‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৫০
2023-12-27 16:34:47

           



                         

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা। ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।

১. সিনচিয়াংয়ের কিরগিজ সংখ্যালঘুরা সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তরুণদের প্রতিভাবান করে গড়ে তুলছে

 

উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী কিরগিজ জাতিগত সংখ্যালঘুরা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিভিন্নভাবে কাজ করছে। ঐতিহ্য সংরক্ষণে তরুণ প্রজন্মকে তৈরি করার ব্যাপারটিকে তারা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। তরুণদের দেয়া হচ্ছে বৃত্তিমূলক দক্ষতা প্রশিক্ষণ।

সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংখ্যালঘু কিরগিজ জাতির মানুষেরা তাদের সংস্কৃতি রক্ষা জন্য মহাকাব্য আবৃত্তি থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী সূচিকর্ম আয়ত্ত করা পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে  তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা গড়ে তুলছে এবং লালন করছে; তাদের উৎসাহিত করছে বিভিন্নভাবে।

 

ইউমিতালি ইয়েতিকু একজন প্রতিভাবান গায়ক। তাঁকে মানাসের মহাকাব্য পরিবেশন করতে দেখা যায়। 

 

মানাসের মহাকাব্য কিরগিজভাষী জনগণের একটি গৌরবময় ঐতিহ্য, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্য দিয়ে চলে আসছে। মানাস মহাকাব্য আসলে গীতিকাব্যের মতো, গান ও নাচের মধ্য দিয়ে যে কাব্যকে ফুটিয়ে তোলা হয় মানুষের কাছে।

 

     

 

মায়ের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ১৫ বছর বয়সী মানাসচি, মানাসের মহাকাব্য আবৃত্তি করে। সে তিন বছর বয়সে এটি গাইতে শুরু করে এবং ঐতিহ্যটি গ্রহণ করে। স্কুলে সে প্রায়ই তার সহপাঠীদের কবিতার ক্লাসিক অংশ শেখায়।  

 

 

"আমি সত্যিই গর্বিত যে আমি আমাদের নায়কের গল্প মানুষের সামনে গাইতে পারি। আমি আশা করি, মানাসের সব অধ্যায় নিজে মুখস্ত করতে পারব, যাতে আরও বেশি মানুষ এই ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে বুঝতে এবং প্রচার করতে পারে"  

 

মানাস বিশেষজ্ঞরা বছরের পর বছর ধরে এটি সংগ্রহ ও সংগঠিত করার পর মোট ২ লাখ ৩০ হাজার লাইনের আটটি খণ্ড প্রকাশ করেন। 


সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য, সরকার মানাস উত্তরাধিকারীদের শুধুমাত্র আর্থিকভাবে সহায়তাই করে না, প্রতিভা লালনের দিকেও নজর দেয়।

 

গুলিজামালি মাইমাইতি তুরগান, উছিয়া কাউন্টির সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা


"উছিয়া কাউন্টিতে, বর্তমান মানাসের উত্তরাধিকারীদের অধিকাংশই কৃষক ও পশুপালক। তারা তাদের নিজস্ব খামারে কাজ করার পাশাপাশি শেখে ও গায়। আমরা উত্তরাধিকারীদের ধরে রাখার চেষ্টা করছি এবং আরও প্রতিভাবান তরুণদের স্বাগত জানাই, যাদের মানাসের প্রতি অনুরাগ আছে।’

 

 

কিরগিজদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের কাজ এখানেই শেষ নয়। ব্যবসা ও শিল্প একাডেমিগুলোর সঙ্গে একটি এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সহযোগিতা করে একটি স্থানীয় ভোকেশনাল কলেজ। তারা বিখ্যাত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানায় তাদের নির্দেশনা ও কারুশিল্প শেখানোর জন্য। কিরগিজ ঐতিহ্যবাহী সূচিকর্ম সংরক্ষণ ও কুমুজ তারযুক্ত যন্ত্র তৈরিতে অবদান রাখার জন্য এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। 

 

 

কলেজটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সঙ্গে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে একত্রিত করে। শিক্ষার্থীরা শেখে কিভাবে জাতিগত কিরগিজ বাদ্যযন্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী সূচিশিল্প তৈরি করতে হয়। তাদের এই ক্ষেত্রগুলোতে পেশাজীবী বা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। এই উদ্যোগটি জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সাহায্য করে।

 

বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই চারু ও কারুশিল্পে বিশেষজ্ঞ। তারা স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগত আগ্রহে তাদের অবসর সময়ে এগুলো শিখতে ছুটে আসে।

 

 

প্রশিক্ষকরা জানান, কার্পেট ও বিছানার মতো বড় আইটেমগুলোতে ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প ছাড়াও, স্কার্ফ, টুপি এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় লাইফস্টাইলের বিষয়গুলো নিয়ে উদ্ভাবনী কাজ করতে বেশি উৎসাহী তরুণরা।

 

শিক্ষার্থীরা এই বয়সেই এমন দক্ষতা অর্জন করে তাদের ভবিষ্যত কর্মসংস্থান কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে।  তাদের এই প্রতিভা বিকাশ এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের একীকরণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আরও তরুণদের উৎসাহিত করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

সম্পাদক : শিহাবুর রহমান

 

২. চীনের মূল ভূখণ্ডে হংকং ও ম্যাকাওয়ের তরুণদের কর্মসংস্থান

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের মূল ভূখণ্ড এবং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাওয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদান ও সহযোগিতা কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চল থেকে অসংখ্য তরুণ চাকরি কিংবা ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে আসছেন দেশটির মূল ভূখণ্ডে।

চীনে ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হয় কুয়াংতোং-হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে এরিয়া। এরপর থেকে দেশটির তিনটি অঞ্চলের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতা কার্যক্রম।

 

গ্রেটার বে এরিয়া প্রতিষ্ঠার পর কুয়াংতোং-ম্যাকাওয়ের সহযোগিতা অঞ্চল হেংছিন, চুহাই শহরের একটি অঞ্চল ব্যবসা বা চাকরি খোঁজার জন্য ম্যাকাও থেকে আসা তরুণদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। এর মধ্যে ম্যাকাও তরুণদের জন্য পাঁচটি উদ্ভাবন, একটি উদ্যোক্তা ঘাঁটি এবং ৭০০টিরও বেশি উদ্যোক্তা প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

 

ম্যাকাও-হংকংয়ের তরুণ উদ্যোক্তাদের চীনের মূল ভূখণ্ডে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে সাহায্য করার লক্ষ্যে তরুণ প্রস্তুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন ম্যাকাওয়ের ডেভিড ছেয়াং। এ সেন্টারটি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু করেন তিনি। এরইমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০টিরও বেশি কোম্পানিকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করেছে এবং আরও অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেবে বলেও আশাবাদী তিনি।

 

তিনি মনে করেন একজন তরুণ হিসেবে বিশেষ করে একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে যখন এসব তরুণরা যখন ব্যবসা শুরু করবে বা তাদের ক্যারিয়ার আরও বিকশিত করার চেষ্টা করবে তখন তারা শুধুমাত্র ম্যাকাও অঞ্চল বা হংকং অঞ্চলের নয় দেশ জুড়ে নিজেদের অবস্থান বিবেচনা করতে সক্ষম হবেন।

 

চীনের মূল ভূখণ্ডে আরও ভালোভাবে উদ্যোক্তাদের প্রবেশে সাহায্য করার জন্য ইনকিউবেশন সেন্টার বিভিন্ন পরিষেবা দিচ্ছে। উদীয়মান এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য, এই ধরনের পরিষেবাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের প্রধান ভূখণ্ড এবং ম্যাকাওয়ের আইন, বিধিবিধান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে বলেও জানান ডেভিড ছেয়াং।

 

 

‘চীনের মূল ভূখণ্ডের বাজারে প্রবেশের সময় স্টার্ট-আপ কোম্পানিগুলো জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে এসব আইন কিংবা বিধিবিধান। আমাদের ইনকিউবেশন সেন্টার এই ধরনের সমস্যাগুলো সমাধান করতে সহায়তা করার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন পরিষেবাও প্রদান করছে। যাতে করে চীনের সম্পদ, বাজার এবং শিল্প সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেয়ে থাকে।‘

 

গ্রেটার বে এরিয়া হংকং-ম্যাকাও থেকে আরও তরুণরা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করতে উৎসাহী হবে এমনটি প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

 

প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। পুরানো বছরের সব গ্লানি মুছে যাক, নতুন বছর হোক শুধুই সম্ভাবনার। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী