প্রেসিডেন্টের সি’র কূটনৈতিক সাফল্যের বছর ২০২৩
2023-12-31 19:45:49

২০২৩ সাল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের জন্য কূটনৈতিকভাবে একটি ব্যস্ত এবং সফল বছর ছিল। চারটি বিদেশ সফর, বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কয়েক ডজন বৈঠক, প্রথম চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ দেয়াসহ আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইভেন্ট অংশ নেন প্রেসিডেন্ট সি।  

প্রধান দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধিকে ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট সি গুরুত্ব দেন। চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর ২০ মার্চ সি প্রথম বিদেশ সফরে রাশিয়ায় যান। তিনি এই সফরকে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তির যাত্রা হিসেবে বর্ণনা করেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোয় বহুপ্রতিক্ষিত বৈঠক করেন। দুই রাষ্ট্রনেতা চীন-মার্কিন সম্পর্কের দিকনির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নকে প্রভাবিত করে এমন প্রধান বিষয়গুলোতে গভীর মতবিনিময় করেন।।

 

দুই প্রেসিডেন্ট চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সংলাপ ও সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ও জোরদার করতে সম্মত হন। দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের এ সব ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতিও দৃশ্যমান হয়েছে।

এ ছাড়াও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যঁখো, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েনসহ ইউরোপীয় নেতাদের সাথে প্রেসিডেন্ট সি’র ঘন ঘন সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় হয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে প্রেসিডেন্ট সি যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট সি’র সঙগে সাক্ষাৎ হওয়া বেশিরভাগ বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন উন্নয়নশীল দেশ থেকে। এতে চীনের কূটনৈতিক নীতি প্রতিফলিত করে যে, ছোট বা বড়, সব দেশ চীনের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

২১ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় তার রাষ্ট্রীয় সফরের সময়, সি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সাথে চীন-আফ্রিকা নেতাদের সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। সি আফ্রিকার শিল্পায়ন, কৃষি আধুনিকায়ন এবং প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করার জন্য চীনের তিনটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছেন।

সি জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেন, যেখানে ছয়টি দেশকে নতুন ব্রিকস সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে সি বলেন যে, ব্রিকস সম্প্রসারণ ঐতিহাসিক এবং ব্রিকস সহযোগিতার একটি নতুন সূচনা।

২১ সেপ্টেম্বর, হাংচৌতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সি বলেন, চীন সিরিয়ায় বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে এবং সিরিয়ার জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সমর্থন করে।

এ ছাড়াও, হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট আইরিস জিওমারা কাস্ত্রো ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো মোরোস এবং ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সির বৈঠক হয়েছে ।

ক্রমবর্ধমান প্রতিবেশী কূটনীতি প্রেসিডেন্ট সি’র কূটনৈতিক দূরদর্শিতার আরেকটি নজির। ১৯ মে, প্রেসিডেন্ট সি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শায়ানসি প্রদেশের সি’আনে প্রথম চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, যা চীন-মধ্য এশিয়া সম্পর্কের একটি নতুন মাইলফলক। ১৭ অক্টোবর, চীনা এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা যৌথভাবে জাকার্তা-বান্দুং হাই-স্পিড রেলওয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

সি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর ভিয়েতনামে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। উভয় পক্ষই কৌশলগত তাৎপর্য বহন করে এমন একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে চীন-ভিয়েতনাম সম্প্রদায় গড়ে তুলতে সম্মত হন।

২০২৩ সালে চীনের কূটনীতির আরেকটি যুগান্তকারী অবদান হল সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করা। ১০ মার্চ বেইজিংয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের দূতাবাস ও মিশন পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়।

চীনের মতো একটি বড় রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি বিশ্বে চলমান সংঘাতের বিষয়েও যথাযথ নজর দিয়েছেন।

২৬ এপ্রিল, সি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ফোনে কথা বলেন। জেলেনস্কি শান্তি পুনরুদ্ধার এবং সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বাগত জানানন।

২১ নভেম্বর ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ব্রিকসের ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি জোর দেন যে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের চক্র ভাঙার কার্যকর উপায় হল একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এ বছর ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে, সি তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনে (বিআরএফ) উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে সমর্থন করার জন্য চীন আটটি বড় পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে। ১৭ থেকে ১৮ অক্টোবর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হাই-প্রোফাইল ফোরামটি এই বছর চীনের আয়োজিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ইভেন্ট।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।