জুজুব চাষে সমৃদ্ধ চীনের শান তোং প্রদেশের চান হুয়াবাসী
2023-12-29 10:46:39


চীনের শান তোং প্রদেশের বিন চৌ শহরের চান হুয়া অঞ্চলের সি সুন গ্রামে জুজুব চাষীরা গ্রিনহাউসে সারি সারি জুজুব গাছ লাগিয়েছেন, যা দেখতে দুর্দান্ত। গ্রামবাসীরা এখন পাকা জুজুব পেড়ে বাক্সজাত করছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চান হুয়া অঞ্চল বৈশিষ্ট্যময় এই খাতকে কেন্দ্র করে জুজুব শিল্পের চেইন ব্যবস্থাপনার স্মার্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, যার ফলে জুজুবের মান এবং জুজুব থেকে উপার্জন বেড়েছে। জুজুব গাছ গ্রামবাসীদের সমৃদ্ধি অর্জনের বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। 

চান হুয়া অঞ্চলের সিয়া ওয়া উপজেলার সি সুন গ্রামের বাসিন্দা তিং থাই পিং বলেন, “আমার এ গ্রিনহাউসে চাষ হয়েছে চান হুয়া’র নম্বর-২ জুজুব। এ গ্রিনহাউসে যে কোনও সময় ভিতরের তাপমাত্রা ও মাটির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পানি ও সার প্রয়োজন হলে স্মার্ট যন্ত্র সময়মতো স্মরণ করিয়ে দেয়। কোনটার অভাব ঘটলে সেটা দেওয়া যায়, যার ফলে আমাদের চাষের সক্ষমতা অনেক উন্নত হয়েছে। খরচ কমার পাশাপাশি অপচয় কমেছে।”

তিং থাই পিং’র গ্রিনহাউসে চান হুয়া নম্বর-২ জুজুব চাষের সময় ভিডিওর মাধ্যমে তত্ত্বাবধান, জলবায়ু তত্ত্বাবধান, পোকা দমন, পানি ও সার প্রয়োগ তত্ত্বাবধানসহ সব স্মার্ট ব্যবস্থাপনা রয়েছে। তিং থাই পিং বলেন, “অনেক ক্রেতা আমাকে প্রি-অর্ডার দিয়েছেন। প্রতি কেজি ১০০ ইউয়ান দামে বিক্রি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও চাহিদা মেটাতে পারছি না।”

জানা গেছে, চান হুয়া অঞ্চল ১১টি দৃষ্টান্তমূলক উদ্যানে জলবায়ু স্টেশন ও মাটির অবস্থা ও পোকা দমনসহ সেন্সর সরঞ্জাম বাসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে সুর্যালোক, তাপমাত্রা, বৃষ্টি, বায়ুর অবস্থা এবং মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাসহ ১২টি সূচক পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। নির্ধারিত সূচক অনুযায়ী জুজুব চাষীদের কাছে সতর্কতামূলক তথ্য প্রেরণ করা হয়, যাতে সময়মতো ব্যবস্থাপনা করা যায়। তাছাড়া স্মার্ট জুজুব নামক অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে। মোবাইলে জুজুব চাষের প্রক্রিয়ায় পরিবেশ বোঝা এবং দূর থেকে কৃষি সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে জুজুব চাষের কার্যকারিতা বেড়েছে এবং পাশাপাশি জুজুব উত্পাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিং থাই পিং বলেন, “আগে আমার কাছে থেকে যারা জুজুব কিনেছে, তারা এক বছর আগে আমার জুজুব কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছেন। তারা অ্যাপের মাধ্যমে সার প্রয়োগ ও ঘাস নিয়ন্ত্রণসহ নানা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সেকারণে তারা এ জুজুব খেতে স্বস্তি বোধ করেন।”

জানা গেছে, চান হুয়া অঞ্চল জুজুব উত্পাদনে উত্পত্তি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এক ক্ষেতের একটি কিউআর কোডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা যায়। গ্রাহকরা সে কিউআর কোডের মাধ্যমে জুজুবের শ্রেণীবিন্যাস এবং পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখতে পারেন। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে গ্রাহকরা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পণ্য কিনতে পারেন। বর্তমানে পুরো অঞ্চলের ১১৬টি জুজুব উত্পাদনকারী এ প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন। 

সিয়া ওয়া উপজেলার চান হুয়া জুজুব ডিজিটাল শিল্প উদ্যানের কোল্ড চেইন লজিস্টিক এলাকায় স্বয়ঃক্রিয় বাছাই লাইনে জুজুবের ৬টি শ্রেনীবিন্যাস করা হয়। ছত্রিশটি ক্যামেরার মাধ্যমে জুজুবের আকার, রঙ ও মান বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেনীবিন্যাস করা হয়।

চলতি বছর থেকে সিয়া ওয়া উপজেলা ‘শিল্পের সক্ষমতা উন্নয়ন এবং জুজুব চাষীদের উপার্জন বৃদ্ধি’কে লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে শিল্পের অবকাঠামো উন্নত করছে, যার ফলে পুরো উপজেলায় জুজুবের ভালো ফলন হয়েছে। এর মান অনেক উন্নত হয়েছে। চলতি বছরে জুজুবের মোট উত্পাদন ১৪ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে। জুজুব চাষীদের মাথাপিছু আয়ও ২৬ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে। পরবর্তীতে সিয়া ওয়া উপজেলা কার্যকর, সামষ্টিক ও ডিজিটাল জুজুব শিল্প গড়ে তুলবে, যাতে আরও জুজুব চাষী ডিজিটাল ও স্মার্ট কৃষির কারণে লাভবান হয়।

বর্তমানে শান তোং প্রদেশের চান হুয়া অঞ্চলে জুজুব শিল্পের রূপান্তরের কাজ চলছে। ২০২৩ সালে পুরো অঞ্চলে জুজুব উত্পাদনের পরিমাণ ৩০ কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে। অর্থমূল্যে সেটা ৫০০ কোটি ইউয়ান হবে। ভবিষ্যতেও চান হুয়া জুজুব উত্সবসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে এবং সার্বিকভাবে ‘এক জুজুব এক জগত’ শীর্ষক ব্র্যান্ড গড়ে তুলবে, যাতে চান হুয়া জুজুব থেকে আরও উপকৃত হবে স্থানীয় গ্রাসবাসীরা।

(রুবি/রহমান)