২০২৩ সালে সংঘাতের বিশ্বে, চীনের তিনটি পরিচয়
2023-12-29 17:03:10

ডিসেম্বর ২৯: চীন ইতোমধ্যে ‘আরো প্রভাবশালী, সৃজনশীল এবং দায়ীত্বশীল বড় দেশ’ হয়েছে।  বুধ এবং বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে আয়োজিত সিপিসির বৈদেশিক কর্মকান্ড বিষয়ক কর্মসভায় এমন কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীনের রাজনীতিবিদ্যা ম্যাগাজিনে’র উপ-সম্পাদক জোসেফ গ্রেগরি মাহোনি’র মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীনের কূটনীতি আরো উন্মুক্ত, সক্রিয় এবং বিশ্বমুখী হচ্ছে।

এ সব মূল্যায়নকে বুঝতে ২০২৩ সালে চীন এবং বিশ্বের বিনিময় পর্যালোচনা সহায়ক হবে।

 

বিশ্ব শান্তির নির্মাতা

২০২৩ সালে বিশ্বের পরিস্থিতির দিকে তাকালে ‘যুদ্ধ’ নিঃসন্দেহে একটি প্রধান শব্দ।

এই বছর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে, ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে চলছে রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষ, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছা মুশকিল। সুদানে ৭০ লাখেরও বেশি লোক সশস্ত্র সংঘর্ষের কারণে গৃহহারা হয়েছে, ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের চলতি মাসে প্রকাশিত ডেটা দেখায় যে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ১৮৩টি আঞ্চলিক সংঘাত ঘটেছে, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সংঘাত এবং সংকটের মুখোমুখি হয়ে চীন যুদ্ধ বিরতির জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষকে উদাহরণ হিসেবে নিলে দেখা যায়, চীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জোর দিয়ে বলেছে যে, এই সংঘর্ষ সমাধানের মৌলিক উপায় হল ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধান’ বাস্তবায়ন করা। চীনা কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পালাক্রমিক চেয়ারম্যান দেশ হিসেবে, চীন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ২৭১২ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণের জন্য চেষ্টা করেছে। চীন ফিলিস্তিনি এলাকায় মানবিক সহায়তাও দিয়ে আসছে।

 

বিশ্ব উন্নয়নে অবদানকারী

২০২৩ সালে বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার খুব দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এমন বৈশ্বিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে, চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন সুষ্ঠু এবং স্থিতিশীল। বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে, চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ, যা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বৃহত্তম ইঞ্জিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এই বছর চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি চালু হওয়ার ৪৫তম বার্ষিকী।

বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এমন শিল্পের ক্যাটালগের নতুন সংস্করণের আনুষ্ঠানিক জারি থেকে শুরু করে ভোগ মেলা, পরিষেবা মেলা, চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার মতো আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন, তারপর চীনের সর্বসাম্প্রতিক অবাধ বাণিজ্য পাইলট অঞ্চল - চীন (সিনচিয়াং) অবাধ বাণিজ্য পাইলট অঞ্চল উন্মোচন করা পর্যন্ত, চীন বিশ্বের কাছে তার দরজা খুলে দিয়েছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে এই বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান এক তৃতীয়াংশে পৌঁছে যাবে।

এই বছর  ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকীও চিহ্নিত করেছে।  বিগত ১০ বছরে, চীন প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করে ৩ হাজারের বেশি ব্যবহারিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পক্ষের সাথে সহযোগিতা করেছে। তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামে, চীন বিআরআইয়ের উচ্চ-মানের যৌথ নির্মাণকে সমর্থন করার জন্য আটটি পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে।

 

আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষাকারী

ব্রিকস সহযোগিতা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে যে, আর্জেন্টিনা এবং মিশর সহ ছয়টি দেশকে নতুন সদস্য হিসাবে গ্রহণ করে ঐতিহাসিক সম্প্রসারণ অর্জন করেছে; শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা আবার তার সদস্য সংখ্যা বাড়িয়েছে; আফ্রিকান ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে জি-২০তে যোগ দিয়েছে; এই বছরে, ‘গ্লোবাল সাউথে’র প্রভাব আরো বড় হচ্ছে এবং বিশ্বকে বহুমেরুর দিকে বিকশিত হতে ঠেলে দিচ্ছে।

২০২৩ সালের শেষে, বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, চীন-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি বন্ধ হয় এবং স্থিতিশীল হয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার ফলে ভবিষ্যতের জন্য ‘সান ফ্রান্সিসকো ভিশন’ উত্থাপিত হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিময় উন্নীত হয়েছে, সরাসরি ফ্লাইট বেড়েছে, এবং মানুষের বিনিময় আরও সুবিধাজনক হয়েছে। সান ফ্রান্সিসকো বৈঠকের পর বিশ্ব আরও স্থিতিশীল চীন-মার্কিন সম্পর্ক দেখতে পেরে খুশি, কারণ তা বিশ্বে নিশ্চিয়তা এবং স্থিতিশীলতা যোগ করেছে।

২০২৩ সালে, চীন একটি বড় দেশ হিসাবে তার দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করেছে। ২০২৪ সালে, চীন বিশ্বের সাথে আরও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে যোগাযোগ করবে এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্বের সাথে এগিয়ে যাবে।

(শুয়েই/হাশিম)