চীন বড় একটি কৃষির দেশ আর প্রতি বছর প্রথম সরকারি দলিল সবসময় গ্রাম ও কৃষকদের সম্পর্কিত। তার মানে চীন এ কাজকে প্রথম স্থানে রাখে।
১৯-২০ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় কৃষি, গ্রাম ও কৃষক বিষয়ক সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সম্মেলন। আগামি বছর গণ প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর এবং চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনা বস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। তাহলে চীনের কৃষি, গ্রাম ও কৃষক সম্পর্কিত নানা কাজ কীভাবে করা যায়? আজকের অনুষ্ঠানে তা নিয়ে কথা বলবো আমরা।
সম্মেলনে ২০২৪ সালে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ান কেজি হবে বলে উল্লেখ করা হয়। খাদ্যের নিরাপত্তা ১৪০ কোটি চীনা মানুষের জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২৩ সালে চীনের খাদ্য উৎপাদন পরিমাণ ৬৯.৫ বিলিয়ান কেজি, যা টানা ৯ বছর ৬৫ বিলিয়ান কেজির উপরে রয়েছে।
এ বছরে পূর্ব ও উত্তর পূর্ব চীনের বন্যা ও দেশের উত্তর-পশ্চিমে খরার প্রভাবে এমন বাম্পার ফসল উৎপাদন সত্যি সহজ কাজ নয়। চীনের বড় জনসংখ্যা আছে এবং খাদ্যের চাহিদাও বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী কৃষি পণ্যের অনিশ্চয়তার মুখে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা, পরিমাণ বাড়াতে চাইলে প্রথমে চাষের জমির মান ও পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে।
সম্মেলনে জোর দিয়ে বলা হয়, চাষের জমি সংরক্ষণ ও তৈরি জোরদার করা যাবে। তার পরিমাণ, গুণগতমান ও পরিবেশ তিন দিক থেকে চাষের জমিকে রক্ষা করতে হবে। ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে চীন মোট ৪০ লাখের বেশি হেক্টর উচ্চ মানের কৃষি জমি তৈরির কাজ শেষ করে। উচ্চ মানের কৃষি জমি দুর্যোগ প্রতিরোধের দক্ষতা আরও শক্তিশালি এবং তা খাদ্যের বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা- কৃষি, গ্রাম ও কৃষক সম্পর্কিত নানা কাজের মূল কর্তব্য। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের কৃষকদের মাথাপিছূ নিষ্পত্তিযোগ্য আয় ১৫ হাজার ৭০৫ ইউয়ান, যা শহরের বাসিন্দাদের তুলনায় বৃদ্ধির গতি ২.৬ শতাংশ বেশি। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি হলে তাদের ভোগের দক্ষতাও বেশি হবে। এটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর জন্য উপকারী।
আর তৃতীয় বিষয় হল ব্যাপক গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়ন। সম্মেলনে এ ব্যাপার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়। যেমন গ্রামের পরিবেশ উন্নয়ন, শহর ও গ্রামের উন্নয়ন সমন্বয়, গ্রামে সরকারি পরিষেবার মান উন্নযন করা ইত্যাদি।
শক্তিশালি একটি কৃষি দেশকে সমর্থন দিতে পারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা রক্ষাসহ নানা কাজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান ৬২.৪ শতাংশ এবং চীনের সব ফসলে ভাল বীজের অনুপাত ৯৬ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি।
মূল কথা হল, খাদ্যশস্যের উৎপাদন পরিমাণ নিশ্চিত করা, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা এবং ব্যাপক গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়ন করা, এটি হল আগামি বছরে চীনের কৃষি, গ্রাম ও কৃষক বিষয়ক কাজের লক্ষ্য।
বড় কৃষি দেশ থেকে শক্তিশালি কৃষি দেশ হতে যাচ্ছে চীন। আর একবার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করলে, চীন দ্রুত তা অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
(শিশির/হাশিম/রুবি)