যেভাবে পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করছেন চীনের নাগরিকরা | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৫০
2023-12-27 16:49:09

         

                                     এবারের পর্বে রয়েছে

১. নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির যোগান দিচ্ছেন চীনের কৃষকরা

২. রসালো ফল উৎপাদন করে মুনাফা হচ্ছে কয়েকগুণ

৩. সমৃদ্ধ হচ্ছে চীন-ব্রাজিল কৃষি বাণিজ্য

 

বিশ্ববাসীর জন্য পুষ্টির যোগান দিতে বেশ বড় পরিসরে উদ্যোগ নিয়েছে চীন কৃষি বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। আর দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

 

                   চীনের সমৃদ্ধ কৃষি যোগান দিচ্ছে পর্যাপ্ত পুষ্টি

এইচআরএস অভি:

নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির যোগান দিতে  বড় পরিসরে সবজি আবাদের উপর নজর দিয়েছে চীনের স্থানীয় সরকার। ভালো মানের আবাদ নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ। চীনে কীভাবে সবজি চাষ করা হচ্ছে ? আর কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কয়েকগুণ চাষাবাদ নিশ্চিত করা হচ্ছে ? চলুন জেনে আসি।

মূলত বেশ বড় পরিসরেই শাক-সবজির আবাদ করা হয় চীনের বিভিন্ন প্রদেশে। এবার আমরা আলোচনা করবো শানতুং প্রদেশেদের কয়েকটি গ্রামের সবজি চাষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে।

ভালোলাগার ব্যাপার হলো এখানে বিশাল আকৃতির ভবনে সবজি চাষ করা হয়। দেখতে তাবুর মতো এসব ঘরগুলো আসলে গ্রীন হাউজের একেকটি প্রজেক্ট, যেগুলোর ভেতরে কয়েক পদের সবজি একসঙ্গে চাষাবাদ করা যায়।

উদ্যোক্তারা জানান, এসব অঞ্চল থেকেই থেকেই সারা দেশে সরবরাহ করা হয় প্রয়োজনীয় শাকসবজি।  চাহিদা বেশি থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি উৎপাদন করতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন এখানকার কৃষি উদ্যোক্তারা।

বিভিন্ন জাতের শাকসবজি সরবরাহে ভারসাম্য আনতে এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টিম। যারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন একইসঙ্গে নিশ্চিত করছেন সবোর্চ্চ উৎপাদন। সবার নিরলস পরিশ্রমেই দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে এখানকার কৃষি কোম্পানিগুলো।

শাক সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি, এ প্রদেশের কয়েকটি অঞ্চল একইসঙ্গে কাজ করছে ডিসট্রিবিউশন সেন্টার হিসেবেও। প্রতি সেন্টার থেকে দিনে  সাপ্লাই দেয়া হয় পারে প্রায় ১১ হাজার টন শাকসবজি।

চীনের অন্যান্য অঞ্চলেও সবজি উৎপাদন করা হয়। কোন এক অঞ্চলে উৎপাদন কম হলে অন্যান্য অঞ্চল থেকে সরবরাহ বাড়ানো হয়। যাতে হঠাৎ করে সবজির দাম বেড়ে না যায় সেজন্য সতর্ক থাকে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের কৃষিখাত আর এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। সমৃদ্ধ হচ্ছেন কৃষকরা আর ভালো মানের শাক-সবজি পেয়ে সব মিলিয়ে লাভবান হচ্ছে পুরো দেশের নাগরিকরা।

 

কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

রসালো ফল উৎপাদন করে ভাগ্য গড়ছেন কৃষকরা

এইচআরএস অভি:

বাংলাদেশ ও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে কেবল বাজার থেকেই ফল কিনে এরপর খাওয়ার সুযোগ হয়। তবে চীনসহ কয়েকটি দেশে সরাসরি বাগানে গিয়ে ফল সংগ্রহের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমত ফল সংগ্রহ করতে পারেন, তেমনি অন্যদিকে এ সুযোগে বিকশিত হয় ইকো ট্যুরিজম। বিশ্ববাসীর জন্য বিভিন্ন রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য উৎপাদন করেও সুনাম কুড়াচ্ছে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ। কমলা, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই ফলটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি স্বাদেও অতুলনীয়।

 

চীনের সিছুয়ান প্রদেশের পিংছাং কাউনন্টির এই ফলের বাগান এখন দেশজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও মানুষজন এখানে ছুটে আসেন এখানকার ফলের স্বাদ নিতে। এমনকি প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশ থেকেও অনেকে আসেন তাদের অবসর সময় কাটাতে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ ধরনের ফলের বাগানে দারুন সময় কাটে তাদের। আর এভাবেই হচ্ছে সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের বিভিন্ন প্রদেশের জনপ্রিয় ফলের বাগানগুলো।

সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রদেশের কৃষিঅর্থনীতি নিজে থেকেই পর্যবেক্ষণ করেন। কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়, চীনা প্রেসিডেন্ট জমিতে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন হন; নানা রকম চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘ সময় কৃষি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

সম্প্রতি চীনে আয়োজিত ‘বার্ষিক কেন্দ্রীয় গ্রামীণ কর্ম-সম্মেলনে’ কৃষিক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করতে কার্যকর নানা দিকনির্দেশনা দেন সি চিন পিং। এই সম্মেলনে পরবর্তী বছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মানসম্মত কৃষিপণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রদেশকে সবুজে ঢেকে দিতে দারুণ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সি। লি বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা বিনিময় কৃষকদের জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

সমৃদ্ধ কৃষি নিয়ে সরকারের উন্নয়নভাবনা সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে মত দিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

কৃষকদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে কেবল কিছু দারুণ অভিজ্ঞতাই সঞ্চয় করেননি প্রেসিডেন্ট সি, একইসঙ্গে চীনের অত্যাধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সম্ভাবনার নতুন বার্তাও দিয়েছেন।

 

কণ্ঠ: মাহমুদ হাশিম

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

সমৃদ্ধ হচ্ছে চীন-ব্রাজিল কৃষি বাণিজ্য

শুভ আনোয়ার:

পর্যায়ক্রমে বিকশিত হচ্ছে চীন ও ব্রাজিলের মধ্যে কৃষি বাণিজ্য সম্পর্ক। মূলত মানসম্মত সরবরাহ ব্যবস্থা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে দু’দেশের প্রবৃদ্ধি। এমন এক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে ব্রাজিল হয়ে উঠেছে তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশ। কীভাবে এটি সম্ভব হলো? চলুনে জেনে আসি।  

মূলত চীন ও ব্রাজিলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কৃষি। টানা ১৪ বছর ধরে চীন ব্রাজিলের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। এর মধ্যে শুধুমাত্র ভুট্টাকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ব্রাজিলকে তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশে পরিণত করেছে।

প্রথম লাতিন আমেরিকার দেশ হিসেবে ব্রাজিলের সঙ্গে চীনের ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বাণিজ্য হয়েছে। ২০২২ সালে উভয় দেশের দ্বিমুখী বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ১৭১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে।

২০২২ সালে ভুট্টা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তির পর চীনের বৃহত্তম খাদ্যশস্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিওএফসিও ব্রাজিল থেকে ৬৮ হাজার টন ভুট্টা আমদানি করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের তোংকুয়ান শহরের একটি বন্দরে আমদানি করা এসব ভুট্টা এসে পৌছায়। ভুট্টা চুক্তির পর এটি ছিল ব্রাজিলিয়ান ভুট্টার প্রথম চালান।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিওএফসিও কর্ণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা সবসময় ব্রাজিল থেকে ভুট্টা আমদানির বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একটি মূল্যবান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। ব্রাজিল থেকে ভুট্টা আমদানি শুধুমাত্র চীনের চাহিদা মেটাবে না এমন নয়, বরং চীনা খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর বৃদ্ধিও করবে। এ ছাড়া তাদের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

ব্রাজিলের টেকসই উদ্যোগ এবং চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ দ্বিপাক্ষিক কৃষি বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে এবং চীনা প্রতিষ্ঠান ও ব্রাজিলের কৃষকদের মধ্যে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

কয়েকটি পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী ব্রাজিলের খাদ্য উৎপাদনের ৭০ শতাংশই আসে পারিবারিক কৃষি থেকে। ফলে এই সেক্টরের বিকাশ দেশটির অর্থনীতি, পরিবেশ এবং এর সঙ্গে জড়িত সকলের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

কণ্ঠ: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: আফরিন মিম

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী