স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র নির্মাণে গুরুত্বারোপ
2023-12-28 10:37:00

 স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের চলচ্চিত্রগুলোর উন্নয়ন নিয়ে আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আলাপ করবো।

 

‘প্যাথ অব দ্য সাউল’, ‘থার্লো’, ‘অ্যা কুল ফিশ’ হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্মিত স্বল্প বাজেটের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে কোনো কোনোটির শক্তিশালী আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনোটিতে আবার নির্মাতাদের একটি স্বতন্ত্র ব্যক্তিগত শৈলীও স্থান পেয়েছে।  তাদের গল্প বলার পদ্ধতি এবং উপস্থাপনার কৌশলগুলোতে উদ্ভাবনের ছোঁয়া লেগেছে। এসবের মাধ্যমেই তারা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

 

সম্প্রতি ২৫তম শাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অনুষ্ঠিত ‘স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্রের সৃজনশীলতা ও উন্নয়নের পথ’ শীর্ষক এক ফোরামে চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিজ্ঞজনেরা এ ধরণের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নিয়ে আলাপ এবং চলচ্চিত্র বাজারের বহুমুখী উন্নয়নকে বেগবান করার প্রস্তাব ও মতামত উত্থাপন করেছেন।

 

স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্রের মানে কী?

 

চায়না ফিল্ম কর্পোরেশন লিমিটেডের মহাপরিচালকের সহকারী চাং তা ইয়োং বলেন, নির্মাণের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, প্রায় ৫ কোটি ইউয়ান বাজেটের চলচ্চিত্রগুলোকে মধ্যম বাজেটের এবং ২ থেকে ৩ কোটি ইউয়ান বাজেটের চলচ্চিত্রগুলোকে স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র বলা যেতে পারে।

 

ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন, এসব সিনেমাকে আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইলে তাদের বিষয়বস্তু ও নির্মাণ শৈলীকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

 

চায়না ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইন হোং বলেন, ‘দর্শকদের টানতে স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের চলচ্চিত্রগুলোর স্ক্রিপ্ট, বিষয়বস্তু, বর্ণনা শৈলী এবং অভিনয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকতে হবে।’

 

‘প্যাথ অব দ্য সাউল’ এবং ‘থার্লো’ প্রাণবন্তভাবে চীনের তিব্বত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য তুলে ধরেছে। ‘অ্যা কুল ফিশ’ একদল ছোট মানুষের বিচিত্র চরিত্র উপস্থাপন করেছে।

 

এসব স্টাইল স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের ফিল্মগুলোকে অন্যান্য সিনেমা থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছে। ফলে অনেক দর্শক ফিল্মগুলো দেখে অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।

 

ফোরামে অংশগ্রহণকারীদের মতে, স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের ফিল্মগুলোর সৃজনশীল উন্নয়ন এগিয়ে নিতে প্রযোজনা, নির্মাণ এবং প্রচারণাসহ নানা কাজের সমন্বয় করা প্রয়োজন।

 

তরুণ এক পরিচালকের সঙ্গে স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের মুভি তৈরির অভিজ্ঞতা নিয়ে বিখ্যাত পরিচালক সুই চেং বলেন, ‘আমি তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এবং তাদের চিন্তাধারা জানতে ইচ্ছুক। আমি মনে করি, এটি আমার সৃষ্টির অভ্যাস ভেঙ্গে দিতে এবং নতুন বিষয় সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।’

 

চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘উইকেন্ড ফিল্ম’ সম্প্রতি একটি আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠেছে। চীনের জাতীয় চলচ্চিত্র প্রশাসনের নির্বাহী উপ-পরিচালক মাও ইয়ু মনে করেন, চীন দেশব্যাপী একটি একীভূত, উন্মুক্ত, প্রতিযোগিতামূলক এবং সুশৃঙ্খল ফিল্ম মার্কেট কাঠামো নির্মাণ করেছে। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক থিয়েটার এবং পর্দার অধিকারী দেশ হয়ে ওঠেছে। তবে ৭০ হাজারেরও বেশি স্ক্রিনে প্রদর্শনের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা এখনও সীমিত, বাজারে সরবরাহ প্রায় একই রকম রয়েছে।

সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে একই চলচ্চিত্র দেখানো হচ্ছে। ‘উইকেন্ড ফিল্মের’ ধারণা হলো উইকেন্ডে মুক্তি পেতে আরও মজাদার ও আকর্ষণীয় ফিল্মকে উৎসাহিত করা।

 

ইন হোং মনে করেন, ‘উইকেন্ড ফিল্মের’ মূল হলো পর্যাপ্ত উচ্চমানের সিনেমা সরবরাহ করা। দর্শকরা যখন প্রতিসপ্তাহে সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়ে তুলবে এবং সাপ্তাহিক ছুটিতে প্রেক্ষাগৃহে ভিন্ন ভিন্ন সিনেমা দেখতে পারবে, তখন সিনেমার একটা ভালো বাজার তৈরি হতে পারবে।’

 

স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের মুভি বলতে কেবল বাজেটের ওপর নির্ভরশীল নয়। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে খাঁটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র এবং আর্ট ফিল্মও থাকতে পারে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিনেত্রী ও প্রযোজক লিয়াং চিং এবং পরিচালক কুয়েন হু’র যৌথ সমর্থনে বেশ কয়েকটি উচ্চ গুণগত মানের স্বল্প ও মধ্যম বাজেটের চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। তারা তরুণ এবং নতুন পরিচালকদের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে চান।

 

লিয়াং চিং স্বীকার করেন, ‘যখন আমি প্রথমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রবেশ করেছি, তখন অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি; তাই আমি তরুণদের অসুবিধাগুলো ভালভাবে জানি। তাদের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর বড় বাজার থাকবে না জেনেও আমি তরুণদের প্রতিভা এবং স্বপ্নকে সমর্থন করতে ইচ্ছুক।’

 

লিয়াং চিংয়ের কাছে সবচেয়ে গৌরবের বিষয় হলো তার প্রযোজনায় নির্মিত ‘রিমেইন্ডার’ মুভিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং মুভিটি গত ১২ জুন মুক্তি পেয়েছে।

 

এ সিনেমাটিতে চলচ্চিত্র পরিচালক না চিয়া চুও এ শতাব্দীর শুরুতে চীনের সিছুয়ান প্রদেশ ও ছোংছিং শহরে একদল তরুণ-তরুণীদের বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় দৃষ্টিপাত করেন। মুভিটিতে পরিচালকের নিজের অভিজ্ঞতারও প্রতিফলন হয়েছে।

 

২০০৬ সালে ‘ক্রেজি স্টোন’ মুভিটি মাত্র ৩৫ লাখ ইউয়ান ব্যয়ে নির্মিত হয়। তবে এটি ২ কোটি ৩৫ লাখ ইউয়ান আয় করেছে। তারপর স্বল্প এবং মধ্যম বাজেটের চলচ্চিত্রগুলো চীনা চলচ্চিত্র বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, যা উপেক্ষা করা যায় না।

 

বিখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক সুই চেং বলেন, ‘তাদের নিজেদের চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজের মূল্যায়নের দল আছে। চিত্রনাট্য বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব মানদণ্ড আছে। তাতে প্রধান চরিত্র দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারছে কিনা বা তার ভাগ্য দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারছে কিনা - তা বিবেচনা করা হয়।’

 

তিনি মনে করেন, সীমিত বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে নির্মাতারা অন্যান্য দিকগুলোতে ফোকাস করতে পারেন। যেমন: রচনা এবং পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ তা আরও ভালো ফলাফল বয়ে আনবে।

 

একই সময়ে তিনি তরুণ অভিনেতাদের প্রবীণদের সাথে সহযোগিতা করতে ভয় না পেতে উত্সাহিত করেছেন। তার মতে, অভিনয়, লেখা, চিত্রগ্রহণ বা নির্মাণে আন্তরিকতাই যথেষ্ট। সৃষ্টির মধ্যে থাকা পার্থক্য এবং বিরোধ মিটানো সহজ। আসলে আলোচনার পর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি উপায় বের হয়।

 

বাজারে চাহিদার পরিবর্তন বা দর্শকদের সিনেমা দেখার ইচ্ছা পরিবর্তন হলেও নির্মাতাদের জন্য সৃষ্টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালবাসার উপর জোর দিতে এবং ভাল গল্প, চরিত্র এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। শুধুমাত্র এভাবেই দর্শকদের সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।