নববর্ষের প্রাক্কালে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক শুভেচ্ছাবার্তায় গত এক বছরে চীনাদের অবিরাম সংগ্রামের কথা বর্ণনা করেন এবং চীনের সমৃদ্ধি ও পুনর্জাগরণের জন্য যে দৃঢ় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর দিকে ফিরে তাকান।
সি চিন পিং বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সামনে যাওয়ার পথে বাতাস ও বৃষ্টি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। বাতাস ও বৃষ্টিতে ভয় না-পেয়ে চীনারা একে অপরকে সাহায্য করেছে, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন অসুবিধা কাটিয়ে উঠেছে। তিনি এর জন্য গভীরভাবে অনুপ্রাণিত।
তিনি বলেন, বিশ্ব এখনও পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের যুগে রয়েছে। মানবজাতি কোথায় যেতে চায়? এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। দেশের বাছাই এবং দিকনির্দেশ প্রত্যেকের নির্দিষ্ট ও সূক্ষ্ম ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত।
সি বলেন, একটি পরিবার হল ক্ষুদ্রতম দেশ, এবং একটি দেশ হাজার হাজার পরিবার নিয়ে গঠিত। চীনের জন্য, শিশুদের লালন-পালন ও শিক্ষা, যুবকদের কর্মসংস্থান ও সাফল্য এবং প্রবীণদের চিকিৎসা সেবা ও বয়স্কদের যত্ন পারিবারিক ও জাতীয় বিষয়। এসব কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
"আমাদের লক্ষ্য উচ্চাকাঙ্খী এবং সহজ। এক কথায়, এটি হল জনগণকে আরও ভালো জীবন যাপনের সুযোগ দেওয়া।"
চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন গণকেন্দ্রিক আধুনিকায়ন। জনগণের কাছে এর অর্থ হল, উন্নত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান , পরিবহন এবং একটি উন্নত জীবনযাপনের পরিবেশ। সর্বদা একই শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে, একই ভাগ্য বরণ করে নেওয়ার মাধ্যমে এবং মানুষের সাথে হৃদয় থেকে হৃদয়ে থাকার মাধ্যমে, আমাদের কাছে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী আধুনিকায়ন। সি চিন পিং বলেন, "জনগণ সর্বদাই আমাদের সকল অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠার বড় নির্ভরতা।"
২০২৪ সাল নয়াচীন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। তার নববর্ষের বার্তায়, সি চিন পিং আবারও চীনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন, নতুন উন্নয়ন ধারণা, নতুন উন্নয়ন নিদর্শন, উচ্চমানের উন্নয়ন, ব্যাপক সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ... সি চিন পিং উল্লেখিত এই কীওয়ার্ডগুলো একদিকে লক্ষ্য, অন্যদিকে করণীয়, একটি নীলনকশা এবং উন্নয়নের পথ, যা চীনের ভবিষ্যতের উন্নয়নের ব্যাপারে আস্থা প্রতিফলিত করে।
যদিও রাস্তা অনেক দূরের, আমরা শীঘ্রই লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। একটি দূরদর্শী চীন জনগণের জন্য আরও সুখ এবং নিরাপত্তার উৎস হবে।
"চীন কেবল নিজের বিকাশই করে না, বরং সক্রিয়ভাবে বিশ্বকে আলিঙ্গন করে এবং একটি বড় দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে।" সি চিন পিং তার নববর্ষের বার্তায় এই কথা বলেছেন।
গত বছরের দিকে ফিরে তাকালে, চীন অন্যান্য দেশের সাথে সুরেলা সহাবস্থান এবং সুরেলা উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। আরও বেশিসংখ্যক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বীকার করেছে যে, চীন একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু।
গত এক বছরে, চীনের মধ্যস্থতায়, সৌদি আরব এবং ইরান বেইজিংয়ে হাত মিলিয়েছে; ইউক্রেন সংকট এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের নতুন রাউন্ডের মতো উত্তপ্ত বিষয়গুলোর সমাধানে, চীন শান্তির জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে; "বেল্ট এবং রোড" আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামটি অনেক দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে, এবং এই "সুখের রাস্তা" যা বিশ্বকে উপকৃত করে তা আরও প্রশস্ত হচ্ছে...
আজকাল চীন ও বিশ্বের বিনিময়ে, চীনের "বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি" সম্পর্কে বহির্বিশ্বের একটি পরিষ্কার উপলব্ধি রয়েছে: মানবজাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাধারণ দিক পরিবর্তন হবে না, বিশ্ব ইতিহাসের অগ্রগতির সাধারণ যুক্তি পরিবর্তন হবে না এবং আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন কল্যাণের সমাজের প্রবণতার পরিবর্তন হবে না।
"আমি কিছু দেশ সফর করেছি, কিছু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছি, অনেক পুরানো বন্ধু এবং নতুন অংশীদারদের সাথে দেখা করেছি, চীনের প্রস্তাবগুলো শেয়ার করেছি এবং পারস্পরিক ঐকমত্যকে গভীরতর করেছি।" তার নববর্ষের বার্তায়, সি চিন পিং তার অনুভূতি এভাবে শেয়ার করেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি পরিবর্তনের সাথে সাথে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন সর্বদাই মূল থিম এবং জয়-জয় সহযোগিতা সর্বদাই মূল শব্দ।
সদ্যসমাপ্ত চীনের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কর্মসম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনের উন্নয়নের পথে অনুকূল পরিস্থিতি প্রতিকূলতার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির মৌলিক প্রবণতা পরিবর্তিত হয়নি। আত্মবিশ্বাস বাড়ানো প্রয়োজন। সঙ্কট কাটিয়ে, প্রতিকূলতা কাটিয়ে ও পরিস্থিতির মোকাবিলা করে, সিপিসি মহান সংগ্রামের মাধ্যমে এক শতাব্দীর মহান সাফল্যের সৃষ্টি করেছে এবং অবশ্যই নতুন মহান সংগ্রামের মাধ্যমে নতুন মহান অর্জনে সক্ষম হবে।
(শুয়েই/আলিম)