চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-12-29 16:08:00

চলতি বাণিজ্যের ৫০তম পর্বে থাকছে:

১. আবাসনখাত স্থিতিশীল হলে ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে

২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন গাড়ির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু চীনের পর্যটন শহরে

৩. বাংলাদেশের পোশাকখাতে চীনের প্রতি যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান

 

আবাসনখাত স্থিতিশীল হলে ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সুরক্ষিত করার পথে অনেক দূর এগিয়েছে বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীনের রিয়েলএস্টেট খাত। এর কারণ হিসেবে আবাসনখাতে সরকারের নানা ধরনের পদক্ষেপের কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্টের ডিন ও অর্থনীতিবিদ ইয়াও ইয়াং বলছেন, আগামী বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হবে।

চীনের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে আগামী বছর মোট দেশীয় উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হবে বলে বিবেচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ২০২৪ সালে আবাসন মার্কেট অর্থনীতিকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করবে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্টের ডিন ও অধ্যাপক ইয়াও ইয়াং জানান, উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বিকল্প জ্বালানী, পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে নেতৃত্বের আসনে আছে চীন।

ইয়াও ইয়াং, অর্থনীতিবিদ ও ডিন, ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্ট, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়

“চীন এখনো পর্যাপ্ত সংরক্ষণের পথে হাঁটছে, আমাদের জিডিপি’র ৪৫ শতাংশ সুরক্ষিত। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। এই সুরক্ষার মাধ্যমে আমরা বিনিয়োগ করতে পারে, গবেষণা ও উন্নয়নে মন দিতে পারি। আর এখানেই চীনের সম্ভাবনা। উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বিকল্প জ্বালানী, পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে নেতৃত্বের আসনে আছে চীন। আমরা যদি মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ শিল্পের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে চীনা কোম্পানিগুলো স্বাভাবিক গতির চেয়েও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই বলা যায়, প্রযুক্তিতে চীন বিশ্বের অন্যান্য অংশের চেয়েও দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

“আগামী বছর চীনের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা মিলিত হবেন বার্ষিক কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিষয়ক সম্মেলনে। সেখানে আগামীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংহত করতে নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আগামী বছরের জন্য চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে যে পূর্বাভাস দিয়েছে তার পেছনে আবাসন খাতের অস্থিতিশলতাকে দায়ী করেন। এই বিশ্লেষক বলছেন, ২০২৪ সালে দেশটির আবাসনখাত স্থিতিশীল হবে এবং অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তি পাবে।

“আমার মনে হয় আইএমএফ অনেক বেশি আশাবাদী। সম্ভবত তারা চীনের রিয়েলএস্টেট খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার মতে, আবাসন খাতের ব্যাপারে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে এসব পদক্ষেপে কাজও হচ্ছে। সম্ভবত আগামী বছরের মাঝামাঝি বা শেষ নাগাদ এই খাতটি স্থিতিশীল হবে। আর আবাসনখাত স্থিতিশীল হলে চীনের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। কাজেই আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে বলবো আগামী বছরের প্রবৃদ্ধি অন্তত ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

“তার মতে, আগামী বছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তিনি বলেন, চলতি বছরের প্রথম ৩ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে। চতুর্থ প্রান্তিকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেই সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানো সম্ভব হবে।

“চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এখনো চলছে। আমি আশা করবো সরকার ফিসক্যাল সম্প্রসারণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। কারণ, পুনরুদ্ধার এখনো কিছুটা দুর্বল গতিতে এগোচ্ছে, এর ভিত্তি এখনো ততোটা শক্ত নয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করে যে সরকারও এটা উপলব্ধি করতে পারছে। কাজেই আমি আশা করি, সরকার আগামী বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রাক্কলন করবে।“

আগামী বছরের সম্মেলনে অর্থনীতির জটিল ও কঠিন সমীকরণ নিয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের একত্রিত হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক দিক হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন গাড়ির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু চীনের পর্যটন শহরে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ছেচিয়াংয়ের পুরনো শহর লিয়াংছুতে সম্পন্ন হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন গাড়ির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। রুইনস পার্কের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার রাস্তায় দুটি গাড়ি নিয়ে এ পরীক্ষা চলে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, পর্যটকরা প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে এ গাড়ি থেকে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত গাড়ির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হয়ে গেল চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ছেচিয়াংয়ে। প্রদেশের লিয়াংছু শহরের পর্যটনবান্ধব রুইন্সপার্ক এলাকার রাস্তায় এ কার্যক্রম হয়।

এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে চালকবিহীন গাড়িতে করে ৩ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার পথ ঘুরে দেখার সুযোগ পায় পর্যটকরা। এমন সুযোাগ পেয়ে মুগ্ধ এখানে আগত স্থানীয় ও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা। তারা বলছেন, চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবন সত্যিই অসাধারণ।

ওয়াং ছিংহুই, পর্যটক

“চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অসাধারন। চালকবিহীন গাড়ি খুব সুন্দরভাবে চলেছে। এটা দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে।“

পরীক্ষামূলক চলাচল কার্যক্রমে অংশ নেওয়া গাড়িগুলোর ভেতরের ডিজাইন ও চালনা কৌশলেও চমকে গেছেন তারা। তারা গাড়িগুলোর যেমন ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আবার ভেতরে স্থাপন করা ডিজিটাল পর্দায়ও দেখা যায় বিভিন্ন দৃশ্য। এ সময় স্পিকারে ভেসে ওঠে বিভিন্ন স্থাপনার বর্ণনা।

সান লিন, পর্যটক

“এটি বেশ আরামদায়ক। ভেতরের ডিজাইনটাও মনোমুদ্ধকর। গাড়িটি দারুণভাবে চলেছে। আবার সামনে পেছনেও ঘুরতে পারে যুতসইভাবে। আমাকে অন্যরকম অনুভূতি দিয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাড়িগুলো প্রতিঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে চলবে। তারা বলছেন, কেবল জরুরি মুহুর্তেই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করবে নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তারা।

 

ভিনদেশে চীন:

বাংলাদেশের পোশাকখাতে চীনের প্রতি যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সম্প্রতি চীনের পোশাক কারখানা ও পোশাক তৈরির নানা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা নিতে চীন সফর করেন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের শীর্ষ কয়েকটি সংস্থার নেতারা চীনের পোশাক খাতের নানা বিষয় কাছ থেকে দেখেন ও অভিজ্ঞতা নেন। এ সময় বাংলাদেশে যৌথভাবে পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান শিল্পখাতের নেতারা। তারা বলছেন, কেবল পারস্পরিক যৌথ সহযোগিতাই পারে দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধি এনে দিতে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চীনে পৌছান নভেম্বরের শেষ নাগাদ। টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের এ শীর্ষ ব্যবসায়ীরা চীনের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন। সফরকারী দলের সদস্যদের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন –বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বিকেএমইএ’র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশের অন্যতম বড় তৈরি পোশাক রফতানিকারক শাসসুজ্জামানসহ আরও অনেকে।

নিজের দেশে এসব খাতের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে বসার সুযোগ না পেলেও সফরে এসেছেন চীন। কেন এই দূরের দেশে একত্রে সফর করছেন এসব গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাতের প্রতিনিধিরা?

 

ফারুক হোসেন, প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ

“আমরা এরই মধ্যে বেশ ভালো পরিমাণ সুতা, কাপড়, মেশিনারি, রাসায়নিক ও রং কিনছি। আরও অনেক কিছু কিনতে চাই।“

সফরকারীরা ঘুরে দেখেন চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ফুচিয়ান। তাদের লক্ষ্যের সঙ্গে এ প্রদেশটিই বেশি সঙ্গত, কেননা তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো চীনের নতুন সিল্ক বা মানুষের তৈরি ফাইবার। এখানকার ছুয়ানছৌ শহরের মোট জিডিপি’র ২৫ শতাংশই টেক্সটাইল ও জুতার উৎপাদনের উপর নির্ভর করে।

 

ছেন হুই, নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ফেডারেশন অব ছুয়াংছৌ সিটি

“মূলত এটি একটি কাউন্টি পর্যায়ের সিটি, অনেকটা শিশি ও চিনচিয়াংয়ের মতো। যে কেউ চাইলে কাঁচামাল থেকে পুরো একটি কাপড় তৈরির সব প্রক্রিয়া, উৎপাদন ও বিক্রয়ের সব সেবা এখানে পাবে।“

 

এদিকে, তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি এবং দেশের মোট রফতানির ৮৫ শতাংশই হয় এখান থেকে। বাংলাদেশি সফরকারীদের একজন রাজিব হায়দার জানান, চীনা ফ্রেব্রিক্সের নানা বৈশিষ্ট্যের কথা।

 

রাজিব হায়দার, পরিচালক, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন

“এখানকার কাপড়গুলো বেশ ভালো। এগুলো খুবই ভালো কাজ করে, সহজে পরা যায় এবং মান ভালো।”

ফারুক হোসেন, প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ

“আমরাও আমাদের কাপড়ের মান ভালো করতে চাই, আরও উন্নত মানের পণ্য তৈরি করতে চাই। বিশেষ করে কৃত্রিম ফাইবার, যন্ত্রেবানানো টেক্সটাইল, ক্রিড়াপণ্য। এসবক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বে শীর্ষে।“

 

বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিশ্বের নামকরা সব ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য তৈরি করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে জুতা তৈরির প্রক্রিয়াও আছে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। আর তাইতো চীনের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও এখানকার পণ্যের মান সম্পর্কে বোঝাপড়া করতে এসেছেন তারা।

 

তিং শুইপো, প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও, এক্সটেপ গ্রুপ

আমি এই কোম্পানিটির কাজ শুরু করি মাত্র ২শ’ ডলার দিয়ে। শুরুতে আমরা ৫-১০ জোড়া জুতা তৈরি করতাম প্রতিদিন।

 

গেল ২ দশকের ধারাবাহিক উন্নয়নের মধ্যদিয়ে আজ এক্সটেপ চীনের অন্যতম সেরা জুতার ব্র্যান্ড। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার কারখানায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ধারনা নিতে এসেছেন তারা।

 

শামসুজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ

এক সময় বাংলাদেশ বেশিরভাগ তৈরি পোশাক যন্ত্রপাতি জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করতো। আমাদের কেবল ইউরোপীয় যন্ত্রই ছিলো। এরপর আমরা কোরিয়া থেকে কেনা শুরু করি, বর্তমানে চীন থেকেও কিনছি। বিশেষ করে চীন থেকে সেলাই মেশিন, পোশাকের ফিনিশিং মেশিন নেই। আমার মনে হয় বর্তমানে আমাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ৯০ শতাংশই চীন থেকে আনা হয়।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংহাই পরিদর্শনের অন্যতম কারণগুলোর একটি হলো এখানে উন্নত মানের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে পোশাকখাতে চীনের নানা ধরনের উদ্ভাবনেরও দেখা পাওয়া যায় এখানে। বিশেষ করে পোশাকখাতের জন্য নিবেদিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্বলিত যন্ত্রপাতির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে সাংহাই। এমনকি কাপড়বুনন কার্যক্রমের সময় সেটির মান নিয়ন্ত্রণের কাজেও সহযোগিতা করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

 

কুয়ান রুইফেং, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ছিচিং টেকনোলজি

আমরা এখন এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার কোম্পানি ও ৬লাখ সুতার কারখানাকে সেবা দিয়েছি। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আমরা মাত্র ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য বানিয়ে দিতে পারি, আগে যেখানে ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগতো।

 

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের আগ্রহের জায়গা ছিলো পরিবেশবান্ধব শিল্প। চীনের শিল্পকারখানাগুলো সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে কীভাবে পরিবেশ উপযোগী ও দূষণমুক্তভাবে উৎপাদন চালাতে পারে তা সম্পর্কেও ধারনা নেন।

ক্রিস্টি ছাই, ভাইস-প্রেসিডেন্ট অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, সাংহাই চ্যালেঞ্জ টেক্সটাইল

উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাওয়া একটা অনুশীলন। এটা একেবারে নিটিং থেকে শুরু করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রংয়ের কাজ। আমরা চেষ্টা করি কাজের সব জ্বালানী তাপইঞ্জিন ও পানি থেকে নেওয়ার যেন তা পুনরায় ব্যবহার করা যায়। কাজেই বলতে পারি যে এখানে ৪০ শতাংশ পানি পুনরায় ব্যবহার করা হয়।

 

মোহাম্মদ হাতেম, নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

“আমাদের দেশের জনশক্তি আছে অনেক। বিশেষ করে আমাদের পোশাকশিল্পে প্রায় ৪ মিলিয়ন শ্রমিক সরাসরি সংযুক্ত।“

ফারুক হোসেন, প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ

“আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশে পোশাক কারখানা গড়ে তুলতে পারি। এখানে চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ তাদের রফতানির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। সেখান থেকে তারা ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও তৈরি পোশাক রফতানি করতে পারে। কাজেই আমি মনে করি, এমন সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা উভয়ের জন্য লাভজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারি।“

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৬ দিনের সফরে তারা চীনের বিভিন্ন শিল্প কারখানা ঘুরে দেখে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। দুই দেশের কোম্পানিগুলোর সহযোগিতাই প্রমাণ করেছে যে একইখাতে দুই দেশ সহযোগিতার ভিত্তিতে লাভজনক অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। তারা বলছেন, কেবল পারস্পরিক যৌথ সহযোগিতাই পারে দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধি এনে দিতে।