আকাশ ছুঁতে চাই ৫০
2023-12-28 14:43:02

                                              

১. চীনের সেরা ধনী নারী

২. গ্রেটার বে এরিয়ায় সংস্কৃতির বন্ধন গড়ে তুলছেন যে নারী

৩.  কারুশিল্পী হাও রুসিয়াংয়ের অনন্য ভুবন

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৪ সাল। আসন্ন নতুন বছরের শুভকামনা জানিয়ে শুরু করছি আজকের অনুষ্ঠান।

 

চীনের সেরা ধনী নারী

 

 চীনের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে নারীর ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। অনেক নারী গড়ে তুলেছেন নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা সম্পদ অর্জন করছেন, অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

২০২৩ সালে চীনের সেরা সম্পদশালী নারীদের একটি তালিকা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে চীনের গণমাধ্যমে।

 বিদায়ী ২০২৩ সালে চীনের সেরা সম্পদশালী নারী কারা ছিলেন চলুন জেনে নেই সেকথা।

 

চীনের বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক নারী। পরিচালক পদেও নারীরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। অসংখ্য  নারী নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তারা সম্পদ অর্জন করছেন, সেইসঙ্গে অনেক মানুষের জীবিকা অর্জনের পথ সুগম করেছেন। বিদায়ী ২০২৩ সালে চীনের সেরা দশজন নারীর পরিচয় সম্প্রতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

 

চীনের শীর্ষ ধনী নারীর অবস্থানে রয়েছেন কোং সিয়ু হিং। তিনি হংকং এর বিখ্যাত কোক পরিবারের প্রধান। তিনি সুন হুং কাই প্রোপারটিজ লিমিটেডের সাবেক চেয়ারওম্যান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কোক তাক-সেং এর বিধবা কোং এসএইচকে প্রোপারটিজের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক। কোং এর জন্ম ১৯২৯ সালে।

 

দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন উ ইয়াচুন। তিনি লংফর গ্রুপ হোল্ডিংস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারওম্যান। উ ইয়াচুন নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টায় ধনী হয়েছেন। এক সময় তিনি বিশ্বের সেরা নিজ প্রচেষ্টায় ধনী নারীর অবস্থানও পেয়েছেন। উ ইয়াচুনের জন্ম ১৯৬৪ সালে ছোংছিং এর এক সাধারণ পরিবারে। তিনি সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯০ এর দশকে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তিনি বিশাল পরিমাণে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং অন্য সেলফমেইড নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছেন।

তৃতীয় স্থানে আছেন চেন লিহুয়া। তিনি ফুওয়াহ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারওম্যান । এই প্রতিষ্ঠান বেইজিংয়ের বৃহত্তম বাণিজ্যিক প্রোপার্টি ডেভেলপারস। তিনি বিশ্বের অন্যতম নারী বিলিওনারের অন্যতম যারা নিজের চেষ্টায় ধনী হয়েছেন।  চেনের জন্ম ১৯৪১ সালে বেইজিংয়ে। তিনি প্রাচীন অভিজাত পরিবারে জন্ম নিয়েছেন তবে সেসময় তার পরিবার ছিল দরিদ্র। সেখান থেকে নিজের উদ্যম ও পরিশ্রমে তিনি সম্পদ অর্জন করেন।

সেরা ধনী নারীদের এই তালিকায় আরও আছেন লাক্সশেয়ার প্রিসিশন কোম্পানির চেয়ারওম্যান ওয়াং লাইছুন, কান্ট্রি গার্ডেনের চেয়ারওম্যান ইয়াং হুইইয়ান, শানতোং ওয়েইছিয়াও পাইওনিয়ার গ্রুপ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চাং শিপিং এর পরিবারের সদস্য চেং শুলিয়াং, চাং হোংসিয়া এবং চাং ইয়ানহোং, সুসুন গ্রুপের চেয়ারওম্যান ইয়ান সিন, হানশোহ ফার্মাসিউটিকাল গ্রুপের চেয়ারওম্যান চোং হুইচুয়ান, লেনস টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারওম্যান চোও ছুনফেই এবং আইমেইক কোম্পানির প্রেসিডেন্ট চিয়ান চুন।

এই ধনী নারীরা তাদের ব্যবসা ছাড়াও সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজে অবদান রাখছেন।

 

গ্রেটার বে এরিয়ায় সংস্কৃতির বন্ধন গড়ে তুলছেন যে নারী

 

চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাওয়ের একজন নারী  অ্যালি লি। তিনি কুয়াংতোং, হংকং ম্যাকাও   গ্রেটার বে এরিয়ায় সাংস্কৃতিক বন্ধন সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। চলুন শোনা যাক তার কথা।

বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও এর নারী অ্যালি লি। তিনি গ্রেটার বে ইয়ুথ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।

এই তরুণী গ্রেটার বে এরিয়ায় সাংস্কৃতিক বন্ধন গড়ে তোলার জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী চীনা অপেরা, বিশেষ করে কুনছু অপেরাকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করছেন।

 

অ্যালি লি বলেন, ‘আমি ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ অপেরা বিশেষ করে কুনছু অপেরার প্রচারে কাজ করছি। প্রাচীন শিল্পকলাকে আধুনিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। আমাদের গ্রেটার বে এরিয়া ইয়ুথ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন অনেক কাজ করছে। যেমন ক্যাম্পাসে বক্তৃতা ও অভিজ্ঞতা শেয়ারিংয়ের ক্লাসের আয়োজন করেছে ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ অপেরা নিয়ে। আমরা ম্যাকাও এর ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো কুনছু অপেরার মাধ্যমে তুলে ধরেছি।’

 

সম্প্রতি ম্যাকাও মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের ২৪তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। এই অনুষ্ঠানে অ্যালি লি এবং তার দল কুনছু অপেরা পরিবেশন করেছেন।

কুয়াংতোং, হংকং ম্যাকাও গ্রেটার বে এরিয়ার মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ় করতে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আরও বেশি ঐক্য  সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন লি।

 

তিনি মূল ভূখন্ডের সঙ্গে হংকং, ম্যাকাও এর মানুষের মধ্যে আরও বেশি একাত্মতা গড়ে তুলতে কাজ করছেন।

 

কারুশিল্পী হাও রুসিয়াংয়ের অনন্য ভুবন

চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী লোকজ শিল্প হলো বুহু। এই শিল্পের একজন ধারক নারী হাও রুসিয়াং। তিনি নিজের শিল্প দক্ষতাকে ব্যবহার করে এই শিল্পে আরও উন্নতি নিয়ে এসেছেন । চলুন শোনা যাক এই কারুশিল্পী নারীর গল্প।

হ্যপেই প্রদেশের একজন কারুশিল্পী নারী হলেন হাও রুসিয়াং। তিনি বুহু শিল্প নিয়ে কাজ করছেন। বুহু হলো এমন একটি শিল্প যা কাপড় পেস্টিং এর মাধ্যমে তৈরি হয়। একটি কাপড়ের উপর আরেক টুকরো কাপড় পেস্টিং করে তৈরি করা হয় চিত্র। এতে পুরো শিল্পকর্মটি অয়েল পেইন্টিংয়ের  মতো দেখায়।

হাও রুসিয়াংয়ের জন্ম হ্যপেই প্রদেশের ছ্যংত্য গ্রামে । এটি ফ্যংনিং মাঞ্চু স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টিতে অবস্থিত। হাও রুসিয়াং শিল্পকলার ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে বুহু শিল্পকলা নিয়ে কাজ শুরু করেন। বুহু শিল্পকলার একজন বড় শিল্পী হলেন থ্যং থ্যং নামে একজন প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি এই শিল্পকর্মে অনেক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। কাপড় পেস্টিং, পেইন্টিং, এমব্রয়ডারি অনেক কিছু এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন তিনি। ৩০০ বছর ধরে থ্যং থ্যং এর পরিবার এই শিল্পকে ধারণ করেছে। শিল্পী থ্যং থ্যং এর স্টুডিওতে সহকারী হিসেবে কাজ করতে করতে তার নাতির সঙ্গে প্রেম হয় হাও রুসিয়াংয়ের। তাদের বিয়ের পর হাও রুসিয়াং এই পরিবারের এই বিশেষ শিল্পের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হন।

তিনি এখন এই ট্র্যাডিশনাল শিল্পের একজন ইনহেরিটর।

হাও বলেন, ‘একবার আমি একটি বাঘের ছবি তৈরি করি। সেটি বেশ পুরু হয়েছিল এবং ত্রিমাত্রিক একটা ইমেজ সৃষ্টি হয়েছিল। আমার দাদা শ্বশুর সেটা দেখে অনেক প্রশংসা করেন। তিনি এটা অন্যদেরও দেখান। আমার কাছে এটা অনেক বড় অনুপ্রেরণা বলে মনে হয়।’

হাও শুধু নিজেই এই শিল্পের চর্চা করছেন তা নয়। তিনি স্থানীয় গ্রামবাসী নারীদেরও এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পে  প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বুহু কারুশিল্পে তৈরি অনেক সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে । এগুলো শুধু চিত্রকর্মে নয়, আরও অনেক সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। হাতব্যাগ, জুতা ইত্যাদিতেও ব্যবহার হচ্ছে এই কারুশিল্প।

বুহু কারুশিল্পের মাধ্যমে শুধু ঐতিহ্যকে সংরক্ষণই নয়, পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনও অর্জন করেছেন হাও রুসিয়াং।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে।

নতুন বছরের শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। ২০২৪ সাল সকলের জীবনে বয়ে আনুক সুখ ও সমৃদ্ধি।

 আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  শান্তা মারিয়া,  আফরিন মিম, শুভ আনোয়ার, রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল