্বীরা বয়স্ক হয়ে গেছেন। আমার বাচ্চাটাও অনেক ছোট। এখন বাড়িতে থেকেও আমি টাকা রোজগার করতে পারি। তাই আমি ফিরে এসেছি। এখন স্কি এবং পর্যটন শিল্প বিকশিত হচ্ছে। দিনে দিনে আরও বেশি পর্যটক আসছেন। আমি কোয়ালিফিকেশন পরীক্ষায় পাশ করে স্কিকোচ হয়েছি। এখন আমি অনেক টাকা রোজগার করতে পারছি”।

ইয়াবুলিতে তুষার মৌসুম থাকে চার মাস। তুষার মৌসুমে বছরে একজন স্কিকোচ ২০ থেকে ৩০ হাজার ইউয়ান আয় করতে পারেন। বাড়ির চাষবাস আর স্কিকোচের বেতন সব মিলিয়ে ওয়াং বছরে এক লক্ষ ইউয়ান আয় করতে পারেন।

স্থানীয় স্কি এলাকার প্রধান চাং ছিয়াং বলেন, আমাদের স্কি এলাকার জন্য বছরে আমরা ২০০ কোচ এবং অন্যান্য কর্মী নিয়োগ দেই। নিয়োগদেয়া কোচের সংখ্যা একশর বেশি এবং অন্যান্য কর্মীর সংখ্যা একশর কাছাকাছি।

তুষার বরফ সম্পদকে ব্যবহার করে হেইলংচিয়াং প্রদেশের স্থানীয় অধিবাসীদের কর্মসংস্থান বাড়ছে। চাঙা হচ্ছে পর্যটন শিল্প। সেইসঙ্গে এই জায়গার প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে দেশি বিদেশি পর্যটকদের।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

২। চীনের শীতকালীন খাবার হটপট

 

চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হটপট। এই খাবারটি অন্যান্য দেশেও বেশ সমাদৃত। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে এর কদর বেড়ে যায় সর্বত্র। চীনে শীতকালীন বিভিন্ন খাবারের মধ্যে হটপট বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। শীতের মৌসুমে হটপট রেস্তোরাঁগুলো সরগরম হয়ে ওঠে।

চীনের হটপট তিন রকমের। একটি হলো গরম পানির মধ্যে ছোট ছোট করে কাটা কাঁচা মাংস বা শাকসবজি সিদ্ধ করে বিশেষ সস দিয়ে খাওয়া হটপট। আরেকটি রান্না করা মাছ বা মাংসের স্যুপের মধ্যে কাঁচা শাকসবজি দিয়ে সিদ্ধ করে সরাসরি খাওয়া হটপট। তৃতীয়টা হলো পুরোপুরি রান্না করা মাংস ও শাকসবজির পাত্রের নিচে আগুন জ্বালিয়ে গরম গরম সরাসরি খাওয়া হটপট। তিন রকমের হটপটেরই অভিন্নতা হলো পাত্রের নিচে আগুন জ্বালিয়ে রাখা। তাই একে হটপট বলা হয়।

হটপট আবার অঞ্চলভেদে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যেমন সিছুয়ানের মানুষ ঝাল পছন্দ করে, সেকারণে তাদের হটপটে অনেক ঝাল দেওয়া হয়। শাংহাই বা চিয়াংসু অঞ্চলের অধিবাসীরা হালকা স্বাদ পছন্দ করে, তাই তাদের হটপট অন্য স্বাদের স্যুপ দিয়ে রান্না করা হয়। সারা চীনের হটপট একই রকম নয়।

হটপটের আরেকটি বৈশিষ্ট হলো সবাই পাত্রের চারপাশে বসে খাবার সিদ্ধ করতে করতে এবং কথা বলতে বলতে খেতে থাকে। এ রকম উষ্ণ ও ঘনিষ্ঠ পরিবেশ বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো নিবিড় করে।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশের হটপট রেস্তোরাঁয় বিক্রি বেড়েছে কারণ হটপটকে শীতকালের আরামদায়ক খাবার বলা হয়। এসময়টাতে চীনারা বন্ধু এবং পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে গিয়ে এ খাবার উপভোগ করে থাকেন।

শীতের আগমনে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে হটপট উপাদানের বিক্রি বেড়েছে। সাত বছর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছংছিংয়ে বসবাসরত একজন ইতালিয়ান নাগরিক লুইসি জিয়ানলুকা ২০১৭ সালে একটি হটপট রেস্তোরাঁ খোলেন। এরপর একে একে বিশ্বের আটটি দেশে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হটপট রেস্তোরাঁ।

এভাবেই স্থানীয় সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভাসকে সমন্বয় করে চীনের হটপট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই খাবার বর্তমানে বহু বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক বাজার গবেষণা সংস্থা মিন্টেলের তথ্যমতে, ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনে ৬ লাখের বেশি হটপট রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

৩। শাওশান গ্রামে মহান নেতার স্মৃতি জাদুঘর

চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের মহান নেতা মাও সেতুং। আমৃত্যু তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যান মাও সেতুং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে শ্রদ্ধেয়। তার জন্মস্থান হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রাম বর্তমানে একটি বিখ্যাত স্থান। ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাও সে তুং জন্মগ্রহণ করেন।

শাওশান গ্রামে যে বাড়িতে কমরেড মাও এর শৈশব কেটেছে সেটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। তিনি শৈশবে যে বিদ্যালয়ে পড়েছেন সেই স্থানও সংরক্ষিত রয়েছে।  পর্যটকরা ছাংশা শহর থেকে বিশেষ বাসে সিয়াংথান শহরে পৌছে শাওশান যেতে পারেন। এখানে রয়েছে তার গ্রামের বাড়ি। তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই বাড়িটি এখনও ঠিক আগের রূপেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। মাটি ও পাথরের তৈরি বাড়িটির আসবাবপত্রও সেই একই ভাবে রাখা হয়েছে।

১৯০১ সালে তিনি গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। সেই বিদ্যালয়টি এখনও সংরক্ষণ করা আছে। পর্যটকরা সেই বিদ্যালয়টি দেখতে পারেন। গ্রামের কিছু ক্ষেত খামারও দেখার ব্যবস্থা আছে।

মহান নেতার প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাইলে সে ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে মহান নেতার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা রয়েছে।

পুরো পর্যটনস্থানটি ঘুরে দেখার জন্য কোন টিকেটের প্রয়োজন হয় না। তবে পাসপোর্ট বা ন্যাশনাল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। কোন কোন স্থানে ছবি তোলায় কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

 

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের দিক থেকে শাওশান গ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কমিউনিস্ট পার্টি ও বিপ্লব বিষয়ে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পর্যটনকে ‘রেড টুরিজম’ নামে অভিহিত করা হয়।

শাওশান গ্রামের অন্য ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। প্রাচীন যুগে  থেকেই এখানে জনবসতি ছিল। শাওফ্যং পর্বতমালা , শাও এবং শিশি নদীসহ এই গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর। এখানকার লোকজ সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ। শাওশান গ্রামের বিশেষ একধরনের সংগীত রয়েছে। শাও সংগীত বা মিউজিক অব শাও প্রাচীন চু রাজ্যের সময় থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী